মেঘ সরছে, পরীক্ষা বাকি শামি-ধবনদের

পূর্বাভাস অনুযায়ী, চতুর্থ দিনে এখানকার সময় সাড়ে দশটাতেই খেলা শুরু হওয়া উচিত। যদি সেই পূর্বাভাস সত্যি হয়, তা হলেও এই টেস্ট ম্যাচে হাতে থাকছে আরও দু’টো দিন। যে দু’দিন ৯৮ ওভার করে খেলা হওয়ার কথা।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

কেপ টাউন শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:০৯
Share:

হঠাৎ মাঠে ঢুকে পড়া দর্শককে পিচের উপর থেকে সরাচ্ছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। রবিবার কেপ টাউনে। ছবি: এএফপি

সারা দিনে একটি বলও না হয়ে কেপ টাউন টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা যে ভন্ডুল হয়ে গেল, তাতে নিঃসন্দেহে চিন্তিত দলের নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। কিছুটা হলেও প্রথম টেস্টে সুবিধেজনক জায়গায় রয়েছে তারা। ১৪২ রানে এগিয়ে রয়েছে তারা। হাতে এখনও আট উইকেট। সোমবার আরও ১৫০ রান মতোও যদি তুলে ফেলতে পারেন এ বি ডিভিলিয়ার্স-রা, তা হলে আরও চাপে পড়ে যাবে ভারত।

Advertisement

তৃতীয় দিনের খেলা বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে বিকেলের দিকে রোদ উঠল। টেবল মাউন্টেন তখন আবার দৃশ্যমান। মেঘ পুরোপুরি উধাও না হলেও আকাশের পরিস্থিতি অনেক ভাল। স্থানীয়দের মত এবং পূর্বাভাস অনুযায়ী, চতুর্থ দিনে এখানকার সময় সাড়ে দশটাতেই খেলা শুরু হওয়া উচিত। যদি সেই পূর্বাভাস সত্যি হয়, তা হলেও এই টেস্ট ম্যাচে হাতে থাকছে আরও দু’টো দিন। যে দু’দিন ৯৮ ওভার করে খেলা হওয়ার কথা। অর্থাৎ, বৃষ্টি ভারতের রক্ষাকর্তা হয়ে দাঁড়াতে পারে— এমন ফর্মুলায় ভরসা নেই।

যদিও ‘হার্দিক হারিকেন’-এর পরে বিরাট কোহালিদের মনোবল অনেকটাই পুনরুদ্ধার হওয়ার কথা। ৯২-৭ হয়ে যাওয়ার পরে যে মনে হয়েছিল, টেস্ট হাত থেকে বেরিয়েই গিয়েছে, ততটা এখন আর নেই। বরং ম্যাচের পরিস্থিতি বলা যেতে পারে ৬৫-৩৫। সেটা হার্দিকের দুঃসাহসিক ইনিংসের জন্যই সম্ভব হয়েছে।

Advertisement

এখন সেই পঁয়ত্রিশ শতাংশকেও যদি টিকিয়ে রাখতে হয়, ভারতীয় পেসারদের এগিয়ে আসতে হবে। প্রথম ইনিংসে ভুবনেশ্বর কুমার তাঁর প্রথম তিন ওভারে তিন উইকেট তুলে নেওয়ার পরেও দক্ষিণ আফ্রিকা-কে ২৮৬ পর্যন্ত বাড়তে দিয়েছে। সেটা যে বিলাসিতাই হয়েছে, ভিতরে-ভিতরে নিশ্চয়ই তা মানবে টিম ম্যানেজমেন্ট।

বিশেষ করে মাইক্রোস্কোপের তলায় পড়তে পারেন মহম্মদ শামি। এখন যথেষ্ট অভিজ্ঞ তিনি পেস বোলিংকে বিদেশের মাঠে এসে নেতৃত্ব দেবেন, সেটাই সকলে আশা করবেন। সেখানে দুই ইনিংস মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত তাঁর বোলিংয়ে সেই ঝাঁঝটাই চোখে পড়েনি। প্রথম ইনিংসে ১৬ ওভার বল করে মাত্র একটি উইকেট পেয়েছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে এখনও পাঁচ ওভার বল করে একটিও উইকেট পাননি। হার্দিক পাণ্ড্য দু’টি উইকেট না তুলতে পারলে এতক্ষণে ম্যাচের দফারফা সারা হয়ে যেত। বৃষ্টিতে রক্ষা পাওয়ার সামান্য সম্ভাবনাটুকুও আর থাকত না।

শামিদের এই প্রজন্মের বোলিং ব্যর্থতার ময়নাতদন্তে দেখা যাবে, ভারতীয় পেসারদের মধ্যে ধারাবাহিকতার খুব অভাব। একটা গোটা স্পেলে খুব আঁটসাঁট বোলিং পাওয়াই যায় না তাঁদের কাছ থেকে। এমনকী, একটা ওভারের ছ’টা বলও তাঁরা মাঝেমধ্যে একাগ্রতা নিয়ে করবেন না। চারটি ভাল করে চাপ তৈরি করলেন তো পরের বলটাই ব্যাটের গোড়ায় দিয়ে বাউন্ডারি খেলেন। সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটসম্যানের ওপর তৈরি করা চাপটাই সরে গেল।

উল্টো দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার ভার্নন ফিল্যান্ডার বা কাগিসো রাবাডা একটাও সহজ রান দিচ্ছেন না। ফিল্যান্ডার পাঁচ ওভার টানা মেডেন নিয়ে রোহিত শর্মাদের একদম ক্রিজে বন্দি করে রেখেছিলেন দ্বিতীয় দিন সকালে। সে রকম নিয়ন্ত্রিত বোলিং পাওয়া যায় না ভারতীয় পেসারদের থেকে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ক্যাপ্টেন থাকার সময় যে কারণে হতাশ হয়ে ধরেই নিয়েছিলেন, এ রকম জোরে বোলারের মশলা নিয়ে বিরিয়ানি রান্না করা সম্ভব নয়। গোটা ২০১৫ বিশ্বকাপে ভাল বল করে মোক্ষম সময়ে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এসেই সাড়ে তিনশো গলিয়ে দিয়েছিল ভারতীয় বোলিং। ধোনির তাই স্বপ্নভঙ্গ হওয়াটাই স্বাভাবিক।

কোহালি তুলনায় অনেক বেশি করে বোলারদের পাশে দাঁড়ান। তাঁদের চাঙ্গা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু নিজেরা রোগ না সারাতে চাইলে জোর করে বড়ি খাইয়ে কী হবে? বিদেশে সৌরভ-সচিনদের সময়েও ভাল ফল করার অন্যতম কারণ ছিল জাহির খান-দের সাফল্য। ট্রেন্টব্রিজ থেকে ডারবান, সর্বত্র ভারতীয় পেস বোলিংকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই নেতৃত্বের দায়িত্ব এই প্রজন্মে কার হাতে নিশ্চিন্ত মনে তুলে দেওয়া যাবে, সেই উত্তর জানা নেই কারও। এখনকার পরিস্থিতিতে, দলের এক নম্বর পেসারের নাম ভুবনেশ্বর কুমার।

শামিকে এই টেস্টে তাঁর নিজস্ব ছন্দে দেখা যাচ্ছে না, তাঁর বলের গতিও সব সময় ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারে পৌঁছচ্ছে না। টিভি-তে বলের গতিমাপক যন্ত্র দেখিয়েছে, কখনওসখনও যশপ্রীত বুমরা বেশি জোরে বল করেছেন তাঁর থেকে। সোমবার সকালে যখনই ম্যাচ শুরু হোক, এই সব অস্বস্তিকর প্রশ্ন টেবল মাউন্টেনের উপর দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে দ্রুত ছন্দে ফিরতে হবে শামি-কে। তা না হলে ভারতের ম্যাচে টিকে থাকা যেমন ফের মেঘে ঢাকা পড়ে যেতে পারে, তেমনই বাড়তে পারে তাঁকে নিয়ে তৈরি হওয়া বিভ্রান্তি।

বোলাররা যদি মোটামুটি একটা টার্গেটের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আটকে রাখতে পারেন, তা হলে ম্যাচে ফিরে আসতে পারে ভারত। তখন আবার ফোকাস সরে যাবে ব্যাটিংয়ের উপর। প্রথম দিনের শেষ বেলায় তিনটি উইকেট উপহার দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটালে টেস্ট তো যাবেই, সিরিজও বাঁচানোর স্বপ্ন তখন অন্ধকারময় হয়ে উঠতে পারে।

শামি বল হাতে বাকি টেস্টে কী করেন, সেটা নিশ্চয়ই জরিপ করবেন জাতীয় নির্বাচকেরা। তেমনই নজর থাকবে শিখর ধবন ব্যাট হাতে কী করেন, সে দিকে। প্রথম ইনিংসে যে ভাবে তিনি আউট হয়েছেন, যে রকম সহজ ক্যাচ স্লিপে ফেলে দিয়েছেন, তাতে তাঁর প্রতি সমর্থনের হাওয়া কমতে থাকলে অবাক হওয়ার নেই।

আর ভুলে গেলে চলবে না যে, দক্ষিণ আফ্রিকায় কেপ টাউনেই কিছুটা ভারতের পক্ষে সুবিধেজনক পরিবেশ থাকে। একমাত্র এখানকার পিচেই স্পিনাররা সাহায্য পান। যার জন্য কেপ টাউনে ভারতের রেকর্ড তুলনামূলক ভাবে ভাল। এর পরের দু’টি টেস্ট জোহানেসবার্গ এবং সেঞ্চুরিয়নে। দু’টোতেই ঘাস এবং বাউন্সে ভরা বাইশ গজ অভ্যর্থনা জানালে অবাক হওয়ার নেই।

নিউল্যান্ডসের আকাশ থেকেই তাই মেঘ সরেছে। শামি, ধবনদের আকাশ উজ্জ্বল হল কি না বা ভারত টেস্ট বাঁচাতে পারল কি না, সেই ফয়সালা এখনও বাকি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন