স্বীকারোক্তি আর শাসানিতে আরও অতলে ফিফা

ফিফার আকাশে দুর্যোগ এত দিন কম ছিল না। দুর্নীতির মেঘ মাঝেমধ্যেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বর্ষণ ঘটাচ্ছিল। কোনও দিন দীর্ঘ সময় ধরে টাকা নয়ছয়ের অপরাধে সংস্থার মুখ্য কর্তারা গ্রেফতার হয়ে যাচ্ছেন। কোনও দিন উৎকোচ গ্রহণের নতুন অভিযোগে ইস্তফা দিয়ে সরে যাচ্ছেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট। ফুটবল-পৃথিবীর শাসকদের লজ্জার শেষ এখানে হলে তবু কথা ছিল। কিন্তু হচ্ছে। বরং বৃহস্পতিবার নতুন বজ্রগর্ভ মেঘের আর্বিভাব ঘটল। এক নয়, একজোড়া।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৫ ০৪:১০
Share:

ফিফার আকাশে দুর্যোগ এত দিন কম ছিল না। দুর্নীতির মেঘ মাঝেমধ্যেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বর্ষণ ঘটাচ্ছিল। কোনও দিন দীর্ঘ সময় ধরে টাকা নয়ছয়ের অপরাধে সংস্থার মুখ্য কর্তারা গ্রেফতার হয়ে যাচ্ছেন। কোনও দিন উৎকোচ গ্রহণের নতুন অভিযোগে ইস্তফা দিয়ে সরে যাচ্ছেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট। ফুটবল-পৃথিবীর শাসকদের লজ্জার শেষ এখানে হলে তবু কথা ছিল। কিন্তু হচ্ছে। বরং বৃহস্পতিবার নতুন বজ্রগর্ভ মেঘের আর্বিভাব ঘটল। এক নয়, একজোড়া।

Advertisement

দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত প্রাক্তন ফিফা ভাইস প্রেসিডেন্ট জ্যাক ওয়ার্নার একজন। যিনি অপ্রত্যাশিত ভাবে টিভিতে ঘোষণা করলেন যে, ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর দেশের নির্বাচন এবং ফিফার মধ্যে যে ভাল রকম সম্পর্ক আছে, প্রমাণ করে দেবেন। যে নির্বাচন চার বছর আগে হয়েছিল। প্রামাণ্য নথি তাঁর হাতে আছে। সঙ্গে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করে রাখলেন যে, সেপ ব্লাটারকে কেন মসনদ ছাড়তে হল সেটা ব্লাটার জানেন। আর জানে আর এক— সেটা তিনি। বললেন, তাঁর নাকি মৃত্যুভয় আছে!

দ্বিতীয় জনের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আগে থেকে ছিল। বর্তমানে তিনি ‘রাজসাক্ষী’। নাম— চাক ব্লেজার। যাঁর স্বীকারোক্তি এ দিন প্রকাশ হল। যেখানে ব্লেজার মেনে নিয়েছেন যে, সত্যিই তিনি ঘুষ নিয়েছিলেন। তিনি এবং ফিফার তৎকালীন একজিকিউটিভ কমিটির সদস্যরা প্রত্যেকেই ঘুষের বিনিয়ময়ে ২০১০ বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব দক্ষিণ আফ্রিকাকে পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন!

Advertisement

বৃহস্পতিবার অবশ্য প্রথমটা নয়, দ্বিতীয় বোমাটা আগে পড়ল। যেখানে নিউ ইয়র্কের বিচারপতির কাছে দু’বছর আগে দেওয়া ব্লেজারের স্বীকারোক্তি বেরিয়ে পড়ে ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থার মানসম্মান আরও ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে চলে গেল। যেখানে বিচারপতিকে ব্লেজার বলেছেন, ‘‘আটানব্বই বিশ্বকাপের আয়োজক দেশের নির্বাচনের জন্য আমি ঘুষ নিয়েছিলাম। সেটা ঘটে ’৯২ সালের আশেপাশে। শুধু তাই নয়, ২০১০ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ঠিক করার সময়ও ফিফার একজিকিউটিভ কমিটি ঘুষ নিয়েছিল। যার মধ্যে আমিও ছিলাম। ঘুষ নিয়ে আমরা ঠিক করেছিলাম যে ভোটটা দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেব।’’ শিহরিত করে দেওয়ার মতো স্বীকারোক্তি। যে শিহরণ আরও বাড়বে বিস্ফোরক স্বীকারোক্তির পরবর্তী অংশের কথা শুনলে। বিশ্বকাপই নয়, ঘুষ নেওয়া হয়েছিল ’৯৬, ’৯৮, ’০০, ’০২, ’০৩ গোল্ড কাপের সম্প্রচার সত্ত্ব কাকে দেওয়া হবে, তার নির্বাচনেও।

ইংল্যান্ড ডামাডোলের বাজারে নেমে পড়ে কাতার বিশ্বকাপ নিজেদের দিকে টানতে। বলা হয়, কাতারকে যদি শেষ পর্যন্ত ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজন করতে না দেওয়া হয়, তা হলে সেটা তারা আয়োজন করতে সক্ষম। ফ্রান্স আবার বলে দেয়, ঘুষ-টুষের মধ্যেই তারা ছিল না। ঘুষ দিয়ে ’৯৮ বিশ্বকাপ তারা পায়নি। তৎকালীন বিশ্বকাপ আয়োজক কমিটির মুখ্য কর্তা জাঁক ল্যাম্বার্ট পরিষ্কার বলে দেন যে, ফিফার আধিকারিক জ্যাক ওয়ার্নার তখন একটাই জিনিস চেয়েছিলেন। সেটা হল ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগোয় গিয়ে ফ্রান্সকে একটা প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলতে হবে।

ব্লেজারের স্বীকারোক্তি যদি ফুটবলমহলে নতুন বারুদের জন্ম দেয়, তা হলে তাতে আগুন ধরিয়ে দিলেন ওয়ার্নার। যাবতীয় দুর্নীতি ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে যিনি এখন খুন হয়ে যাওয়ার ভয় পাচ্ছেন। টিভি সাক্ষাৎকারে ওয়ার্নার বলেছেন, ‘‘নিজের জীবন বাঁচানো নিয়ে সত্যিই খুব দুশ্চিন্তায় আছি। কারণ যাবতীয় দুর্নীতির ফাঁস তো আমি খুলতে চলেছি এ বার। ফিফায় কী হয়েছে না হয়েছে, কতটা নোংরামি হয়েছে, সব বলে যাব। আর তার মধ্যে সেপ ব্লাটার নিজেও জড়িয়ে আছেন। আমি তিরিশ বছর ধরে ফিফায় আছি। ব্লাটারের চেয়ে কম কিছু জানি না। আমি আর কিছুই গোপন রাখব না। আর পিছনে তাকানোর কোনও জায়গা নেই। যে ধস আরও নামতে চলেছে, তাকে কেউ আটকাতে পারবে না। এমনকী মৃত্যুও না!’’

কোনটা আসল বিপর্যয়? কোনটা তা হলে চরম অসম্মান? এত দিন ধরে যেটা চলল সেটা? নাকি ওয়ার্নার-বিবৃত যা আসতে চলেছে? সময় বলবে। কিন্তু একটা আশঙ্কা বোধহয় সময়ের অপেক্ষাও আর করছে না।

লিওনেল মেসি-নেইমার দ্য সিলভাদের ‘জোগো বোনিতো’ও ফুটবলের হারানো সৌন্দর্য ফেরাতে পারলে হয়। যা চলছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন