খোশমেজাজে ধোনি। ছবি: পিটিআই।
আইপিএলের সবচেয়ে দুর্লঙ্ঘ্য টিম। সবচেয়ে আকর্ষণীয়, তারকাদ্যূতিতে সবচেয়ে গ্ল্যামারাস। দু’বারের চ্যাম্পিয়ন, তিন বারের ফাইনালিস্ট। আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি পৃথিবীতে ধারাবাহিকতার আর এক নাম। চেন্নাই সুপার কিঙ্গসকে নিয়ে প্রশংসাসূচক বাক্য আজ পর্যন্ত খুব কম খরচ হয়নি। উপরের সার্টিফিকেট তো বটেই, অগুনতি বিশেষণ ব্যবহৃত হয়েছে আরও। যে টিমে থাকে সুরেশ রায়না, ব্রেন্ডন ম্যাকালামের মতো ব্যক্তিত্ব, যে টিমে থাকেন স্বয়ং মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, সে টিমের কাছে সাফল্যের প্রত্যাশা বা ধারাবাহিক সাফল্য কোনওটাই আশ্চর্যের নয়। আইপিএল আটে নেমে তারা যে তৃতীয় বার টুর্নামেন্টটা জিতে বাকিদের চেয়ে এগিয়ে যেতে চাইবে, সেই ভাবনাও মোটেই ব্যতিক্রমী কিছু নয়। ব্যতিক্রমী কারণটা। সিএসকে এ বার টুর্নামেন্টটা জিততে চাইছে গর্বের নতুন শৃঙ্গ আরোহনের জন্য নয়। জিততে চাইছে বাঁচার জন্য!
ব্যাপারটা ঠিক কী?
সোমবার তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার কর্তা এবং সিএসকের মুখ্য ব্যক্তিত্বদের কারও কারও সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, লোঢা কমিশনের রিপোর্টে গুরুতর কিছুর আশঙ্কায় আগাম আইপিএল আট জিতে রাখতে চাইছে সিএসকে। জিতে রাখতে চাইছে যে কোনও উপায়ে, সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। যাতে আইপিএলের সর্বাধিক চ্যাম্পিয়ন টিমের গায়ে হাত দিতে দু’বার ভাবতে হয় কমিশনকে!
আইপিএল কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়া দুই ফ্র্যাঞ্চাইজি সিএসকে এবং রাজস্থান রয়্যালসের ভবিতব্য কী হবে, ঠিক করবে সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচিত লোঢা কমিশন। রিপোর্ট চলেও আসবে আর কয়েক মাসের মধ্যে। এবং রিপোর্টের ফলাফল কী হবে, তা নিয়ে আগাম টেনশনে সিএসকে কর্তৃপক্ষ।
তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার অফিসে বসে যে আশঙ্কার কথা বলেও ফেললেন সিএসকে ম্যানেজমেন্টের বর্তমান অঘোষিত মুখ্য কর্তা। তাঁর মনে হচ্ছে, টিম একবার আইপিএল আট জিতে ফেললে শুধু কমিশনের কাছে নরম রায় আশা করা যাবে এমন নয়, টিমকে ঘিরে ঘটে চলা আরও কয়েকটা সমস্যা মিটবে। যেমন সিএসকের পড়তি ব্র্যান্ড ভ্যালুকে আবার টেনে উপরে তোলা যাবে। যেমন, স্পনসরদের থেকে সেই পরিমাণ অর্থ আদায় করা যাবে, যা আইপিএল কেলেঙ্কারির আগে চেন্নাই ফ্র্যাঞ্চাইজি পেতে অভ্যস্ত ছিল।
বলা হচ্ছে, গুরুনাথ মইয়াপ্পনের পরে শ্রীনিবাসনের নামও কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে যাওয়ায় প্রবল ধাক্কা খেয়েছে সিএসকের ব্র্যান্ড ভ্যালু। ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে টিমের মার্কেটিং করতে গিয়ে সুবিধে হয়নি। উল্টে পরের পর কেলেঙ্কারির আক্রমণ স্পনসরদেরও মন ঘুরিয়ে দিয়েছে। বলা হচ্ছে, গত বছর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টি জেতায় অবস্থা তুলনায় উন্নত, কিন্তু আগের পরিস্থিতি এখনও আসেনি।
যেখানে পৌঁছতে মনে করা হচ্ছে, আইপিএল আট জেতা দরকার।
শোনা গেল, সিএসকে টিমকে এ বার টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কর্তৃপক্ষ ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, চার বছর শুষ্ক থাকার পর ট্রফিটা এ বার দরকার। বলা হয়েছে, তোমাদের টিমে কয়েক জন ধুরন্ধর অধিনায়ক আছে। এত ভাল ব্যাটিং লাইন আপও কোনও টিমের নেই। তোমাদের নতুন করে বলার কিছু নেই। বাকিটা তোমাদের ব্যাপার। সিএসকের বর্তমান মুখ্য কর্তা (যিনি শ্রীনির বিশ্বস্ত সহচর) এ দিন বললেন, ক্রিকেটারদের পর্বতপ্রমাণ চাপের মধ্যে ফেলা হয়নি যেমন ঠিক, তেমন এটাও ঠিক যে বলা হয়েছে, শেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ যখন জেতা সম্ভব হয়েছে, এ বার যখন এত ভাল শুরু করা গিয়েছে, তখন টুর্নামেন্টটা এ বার জিতে ফেলো!
ওই কর্তার বক্তব্য পরিষ্কার। লোঢা কমিশনের রায়ে বিপদ ঘটলেও ক্রিকেটারদের আর্থিক দিকটা দেখে নেবে সিএসকে। তার বিনিময় সিএসকে কর্তারা এখন একটাই আশা করছেন। ফ্র্যাঞ্চাইজিকে বাঁচাতে যেন সর্বাত্মক ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েন ক্রিকেটাররা।