জো রুটের সঙ্গে সাব্বিরের সখ্য গড়ে উঠেছিল বছর সাতেক আগে। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ সিরিজে। ২০১০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও দেখা হয়েছে দু’জনের। সোমবার সকালে বেন স্টোকসের বলে শফিউল এলবিডব্লিউ হতেই ২২ রানের জয়ে যখন উৎসবে ফেটে পড়েছেন অ্যালিস্টার কুকরা, তখন ব্যতিক্রম কেবল জো রুট। নন স্ট্রাইক এন্ডে হতাশায় বসে পড়া সাব্বিরকে স্বান্ত্বনা দিতে ছুটে এসেছেন তিনি। জো রুটের কথায় উঠে দাঁড়িয়েছেন সাব্বির। পা চলছে না। তবুও হাটঁতে হাঁটতে কাদোঁ কাঁদো অবস্থায় যেতে হয়েছে ড্রেসিং রুমে। টেস্ট অভিষেকে চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তাঁর। কাঁটায় কাঁটায় ২০০ মিনিটে অপ্রতিরোধ্য ৬৪ রানের ইনিংসে একটা রেকর্ডেও লিখিয়েছেন নাম। সাত নম্বরে বা তার নীচের দিকে ব্যাট করে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ করেছেন যাঁরা, টেস্ট ইতিহাসে সেই তালিকায় পাকিস্তানের মহম্মদ ওয়াসিম (১০৯*) এবং নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদি (৭৭)-র পর তৃতীয় স্থানে সাব্বিরের এই ইনিংস। তবে পঞ্চম দিনে ৩৩ রানের সমীকরণ মেলাতে এসে কেন অধিকাংশ বলে স্ট্রাইকের দায়িত্বটা নিলেন না? টেল এন্ডার তাইজুলের উপর নির্ভরতা রাখলেন? ২২ রানে হেরে যাওয়ার পর সাব্বিরের দিকে কেউ কেউ এ সব প্রশ্ন তোলেননি এমন নয়। মুশফিকুরের সঙ্গে ৮৮ রানের পার্টনারশিপে বাংলাদেশকে ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখানো সাব্বির নিজেও নিজেকে অপরাধী ভাবছেন, “আমার দিকে তাকিয়ে আসছে সবাই, তা জানতাম। তাই খুব খারাপ লাগছে। এ ভাবে হেরে যাব ভাবিনি। তাইজুল যখন উইকেটে আসে, তখন আমাদের টার্গেট ছিল ৫২ রান। তাইজুল সিঙ্গলে না খেললে তো এতটা ক্লোজ হতো না ম্যাচটি। ও (সিঙ্গল) নিতে পারলে নিক, এটাই ছিল নির্দেশ।”
বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিক কিন্তু সাব্বিরের উপর দোষ চাপানোর আদৌ পক্ষপাতী নন। “৩৩ রানে দুই উইকেট, অনেক কঠিন সমীকরণ। চতুর্থ দিনেই এই ম্যাচটি ৯০ শতাংশ ওদের দিকে হেলে পড়েছিল। তা ছাড়া সাব্বির তো আর একাই ৩৩ রান করতে পারবে না। এক দিক থেকে স্পিন অন্য দিক থেকে ওরা পেস ব্যবহার করলে তখন সাব্বিরকে একটু বেশি দায়িত্ব নিতে হতো। দুই দিক থেকেই পেস ব্যবহার করায়, সাব্বিরকে যতটা সম্ভব সাপোর্ট করতে তাইজুলকে বলা হয়েছিল। কারণ, সাব্বির যদি বাড়তি ঝুঁকি নিয়ে আউট হতো,তাহলে আরও আগেই খেলা শেষ হয়ে যেত।’
সাব্বিরের পাশাপাশি প্রশংসিত হয়েছেন আর এক অভিষিক্ত স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। টেস্টে অভিষেক ইনিংসে সপ্তম বাংলাদেশি হিসেবে পেয়েছেন ৫ উইকেট(৬/৮০)। ম্যাচে পেয়েছেন ৭ উইকেট।
তবে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্টে দেড়শো উইকেটের মাইল ফলক ছুঁয়েও সাকিব আল হাসান কিন্তু কাঠগড়ায় উঠেছেন চট্টগ্রাম টেস্ট হারের পর। দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণ দু’টি স্পেলে (২০-৫-৪০-৩ এবং ১০-১-৩৯-২) টেস্টে ১৫তম বার ইনিংসে ৫ উইকেটের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। কিন্তু তা নিয়ে নিয়ে গর্ব করতে পারছেন না সাকিব। ইংল্যান্ডকে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪০ রানে অল আউটের পরও ম্যাচে খলনায়ক তিনি! প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের লিডের ভাল সম্ভবনা হোঁচট খেয়েছে তাঁর একটি অপরিণামদর্শী শটে। তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় বলে অকারণে মইন আলির বলে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে প্রলুদ্ধ হয়ে সাকিব আসলে উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছেন বলে মত প্রায় সবারই। এতেই প্রথম ইনিংসে ৪৫ রানের লিড উপহার পায় ইংল্যান্ড। সেই থেকে চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ তিন দিনে ঘুরেফিরে প্রশ্নবিদ্ধ সাকিবের ওই শট! তৃতীয় দিনের খেলার শেষেই ওই শট নিতে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ, “ওটা ছিল খুব হতাশার। সাকিব নিজেও জানত দলের প্রধান অবলম্বন সে। ওই ভাবে আউট হয়ে দলের অন্য ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলে দিয়েছে।” সাকিবের ওই আউটটাই লিডের পথ সুগম করেছে, ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখেছে ইংল্যান্ড। সাকিবের ওই আউট নিয়ে মুখ খুলেছিলেন ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস, “অবশ্যই তিনি (সাকিব) উঁচু মানের ব্যাটসম্যান। তিনি হয়ত বা আমাদের স্পিনারদের উপর চাপ সৃস্টি করতেই অমনটি করেছেন। তবে তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় বলে তাঁর ওভাবে আউট হওয়াটা ছিল জঘন্য। ওই আউটই আমাদের দরজা খুলে দিয়েছে।” প্রথম ইনিংসে ৪৫ রানে পিছিয়ে পড়ার জন্য সাকিবের ওই শটকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ছেড়েছেন হেড কোচ হাতুরুসিংহেও, “ওই সময়ে সাকিব ওই শটটা না খেললে আমাদের জন্য ভাল হতো। ওভাবে আউট হওয়ায় আমি হতাশ। আমি নিশ্চিত, আমাদের মতো সাকিব নিজেও অনেক অনেক হতাশ।”
কিন্তু সাব্বির বেশি সমালোচিত হচ্ছেন বারবার একই ভুল করার জন্য। ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে প্রলুদ্ধ হয়ে শেষ ৭ ম্যাচে ৪ বার নিজের অপমৃত্যু ডেকে এনেছেন সাকিব। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দু’বার, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫০ ওভারের ম্যাচে ১ বার একই ধরনের শটে অপরাধী সাকিব। বার বার ভুল থেকে নিজেকে যেন সংশোধনই করতে পারছেন না এই অলরাউন্ডার। চট্টগ্রাম টেস্টে হেরে যাওয়ার পর বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও নিজের অসন্তোষ লুকোননি, “ও (সাকিব) নিজেই জানে কাজটা সে ঠিক করেনি। তার মত একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের কাছ থেকে আমরা কেউই এমনটা আশা করিনি। আশা করি ভবিষ্যতে সে নিজেকে শুধরোবে।”