Sourav ganguly

প্যারাশুট নিয়ে ট্রেনিংয়েও তো কিছু শারীরিক অস্বস্তি দেখিনি

সময়টা ২০০৫-’০৬।  ইডেনে তখন কড়া ট্রেনিংয়ে নিজেকে ডুবিয়ে দিচ্ছে সৌরভ।

Advertisement

চিন্ময় রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:৪১
Share:

উদ্বেগ: বোর্ড প্রেসিডেন্ট হওয়ার সেই দিনের ছবি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অসুস্থতার খবরে চিন্তিত সকলে। ফাইল চিত্র

ক্রিকেট মাঠে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সব চেয়ে হাড় ভাঙা পরিশ্রমের দিনগুলোতে আমি পাশে ছিলাম। কখনও ওর মধ্যে শারীরিক কোনও সমস্যা দেখিনি। যেটুকু যা ক্লান্তি আসত বা হাঁপিয়ে উঠত, সেটা একদমই স্বাভাবিক ছিল। কড়া ট্রেনিং করলে কম-বেশি যে কোনও খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রেই যেটা হতে পারে।

Advertisement

সময়টা ২০০৫-’০৬। ইডেনে তখন কড়া ট্রেনিংয়ে নিজেকে ডুবিয়ে দিচ্ছে সৌরভ। ভারতীয় ক্রিকেটে সেই সময়টা ছিল গ্রেগ চ্যাপেলের কোচিংয়ের যুগ এবং আমাদের ‘দাদা’ ভারতীয় দলের বাইরে চলে গিয়েছিল। তার পরে বাকিটা ইতিহাস। বরাবরের সেই জেদ এবং হার-না-মানা মনোভাব দেখিয়ে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করে দেখিয়েছিল। কিন্তু সেই প্রত্যাবর্তনের নেপথ্যে ছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইডেনে বা বেহালার রেলের মাঠে নিজেকে কড়া ট্রেনিংয়ে ডুবিয়ে দেওয়া। সেই সময়ে প্যারাশুট ট্রেনিং করেছে সৌরভ। কোমরে টায়ার বেঁধে দৌড়েছে। এখনকার দিনের মতো ওয়েট ট্রেনিং বা জিমে গিয়ে ওজন তোলার প্রথা ততটা আসেনি ক্রিকেটে। এখন বিরাট কোহালি, যশপ্রীত বুমরাদের আর কোমরে টায়ার বেঁধে ছুটতে দেখা যায় না। তারা সব জিমে গিয়ে ওজন তুলে শক্তি, দম বাড়াচ্ছেন। কিন্তু সৌরভ সেই সময়ে যে ভাবে পরিশ্রম শুরু করেছিল শুধুমাত্র ভারতীয় দলে ফিরে এসে নিজেকে ফের প্রমাণ করবে বলে, তা কখনও ভোলা যাবে না। প্যারাশুট ট্রেনিং মানে বেশ পরিশ্রমসাধ্য ব্যাপার। হাওয়ায় ফুলে ওঠা প্যারাশুট পিছনে টানবে। আর তোমাকে এগিয়ে যেতে হবে। নিজের ফিটনেস নিয়ে আর কোনও গ্রেগ চ্যাপেল যাতে কথা তুলতে না পারে, সেই কারণে সৌরভ এই ট্রেনিং করত। আমাকে বলেছিল, ‘‘চিন্ময়, তুমি যা যা করাতে চাও, আমি সব ট্রেনিং করতে রাজি। শুধু সেরা ফিটনেস আনতে চাই।’’ তখন অত সব দম বের করে দেওয়া ট্রেনিংয়ের মধ্যেও কখনও শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হতে দেখিনি।

শুধু তা-ই নয়, ফিটনেস বাড়িয়ে তোলার জন্য এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছিল সৌরভ যে, ‘বিপ টেস্ট’-এ ভাল ফল করার টার্গেট নিয়েছিল। এখনকার দিনে ক্রিকেটারদের যেমন ইয়ো-ইয়ো পরীক্ষা হয়, তখন ছিল ‘বিপ টেস্ট’। দু’টো স্পটের মধ্যে হয়তো একশো মিটার দূরত্ব ঠিক করে দেওয়া হল। এ বার দু’টো ‘বিপ’ শব্দ হবে। প্রথমটা হলেই দৌড় শুরু করতে হবে। দ্বিতীয় শব্দটা হওয়ার মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছে যেতে হবে। যত পরীক্ষা এগোবে, তত দু’টো ‘বিপ’-এর মধ্যে সময় কমতে থাকবে। অর্থাৎ, অনেক সময়ে দূরত্বটা অতিক্রম করতে হবে। তখনকার দিনে ক্রিকেটারদের দম পরীক্ষা করা বা সে কতটা ধকল নিতে পারে, তার একটা আন্দাজ আমরা এই ‘বিপ টেস্ট’ থেকে পেতাম। ২০০৫-এর পরে সৌরভ অবিরত পরিশ্রম করে সেই পরীক্ষাতেও ভাল ফল করা শুরু করেছিল। সেই সময়েও কখনও অশনি সঙ্কেত ধরা পড়েনি আমাদের চোখে। বাইরে থাকার সময়ে আমার কাছ থেকে ‘বিপ টেস্ট’-এর সিডিও নিয়ে যেত। যাতে ফিটনেসে খামতি না হয়। ২০০৮-এ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওর বিদায়ী সিরিজের আগেও খুব খেটেছিল সৌরভ। তখনও ট্রেনিং করতে গিয়ে কোনও সময়ে সমস্যায় পড়েছে বলে শুনিনি।

Advertisement

আরও পড়ুন: সৌরভ কেমন আছেন জানতে বার বার অমিত শাহের ফোন

আরও পড়ুন: সৌরভের ডান দিকের ধমনীতে ৯০ শতাংশ ‘ব্লক’

এটা ঠিক যে, খেলোয়াড়ের জীবন অবসরের পরে পাল্টে যেতে পারে। সৌরভ যদিও ট্রেনিং করে ফিট থাকার চেষ্টা করেছে। বাড়িতেই জিম রয়েছে, সেখানে শারীরচর্চা করত। কিন্তু ট্রেনার হিসেবে একটা কথা মাথায় রাখতে বলি আমরা। জিম বা ট্রেনিং করার জন্য ঘুমটা খুব জরুরি। খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে আমরা সব সময় বলেছি, অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম অবশ্যই দরকার। ক্লান্ত শরীর নিয়ে, রাতে ভাল ঘুম না হলে কখনও জিম বা শারীর চর্চা করা উচিত নয়। শুনলাম, শুক্রবার রাতেও সৌরভ অসুস্থ বোধ করছিল। তার পরেও শনিবার জিম করতে যাওয়াটা হয়তো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। আবার এটাও ঠিক, কখনও যার কোনও সমস্যা হয়নি, সে বুঝবেই বা কী করে যে, বিপদ অপেক্ষা করছে! সেটাও কি না ৪৮ বছর বয়সে! অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, ট্রেডমিল করা নিয়ে। আমি তাতে কোনও সমস্যা দেখি না। তবে হ্যাঁ, ট্রেডমিলে কোন গতিতে দৌড়ব, সেই পরিমাপ সঠিক হওয়াটা খুব দরকার। আর ক্লান্ত শরীর থাকলে বা ঘুম ভাল না হলে ট্রেডমিল না-করাই ভাল।

অবসরের পরে অনেক সময় অনেক খেলোয়াড়ের শৃঙ্খলা আলগা হয়ে যায়। সৌরভ খেলা ছাড়ার পরেই মোটা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হালফিলে অনেকটা মেদ ঝরিয়ে ফেলেছিল। তবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে আমরা ‘কামব্যাক ম্যান’ হিসেবেই জানি। এ বারেও নিশ্চয়ই সঙ্কট কাটিয়ে দ্রুতই দাদাকে স্বমহিমায় দেখতে পাব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন