ভারত ৯ শ্রীলঙ্কা ০

‘কোহালির ব্যাটিং যেন অসাধারণ ধ্রুপদী সঙ্গীত’

সফরের একমাত্র টি টোয়েন্টি ম্যাচে শ্রীলঙ্কা প্রথমে ব্যাট করে ১৭০ রান তুলল, তখন জানাই ছিল, এই সফরে টানা আটটা ম্যাচ জেতা ভারতকে এই রানে আটকানো বেশ কঠিন।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:০৬
Share:

আগ্রাসী: শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে মারকাটারি বিরাট। বুধবার। ছবি: এএফপি

টি-টোয়েন্টি মানেই নাকি রিভার্স সুইপ, দিলস্কুপ, সুইচ হিট! বিরাট কোহালি টি-টোয়েন্টিতে নামলে তো ওর ব্যাটে এই শটগুলো খুঁজে পাওয়া যায় না।

Advertisement

ক্রিকেটের আধুনিকতম ফর্ম্যাটে তুমুল গতিতে রান তোলার সময়ও বিরাটের ব্যাটিং দেখে মনে হয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের আসরে বসে আছি। সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও যদি সাদা পোশাকের চল থাকত আর পরে কখনও ইউটিউবে বিরাটের এই ইনিংস দেখা হতো, তা হলে হয়তো মনে হতো এও বুঝি কোনও টেস্ট ইনিংস ভারত অধিনায়কের।

টি-টোয়েন্টি ম্যাচ যে নিখুঁত ক্রিকেটীয় শটেও জেতানো যায়, বুধবার প্রেমদাসায় বিরাট তা বুঝিয়ে দিল। এর আগেও অবশ্য এটা বুঝিয়েছে ও। দেড়শোর ওপর স্ট্রাইক রেটে ওর ৮২ রানের ইনিংসটাতে কোনও অক্রিকেটীয় শট ছিল না। কী দর্শনীয় একটা ইনিংস! ব্যাট একদম সোজা রেখে খেলাটাই যেখানে ওর ব্যাটিংয়ের বৈশিষ্ট, এই ম্যাচেও তা-ই ছিল। ক্রিকেটের ‘অথেনটিক’ শট দিয়ে সাজানো ওর ইনিংস দেখে তৃপ্তিতে মন ভরে গেল।

Advertisement

সফরের একমাত্র টি টোয়েন্টি ম্যাচে শ্রীলঙ্কা প্রথমে ব্যাট করে ১৭০ রান তুলল, তখন জানাই ছিল, এই সফরে টানা আটটা ম্যাচ জেতা ভারতকে এই রানে আটকানো বেশ কঠিন। কিন্তু জয়টা যে এত সহজে চলে আসবে, তা ভাবাই যায়নি। এটা হল বিরাটের জন্যই।

আরও পড়ুন: আড়াই ঘণ্টা ব্যাট করে সাড়ে চার কেজি ওজন কমে গেল!

বিরাট যেমন দেখাল শুধু ক্রিকেটীয় শট খেলেই টি টোয়েন্টি জেতানো যায়। তেমন ও আর মণীশ দেখিয়ে দিল দৌড়ে রান নিয়ে টি টোয়েন্টি জিততে হয় কী ভাবে। দু’জনে মিলে ১৩৩ রান করেছে। তার অর্ধেক, অর্থাৎ ৫৬ রান এসেছে বাউন্ডারি থেকে। বাকিটা দৌড়ে। বিরাট রান নেওয়ার সময় প্রায়ই মণীশকে ‘দুই’-এর ইশারা করছিল। মানে দু’টো রান নিতে হবে। মণীশও অসাধারণ। ওর বিশ্বকাপ টিকিটটা এতদিন আরএসি-তে ছিল। সেটা মনে হচ্ছে এ বার ‘কনফার্মড’ হয়ে যাবে। শেষে মণীশকে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে দেওয়ার জন্য ধোনি যে ভাবে ওকে এগিয়ে দিল, তাতে বোঝাই যায় টিম স্পিরিটটা ঠিক কোথায় রয়েছে।

ভারতের পুরো সফরে শ্রীলঙ্কার একমাত্র মনে রাখার মতো ঘটনাটা দেখা গেল এই ম্যাচেই। শর্ট কভারে দাসুন শনাকা যে ভাবে নিজেকে হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়ে লোকেশ রাহুলের ক্যাচ ধরল, তাকে সেরা ঘটনা ছাড়া কিছু বলা যাবে না।

আর একজনের কথা না বললে নয়। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নেমে বুঝিয়ে দিল ও কত বুদ্ধিমান বোলার। ঠিকই ধরেছেন। কুলদীপ যাদবের কথাই বলছি। যুজবেন্দ্র চহাল তিনটে উইকেট পেল ঠিকই। কিন্তু সেরা বোলিংটা করল কুলদীপ। বৈচিত্রে ভরা বোলিং। ওর লেংথ ছিল একেবারে ঠিক জায়গায়। ফলে ওর বিরুদ্ধে বেশি বড় শট খেলতে পারেনি শ্রীলঙ্কার কোনও ব্যাটসম্যানই। সে জন্য ওভার প্রতি পাঁচের বেশি রানও দেয়নি।

বুমরার ২৪টা বলের মধ্যে একটাও ইয়র্কার না দেখে যেমন বেশ অবাক হলাম। তেমনই হার্দিক পাণ্ড্যকে এই ম্যাচে না খেলতে দেখেও কম বিস্মিত হইনি। হার্দিককে যেখানে সীমিত ওভারের বিশেষজ্ঞ হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে ওকে কেন এই ম্যাচে খেলানো হল না, এটাও বড় প্রশ্ন।

বিরাট কীর্তি ভারতের

এর আগে কোনও দল কোনও বিদেশ সফরে যা করে দেখাতে পারেনি, সেটাই করল বিরাট কোহালির ভারত। সব ক’টি ফর্ম্যাটেই বিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করা। সব ম্যাচেই জেতা। ফলে ৯-০ করে শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরছেন বিরাটরা।

সফরের একমাত্র টি-টোয়েন্টি জিতে উঠে কোহালিও যা নিয়ে আপ্লুত। ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিয়ে বলেই ফেললেন, ‘‘সব ফর্ম্যাটেই হোয়াইটওয়াশ এর আগে কোনও দল করতে পারেনি। এর জন্য যাবতীয় কৃতিত্ব ছেলেদের।’’

টিমের রেকর্ডের পাশাপাশি কোহালির নিজস্ব রেকর্ডও হল। যেমন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুততম ১৫ হাজার রান করলেন তিনি। কোহালি করলেন ৩৩৩ ইনিংসে, ভাঙলেন হাসিম আমলার রেকর্ড। আমলা করেছিলেন ৩৩৬ ইনিংস। তিন নম্বরে ভিভিয়ান রিচার্ডস (৩৪৪ ইনিংস)। নিজের দল নিয়ে কোহালি বলেছেন, ‘‘আমাদের রিজার্ভ বেঞ্চের শক্তিও এই সফরে ভালই বোঝা গেল। আমরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। যার ফলও খুব ভাল পেয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন