ছয় গোলের লজ্জায় কেঁদে পদত্যাগ চিমার

আট-নয়ের দশকে চিমা ওকোরি মাঠে থাকা মানেই গোল এবং জয়। এটাই প্রচলিত ধারণা ছিল ময়দানে। কত ডার্বির ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে তাঁর গোলে, গুনে শেষ করা কঠিন। গ্যালারিতে তখন স্লোগান উঠত, ‘চিমার পায়ে বল, বিপক্ষের চোখে জল।’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩১
Share:

আট-নয়ের দশকে চিমা ওকোরি মাঠে থাকা মানেই গোল এবং জয়। এটাই প্রচলিত ধারণা ছিল ময়দানে। কত ডার্বির ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে তাঁর গোলে, গুনে শেষ করা কঠিন। গ্যালারিতে তখন স্লোগান উঠত, ‘চিমার পায়ে বল, বিপক্ষের চোখে জল।’

Advertisement

সেই চিমাই কাঁদছেন! হাউ হাউ করে! বুকে চাপড় মারছেন সজোরে! হঠাৎ দেখলে মনে হবে, কোনও নিকট স্বজনের মৃত্যুশোকে মর্মাহত!

মৃত্যুশোক তো বটেই। তবে স্বজনের নয়। তাঁর কোচিং-জীবনের। গোল করে নয়, হারের লজ্জায়। হাফ ডজন গোল খাওয়ার শোকে।

Advertisement

বুধবার খড়দহ স্টেডিয়ামে ঘটল অবিশ্বাস্য এই ঘটনা। প্রিমিয়ার লিগে কালীঘাট মিলন সঙ্ঘের কাছে ১-৬ হারল চিমার কোচিংয়ে থাকা পুলিশ। তার পরই নাটকীয় ভাবে ময়দানের কালো চিতার পদত্যাগ এবং কান্না। “ফুটবলার জীবনে কখনও ছ’গোল খাইনি। এই লজ্জা নিয়ে কোচিং করাতে পারব না। পুলিশ কর্তাদের পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি,” কথা শেষ হল না। ফের ডুকরে কাঁদতে শুরু করে দিলেন তিনি। একেবারে শিশুর মতো।

পনেরো বছরের খেলোয়াড়-জীবনে যা কখনও ঘটেনি, কোচিং-জীবনে সেই হাফডজন গোল হজম করার কলঙ্ক যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি। এ কোন চিমা! অনেকেই হয়তো ফুটবলার চিমার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলতে পারেন। আবার ফুটবলের প্রতি তাঁর ভালবাসা, নিষ্ঠা দেখলে ময়দানের ফুটবলপ্রেমীরা রাগে ফুঁসতে পারেন, বাগানের বোয়া-ফাতাইয়ের মতো বিদেশিদের গা-ছাড়া মনোভাবের পাশে। চিমা বলছিলেন, “ফুটবল আমার কাছে ঈশ্বর। সেই ঈশ্বরকে আমি কষ্ট দিয়েছি। রাতে গলা দিয়ে খাবার নামবে কি না জানি না!”

ডার্বির পরেও মোহনবাগান স্টপার ফাতাইকে খোশমেজাজে হাসি-ঠাট্টা করতে দেখা গিয়েছিল তাঁর দেশওয়ালি বেলো রজ্জাকের সঙ্গে। ডার্বি হারের লজ্জা কাটাতে পরের ম্যাচে যে তেড়েফুঁড়ে খেলবেন, সেটাও দেখতে পাওয়া যায়নি বুধবারের ম্যাচে। আর বোয়া? তিনি যেন ট্যুরিস্ট হয়ে এসেছেন! দায়বদ্ধতার নামগন্ধ নেই। যে ডার্বিতে ১৫ গোল (১০ ইস্টবেঙ্গল, ৫ মোহনবাগান) চিমার। ভারতে যাঁর গোল সংখ্যা ২৯৫। চিমার কান্না দেখেশুনে প্রশ্ন উঠতেই পারে, তখনকার সঙ্গে এখনকার বিদেশিদের দায়বদ্ধতার কত ফারাক। পুলিশ কর্তাদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে কলকাতা লিগ ইতিহাসে সর্বোচ্চ সাত বারের সেরা গোলদাতা চিমা বলেন, “নিজে খেলা আর কোচিংয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য, এখন বুঝতে পারছি। আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন