শেষ দিনে ভাগ্য নির্ধারণ, অভিনব খেতাবি লড়াই আই লিগে

জাতীয় লিগ নাম বদলে পরে হয়েছে আই লিগ। লিগের বাইশ বছরের ইতিহাসে দু’দল ট্রফির লড়াইতে একই দিনে নেমেছে একই দিনে, এ রকম ঘটনা অনেকবারই ঘটেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৮ ০৫:১৩
Share:

কোন দল শেষ হাসি হাসবে জানা যাবে শেষ দিনেই।

দশ দলের লিগে পাঁচ দলের ভাগ্য নির্ধারণ হবে শেষ দিনে, আই লিগের ইতিহাসে এ রকম ঘটনা কখনও ঘটেনি।

Advertisement

মিনার্ভা পঞ্জাব (৩২), নেরোকা (৩১), মোহনবাগান (৩০), ইস্টবেঙ্গল (৩০)—এই চারটে দল রয়েছে চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে। আর গোয়ার পারিবারিক ক্লাব চার্চিল খেলবে অবনমন বাঁচানোর ম্যাচ। চমকপ্রদ ব্যাপার হল, খেতাবের লড়াইয়ে সব অঙ্কেই এগিয়ে যারা, সেই মিনার্ভার সঙ্গে বৃহস্পতিবার শেষ ম্যাচ চার্চিলের। এই ম্যাচে জিততে না পারলে নেমে যাবে গোয়ার একমাত্র আই লিগের ক্লাব। উল্টো দিকে চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে মিনার্ভাকে এই ম্যাচ জিততেই হবে।

জাতীয় লিগ নাম বদলে পরে হয়েছে আই লিগ। লিগের বাইশ বছরের ইতিহাসে দু’দল ট্রফির লড়াইতে একই দিনে নেমেছে একই দিনে, এ রকম ঘটনা অনেকবারই ঘটেছে। ইস্টবেঙ্গলের এখনকার ম্যানেজার মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য আঠেরো বছর আগে যে বার প্রথম ক্লাবকে খেতাব জিতিয়েছিলেন সে বার শেষ দিনে ফয়সালা হয়েছিল লিগের। মোহনবাগানের চেয়ে এক পয়েন্টে এগিয়ে থাকা অবস্থায় শেষ ম্যাচে জয় দরকার ছিল লাল-হলুদের। তিরুবঅনন্তপুরমে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ত্রিবাঙ্কুর-কে হারিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। মোহনবাগান আই টি আই-কে হারিয়েও খেতাব পায়নি। ২০০৭-০৮ এ ডেম্পো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল চার্চিলকে গোল পার্থক্যে হারিয়ে। তখন অবশ্য হেড টু হেড নিয়ম চালু হয়নি। গত মরসুমে আইজল ও মোহনবাগানের মধ্যে খেতাব লড়াইয়ের নিস্পত্তি হয়েছিল শেষ দিন।

Advertisement

তবে কিছুটা এ বারের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ২০০৪-০৫ এ। তবে চারটি দল নয়, সে বার তিনটি দল ছিল খেতাব দখলের যুদ্ধে। স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়া (৪৫), ডেম্পো (৪৪) এবং ইস্টবেঙ্গল (৪৩) ছিল লড়াইতে। শেষ দিনে তিনটি ম্যাচে ছিল তীব্র উত্তেজনা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ডেম্পো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল টালিগঞ্জ আগ্রগামীকে হারিয়ে। শীর্ষে থাকা স্পোর্টিং ক্লুব হেরে গিয়েছিল মহীন্দ্রার কাছে। সুভাষ ভৌমিকের ইস্টবেঙ্গলও জিততে পারেনি ভাস্কোর কাছে। এ বারও সে রকম অঘটন হবে? কারণ খেতাবের লড়াইতে থাকা চার দলের কেউই জোর দিয়ে বলতে পারছেন না, ‘‘আমরাই লিগ পাব।’’ কারণ কোনও টিমের খেলারই ধারাবাহিকতা নেই। যে-হেতু সব ম্যাচ একসঙ্গে, তাই কেউ কারও ফল দেখে নামতে পারবে না মাঠে। বলা যায়, সবাইকে অন্ধ গলিতে নব্বই মিনিট হাঁটতে হবে হিরের খোঁজে।

আরও পড়ুন: ছোট মাঠে আজ সমস্যায় পড়তে পারে সুনীলেরা

যারা জিতলে বাকি তিনটি দলই অন্ধকারে চলে যাবে সেই মিনার্ভা পঞ্জাবের কোচের গলাতেই তো মাঠে নামার আগে রীতিমতো সংশয়। গোকুলম, চেন্নাই সিটির মতো অবনমনে থাকা টিমের কাছে হেরে মুষড়ে পড়েছেন মিনার্ভা কোচ খগেন সিংহ। পঞ্চকুল্লা থেকে ফোনে উদ্বেগ প্রকাশ করে বললেন, ‘‘জানি না কী আছে কপালে। কবেই তো আমাদের চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাওয়ার কথা। কী সব ম্যাচ হারলাম শেষ দিকে!’’ সঙ্গে চেঞ্চো গিলসনদের কোচের সংযোজন, ‘‘চার্চিলের কাছে ওদের মাঠে হেরেছি। এখন তো নতুন দু’তিনজন বিদেশি নিয়ে ওরা আরও শক্তিশালী। তবে সব খেলা এক সঙ্গে হবে এটাই ভাল।’’

অপ্রত্যাশিত ধাক্কায় ফেভারিট দলগুলিকে যারা নাস্তানাবুদ করেছে তাদের দু’টি দলের হাতে ভাগ্য ঝুলছে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের। মণিপুরের প্রথম আই লিগ ক্লাব নেরোকা এবং টুর্নামেন্টের কালোঘোড়া গোকুলমের সামনে পড়ে খালিদ জামিল আর শঙ্করলাল চক্রবর্তী তীব্র চাপে। কালিকটে দিপান্দা ডিকাদের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে গোকুলম কোচ বিনু জর্জ বললেন, ‘‘কলকাতায় গিয়ে মোহনবাগানকে হারিয়েছি। কালিকটেও হারাতে হবে। আমাদের কোনও চাপ নেই। চাপ ওদের।’’ কলকাতার দুই প্রধান ও মিনার্ভাকে হারিয়ে ‘জায়ান্ট কিলার’ হয়ে যাওয়া গোকুলম তাদের তিন বিদেশি বদল করার পরই বদলে গিয়েছে দলের চেহারাটাই। উগান্ডার হেনরি কিসেক্কা, মুদে মুসা এবং বাহরিনের মেহমুদ আস আজমি-রা যোগ দেওয়ার পর দক্ষিণের দলটির পালে হাওয়া লেগেছে। পুরো টিমের চালিকাশক্তি তো ওরাই। আর ইতিমধ্যেই কলকাতায় পা রাখা ইস্টবেঙ্গলের প্রতিদ্বন্দ্বী নেরোকার কোচ গিফট রাইকান এ দিন সল্টলেকে অনুশীলনের পর বলেছেন, ‘‘মিনার্ভা ফেভারিট মানছি। চার্চিল কিন্তু ছাড়বে না। ইস্টবেঙ্গল ভাল টিম। কিন্তু আমরাও জিততে এসেছি।’’ ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে নেরোকার প্রথম ম্যাচ ১-১ হয়েছিল। রাইকানের হাতে ফেলিক্স চিডির মতো গোলের মধ্যে থাকা স্ট্রাইকার আর আরিয়ান উইলিয়ামের মতো মিডিও আছেন। তাদের উপর নির্ভর করেই খেতাব জেতার স্বপ্ন দেখছে নেরোকা। মিনার্ভার পর নেরোকাই তো খেতাবের দৌড়ে এগিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন