৬৫ বলে ৩৯। পারলেন না ধোনি। ছবি: পিটিআই।
ফিরোজ শাহ কোটলায় ভারতকে ছ’রানে ম্যাচটা হারতে দেখে, একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। না, না, সিরিজের ভাগ্য নিয়ে নয়। কেন উইলিয়ামসনের টিম যতই কোটলায় নাটকীয় জয় তুলে নিয়ে সিরিজ ১-১ করে যাক, সিরিজ শেষ পর্যন্ত ভারতই পাবে। বরং আমি চিন্তিত অন্য একটা কারণে।
ফিনিশার মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বিকল্প ভারত পাবে তো?
হালফিলে ভারতীয় টিমকে কথাটা খুব বলতে শুনছি। ধোনি নিজেও দু’একটা সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছে যে, এ বার ও চায় ফিনিশার পজিশনে নিজের বিকল্প তুলে আনতে। দু’একজনকে নাকি দেখেওছে। তবে তাদের নাম বলতে চায়নি।
জানি না, তাদের একজন হার্দিক পাণ্ড্য কি না। বলছি না, হার্দিক ভবিষ্যতে ভাল ফিনিশার হতে পারবে না। হয়তো দেখা গেল, ক’বছরের মধ্যে আমিই ভুল প্রমাণিত হলাম। কিন্তু ফিনিশারের মতো স্পেশ্যালিস্ট রোলের জন্য কয়েকটা আলাদা জিনিস লাগে। তা হল, ধৈর্য। ঠান্ডা মাথা। চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। যা নিজের সেরা সময়ে ধোনিকে অনায়াসে করতে দেখা যেত।
বলতে খারাপ লাগছে। কিন্তু বৃহস্পতিবারের হার্দিকের মধ্যে সে সবের কিছু দেখিনি।
অথচ অত ভাল শুরু করেছিল। যদিও ২৪৩ তাড়া করতে গিয়ে দু’শোর নীচে আট উইকেট বেরিয়ে গিয়েছিল ভারতের। সেখান থেকে হার্দিক আর উমেশ হিসেবটাকে আট বলে এগারোয় নামিয়ে আনল। ট্রেন্ট বোল্ট চান্স নিয়েছিল একটা শর্ট দিয়ে। হার্দিক মাথা ঠান্ডা রাখতে পারলে ছেড়ে দিত ওটা। কিন্তু লোভটা সামলাতে পারল না। হার্দিক থাকলে কিন্তু আজ ভারত জিতে মাঠ ছাড়ে, হেরে নয়।
একটা ব্যাপার আসলে এখন আমাদের মেনে নিতে হবে। বছর দু’য়েক আগেও যে ফিনিশার ধোনিকে আমরা দেখতাম, তাকে বোধহয় আর পাব না। দোষ দেওয়া যায় না ধোনিকে। ওর বয়স হয়েছে। ফিনিশারের ভূমিকা থেকে সরেও আসতে চাইছে। ব্যাট করতে যাচ্ছে একটু উপরে। এ দিন নামল পাঁচে। চাইছে, কেউ উঠে আসুক। ওর জায়গাটা নিক। কিন্তু প্রশ্ন হল, কে? ফিনিশার ধোনির দায়িত্বটা নেবে কে? ধর্মশালায় প্রয়োজন পড়েনি। কিন্তু এ দিন দেখে মনে হল, আট নম্বরে নামা হার্দিককে ওরা ফিনিশারের জায়গাটায় ভাবতে চাইছে। দেখে নিতে চাইছে। কিন্তু ধোনির ঠান্ডা মাথাটা এখনও নেই হার্দিকের। পনেরো রান বাকি থাকলেও ওর উপর নিশ্চিন্তে ভরসা করা যায় না। আগেও এটা দেখেছি। আজও দেখলাম। ফিনিশার ধোনি কিন্তু এ জিনিস করত না। অনায়াসে ম্যাচ শেষ করে বেরোত।
তবে শুধু হার্দিক নয়, বাকি ভারতীয় ব্যাটিংয়ের কথাও বলতে হবে। কেন জানি না মনে হচ্ছে, রান তাড়া করতে হলে আমরা বড় বেশি কোহালি নির্ভর হয়ে পড়ছি। কিছুটা রোহিতও। রোহিত-কোহালি খেললে, ভারত ম্যাচ বার করে দিচ্ছে। ওরা না পারলে, পারছে না। বিশেষ করে কোহালি। ও আউট হয়ে গেলেই দেখছি একটা চোরা আতঙ্ক ছড়িয়ে যাচ্ছে টিমে। এখনকার ওয়ান ডে-তে ২৪২ কী এমন স্কোর? যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা সাড়ে তিনশোর উপর তুলে জিতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া বোলিংয়ের বিরুদ্ধে! আমি তো বলব, ভারতের বোলিংয়ের রিজার্ভ বেঞ্চ খুব ভাল। ধর্মশালায় নিউজিল্যান্ডকে ১৮০-র আশেপাশে অলআউট করে দিয়েছিল। এখানেও ডেথ ওভারে ২৪ রানে পাঁচ উইকেট তুলে আড়াইশোয় তুলতে দেয়নি বিপক্ষকে। একটা সময় কিন্তু নিউজিল্যান্ড চার উইকেটে দু’শো পার করে দিয়েছিল। উইলিয়ামসনের সেঞ্চুরিতে কিন্তু মনে হচ্ছিল, ওরা তিনশো তুলবে। কিন্তু জসপ্রীত বুমরাহ-অমিত মিশ্ররা সেটাকে বাস্তব হতে দেয়নি। আড়াইশোর কমে থামিয়ে দিয়েছে।
ভাবিনি, তার পরেও হারতে হবে।
আসলে আমাদের বোলিংকে যতটা গুছোনো দেখাচ্ছে, ব্যাটিংকে ততটা নয়। বিশেষ করে লোয়ার মিডল অর্ডারকে। কেদার যাদব ভাল খেলছিল। ও আর ধোনি মিলে ধরে নিয়েছিল ম্যাচটা। কিন্তু অহেতুক একটা শট খেলতে গিয়ে আউট হল কেদার। ধোনি পেসটা বুঝতে পারল না, সাউদিও দুর্দান্ত একটা রিটার্ন ক্যাচ নিল। মানছি, কেদার-মণীশদের সময় দিতে হবে। ঘরোয়া ক্রিকেট আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এক জিনিস নয়। কিন্তু সুযোগও তো রোজ আসবে না। বৃহস্পতিবারের কোটলার মতো দিন এক-আধবারই আসবে। তখন সুযোগ না নিতে পারলে আর লাভ কী?
নিউজিল্যান্ড
গাপ্টিল বো উমেশ ০
ল্যাথাম এলবিডব্লিউ কেদার ৪৬
উইলিয়ামসন ক রাহানে বো মিশ্র ১১৮
টেলর ক রোহিত বো মিশ্র ২১
অ্যান্ডারসন এলবিডব্লিউ মিশ্র ২১
রঙ্কি ক ধোনি বো অক্ষর ৬
স্যান্টনার ন.আ. ৯
ডেভসিচ ক অক্ষর বো বুমরাহ ৭
সাউদি বো বুমরাহ ০
হেনরি বো বুমরাহ ৬
বোল্ট ন.আ. ৫
অতিরিক্ত ৩
মোট (৫০ ওভারে) ২৪২-৯।
পতন: ০, ১২০, ১৫৮, ২০৪, ২১৩, ২১৬, ২২৪, ২২৫, ২৩৭।
বোলিং: উমেশ ৯-০-৪২-১, হার্দিক ৯-০-৪৫-০, বুমরাহ ১০-০-৩৫-৩,
অক্ষর ১০-০-৪৯-১, মিশ্র ১০-০-৬০-৩, কেদার ২-০-১১-১।
ভারত
রোহিত ক রঙ্কি বো বোল্ট ১৫
রাহানে ক অ্যান্ডারসন বো সাউদি ২৮
বিরাট ক রঙ্কি বো স্যান্টনার ৯
মণীশ রান আউট ১৯
ধোনি ক ও বো সাউদি ৩৯
কেদার ক রঙ্কি বো হেনরি ৪১
অক্ষর ক স্যান্টনার বো গাপ্টিল ১৭
হার্দিক ক স্যান্টনার বো বোল্ট ৩৬
মিশ্র ক পরিবর্ত (ব্রেসওয়েল) বো গাপ্টিল ১
উমেশ ন.আ. ১৮
বুমরাহ বো সাউদি ০
অতিরিক্ত ১৩
মোট (৪৯.৩ ওভারে) ২৩৬ অল আউট।
পতন: ২১, ৪০, ৭২, ৭৩, ১৩৯, ১৭২, ১৮০, ১৮৩, ২৩২।
বোলিং: হেনরি ১০-০-৫১-১, বোল্ট ১০-২-২৫-২, সাউদি ৯.৩-০-৫২-৩,
ডেভসিচ ৯-০-৪৮-০, স্যান্টনার ১০-০-৪৯-১, গাপ্টিল ১-০-৬-২।