ঘাস-উদ্বেগ নেই আটলেটিকোর • ছক বদলাচ্ছে নর্থইস্ট

‘সুপারম্যান’ গার্সিয়াকে মাটিতে নামানোই চ্যালেঞ্জ কাপদেভিয়ার

গুয়াহাটিতে পা দিয়ে দেশোয়ালী প্রতিপক্ষকে দেখেই কি বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ঝরতে শুরু করল লুই গার্সিয়ার! কলকাতার গার্সিয়ার সেই দেশোয়ালী প্রতিপক্ষটি কে? ভিসেন্তে দেল বস্কির দলের বিশ্বকাপজয়ী সদস্য হুয়ান কাপদেভিয়া। যিনি বৃহস্পতিবার নর্থইস্ট ইউনাইটেড রক্ষণে গার্সিয়ার সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দাঁড়িয়ে পড়ছেন।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৩৯
Share:

বুধবার বারবেলা। গুয়াহাটির উড়ান ধরতে আটলেটিকোর দুই মহাশক্তি গার্সিয়া-ফিকরু। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

গুয়াহাটিতে পা দিয়ে দেশোয়ালী প্রতিপক্ষকে দেখেই কি বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ঝরতে শুরু করল লুই গার্সিয়ার!

Advertisement

কলকাতার গার্সিয়ার সেই দেশোয়ালী প্রতিপক্ষটি কে? ভিসেন্তে দেল বস্কির দলের বিশ্বকাপজয়ী সদস্য হুয়ান কাপদেভিয়া। যিনি বৃহস্পতিবার নর্থইস্ট ইউনাইটেড রক্ষণে গার্সিয়ার সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দাঁড়িয়ে পড়ছেন।

ফিকরু বনাম মিগুয়েল গার্সিয়া, আটলেটিকো মিডফিল্ড বনাম নর্থইস্টের রক্ষণ, বোরহা ফার্নান্দেজ বনাম দুর্গা বোরো, কোকে-জেমস কিন বনাম বিশ্বজিত্‌-অর্ণব। এ রকম টুকরো টুকরো লড়াইকে ছাপিয়ে সেরা টক্করটা অবশ্যই দুই স্প্যানিশের আটলেটিকো দে কলকাতার লুই গার্সিয়া বনাম নর্থইস্টের হুয়ান কাপদেভিয়ার!

Advertisement

বুধবার দুপুর আড়াইটা। বিমানবন্দর থেকে নেমে সবে টিম হোটেলে পা দিয়েছেন আটলেটিকো দে কলকাতার ফিকরু, অর্ণব, বলজিত্‌রা। চেক ইনের পর লবিতে মিনিট পাঁচেকের অপেক্ষা। তার পর গোটা দল নিয়ে কলকাতার কোচ হাবাস হাঁটতে শুরু করে দিলেন কনফারেন্স রুমের দিকে।

কানে ওয়াকম্যান গুঁজে তিনি, লুই গার্সিয়া হাঁটছিলেন একটু জোরেই। কলকাতার এক সাংবাদিকের মোবাইলে ঠিক তখনই এল ফোনটা। রিংটোন অরিজিত্‌ সিংহের গাওয়া আটলেটিকো দে কলকাতার থিম সং। মোবাইলে সেই ‘ফাটাফাটি ফুটবল ও হো, লেটস ডু সাম হট্টগোল’ শুনতে শুনতে বেশ তালে তালেই হাঁটছিলেন আটলেটিকো দে কলকাতার মার্কি ফুটবলার। কিন্তু করিডরে বড় একটা কাটআউটের সামনে এসে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন। ছবিটা ভিসেন্তে দেল বস্কির দলের হয়ে চার বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপজয়ী স্প্যানিশ ডিফেন্ডার হুয়ান কাপদেভিয়ার। আইএসএলে নর্থইস্টের এই মার্কি ফুটবলারের মাথার ওপর লেখা ‘আই অ্যাম দ্য ফোর্স’, বাক্যটি খুঁটিয়ে পড়লেন। ভাল করে দেখলেন ছবিটাকে। কিন্তু তখনও জানতেন না, একশো আশি ডিগ্রি কোণের রেস্তোরাঁয় বসে লুই গার্সিয়াকেই মাপছেন কাপদেভিয়া।

দলের এক সাপোর্ট-স্টাফ সেটা দেখে গার্সিয়াকে বলতেই সে দিকে তাকালেন প্রথমে। তার পর ক্রিকেট মাঠে মধ্যমা দেখিয়ে যে অঙ্গভঙ্গী করে বিরাট কোহলি, গ্রেগ চ্যাপেলরা চক্ষুশূল হয়েছেন ম্যাচ রেফারি আর ক্রিকেট জনতার, ঠিক সে ভাবেই অঙ্গভঙ্গী করে হাসতে লাগলেন চোখ টিপে। কাপদেভিয়াও কম যান না। তিনিও হাত পাকিয়ে পাল্টা অঙ্গভঙ্গী করতে লাগলেন যুভারতীতে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ দেখতে যাওয়া ফুটবল জনতার মতো। তার পর তিনিও হাসতে হাসতে হাত নেড়ে অভ্যর্থনা জানালেন স্পেনতুতো প্রতিদ্বন্দ্বীকে।

গার্সিয়ার মুখে তখন স্বগতোক্তি, “টাফ গেম উইথ দ্য টাফ প্লেয়ার।”

কাপদেভিয়া কি তা হলে আপনার সামনে বৃহস্পতিবার একটা চ্যালেঞ্জ? শুনে প্রথমে হাসলেন গার্সিয়া। তার পর বললেন, “২০০৫ থেকে টানা দু’বছর জাতীয় দলে এক সঙ্গে খেলেছি। কাপদেভিয়া কিন্তু দারুণ ফুটবলার। ওর বিরুদ্ধে প্রথম খেলব কাল। একটু উত্তেজনা হচ্ছে বই কি!”

রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে কাপদেভিয়া যখন রুমে যাচ্ছেন বিশ্রাম নিতে তখন ধরা গেল তাঁকে। কোনও কথা না বলে প্রথমে দেখিয়ে দিলেন লবিতে বসা কোচ রিকি হারবার্টকে। ইংরেজি ভাল জানেন না। লিফটের দরজা বন্ধ হওয়ার পর লুই গার্সিয়ার নাম বার চারেক বলার পর শুধু বলে গেলেন, “সুপারম্যান।”

সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

কাপদেভিয়ার সেই সুপারম্যানকে কমন ম্যান বানানোর স্ট্র্যাটেজিটা তা হলে কী? কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে গোলদাতা কোকে বলছেন, “গোল করতে হবে। গোল খাওয়া চলবে না।” কাপদেভিয়ার সঙ্গী ডিফেন্ডার মিগুয়েল গার্সিয়াও বলছেন, “আটলেটিকোর গার্সিয়া আর ফিকরুকে আটকানোই তো আমাদের কাজ। গার্সিয়ার বাড়ানো পাস থেকেই তো ফিকরু মুম্বইয় রক্ষণকে এলোমেলো করে দিচ্ছিল। এটা নিয়ে আলোচনা করেছি আমরা।”

প্রথম ম্যাচে জেতায় দু’দলেরই পয়েন্ট তিন। কিন্তু কাপদেভিয়ার সুপারম্যান প্রথম ম্যাচে যে রকম মাঝমাঠ থেকে দলের খেলা নিয়ন্ত্রণ করেছেন, তা ভাবনায় ফেলে দিয়েছে জন আব্রাহামের গোটা দলকে। কোচ রিকি হারবার্ট মঙ্গলবারের মতো বুধবারও বললেন, “লুই গার্সিয়া দুর্দান্ত ফুটবলার। ওকে চোখে রাখতে হবে।”

নর্থইস্টের অন্যতম মালিক জন আব্রাহাম এ দিন সকালেই চলে গিয়েছিলেন শিলং। দলের প্রচারকার্যে। সেখানেই তিনি বলেছেন, “প্রথম ম্যাচ জিতেছি। কলকাতর বিরুদ্ধে জান লড়িয়ে দেবে আমার তরুণ ব্রিগেড আর কাপদেভিয়া, মিগুয়েলদের মতো অভিজ্ঞরা। সঙ্গে এটাও বলতে ভোলেননি, “লুই গার্সিয়ার মতো ফুটবলার বিপক্ষে থাকলে ম্যাচটা যে সহজে বেরোবে না তা জানি। দলের প্রতিটি সদস্যের সঙ্গে একান্তে কথা হয়েছে কলকাতা ম্যাচ নিয়ে। ওরা কথা দিয়েছে, যথাসাধ্য লড়বে।”

আইবরদের প্র্যাকটিস সেশনেও এ দিন সকালে লুই গার্সিয়াকে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা সম্পূর্ণ। কারণ, জিততে গেলে কলকাতার মার্কি ফুটবলারের পাসিং বা চকিতে জায়গা নেওয়ার যাবতীয় প্রবণতা বন্ধ করতেই হবে কাপদেভিয়াদের। তাই আগের ম্যাচে ৪-৩-৩ ছকে মাঠে নামলেও আটলেটিকো দে কলকাতার বিরুদ্ধে সেনেগালের স্টপার মাসাম্বা সামবাওকে ব্যাক ফোরের সামনে ডিফেন্সিভ স্ক্রিন হিসেবে ব্যবহারের একটা অনুশীলন এ দিন হয়েছে ক্লোজড ডোর সেশনে। সঙ্গে প্রতি-আক্রমণে কোরিয়ান মিডিও ডু-ডং হিউনের গতিকে কাজে লাগিয়ে শুরুতেই কলকাতাকে একটা ঝটকা দিতে তৈরি কাপদেভিয়ার দল।

তাঁর খেলা বন্ধ করতে এত যে পরিকল্পনা সে কথা কি জানেন লুই গার্সিয়া? সাংবাদিক সম্মেলনে সব শুনে অদ্ভুত রকমের শান্ত গলায় বললেন, “আমরা নিজেদের দল নিয়েই ভাবছি।” সঙ্গে এটাও বলতে ভুললেন না, “প্রথম ম্যাচ জিতেছি মানে তো এই নয় যে আমাদের কোনও ভুলভ্রান্তি নেই। কাল সেগুলো হলে চলবে না।” ঘাসের মাঠ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও বলছেন, “টার্ফ কোনও অজুহাত হতে পারে না।”

আর কাপদেভিয়া? তাঁর অবশ্য কোচের নির্দেশে কথা বলা বারণ। তাঁর সুপারম্যানকে বৃহস্পতিবার তিনি কমনম্যান বানাবেন নাকি তাঁদের রক্ষণকে দীপক মণ্ডলদের রক্ষণের মতোই ফালাফালা করে দেবেন গার্সিয়া, তা জানতে অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন