যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের খেতাব জেতার আগেই কি ফ্লাশিং মেডোয় আর একটা জয় পাওয়া হয়ে গেল সেরেনা উইলিয়ামসের?
বছরের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যামের আসরে দুটো বিষয়ে আলোচনাই সবচেয়ে বেশি। এক, তুমুল গরম। দুই, সেরেনা উইলিয়ামসের সম্ভাব্য স্ল্যাম-নজির। দুইয়ের মধ্যে সেরেনাই বোধহয় জয়ী স্ট্রেট সেটে।
এক ডজন খেলোয়াড়ের দমবন্ধ করা গরমে কাবু হয়ে কোর্ট ছাড়া নিয়ে সরব নিউইয়র্ক। অন্য দিকে বছরের সব ক’টি ও কেরিয়ারের বাইশতম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে স্টেফি গ্রাফের পাশে নিজেকে বসাতে পারবেন কি না সেরেনা, তা নিয়ে টেনিস-বিশ্ব মুখর। চলতি যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে এখনও পাঁচটা (শুক্রবার রাত পর্যন্ত) হার্ডল পেরনো বাকি মার্কিন তারকার। কিন্তু এখন থেকেই আলোচনা ও তুলনা করা শুরু হয়ে গিয়েছে, সত্যিই তিনি স্টেফি, মার্টিনাদের মতো গ্রেট কি না।
সাতাশ বছর আগে স্টেফি যে মাইলফলক পুঁতেছিলেন এই ফ্লাশিং মেডোয়, বছরের সব গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার সেই কীর্তি তার পর আর কেউ ছুঁতে পারেননি। বাইশটা গ্র্যান্ড স্ল্যামের নজিরও অধরা। এ বার পারবেন সেরেনা? কাউন্টডাউন ও সেই সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এবং স্পষ্টতই তাঁরা দু’টি দলে বিভক্ত। জন ম্যাকেনরো, পাম শ্রাইভার, বিলি জিন কিং, গ্যাব্রিয়েলা সাবাতিনিরা যেখানে সেরেনার মাথায় নতুন এই তাজ দেখতে পাচ্ছেন, সেখানে বরিস বেকার, ক্রিস এভার্ট লয়েড, মনিকা সেলেসরা বলছেন, মোটেই সহজ হবে না ব্যাপারটা।
এতেই থেমে নেই। সেরেনা, স্টেফি ও মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা একই সময়ে খেললে কে এগিয়ে আর কে পিছিয়ে থাকতেন, তা নিয়েও শুরু হয়ে গিয়েছে জল্পনা। সম্প্রতি মার্টিনা এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘সেরেনা সার্ভিসে হয়তো উড়িয়ে দেবে। কিন্তু র্যালিতে আমি বোধহয় একটু এগিয়ে থাকতাম। বিপক্ষের গতি ও বিশেষ পছন্দ করে না। এই কারণেই হয়তো আমাকেও পছন্দ করত না।’’
আর স্টেফি বনাম সেরেনা?
মার্টিনার ব্যাখ্যা, ‘‘স্টেফির নিচু স্লাইস আর বিগ সার্ভ ঝামেলায় ফেলত সেরেনাকে। স্টেফির গতিও ছিল সাঙ্ঘাতিক। সেরেনার শক্তিকে শুষে নিয়ে তা ওকে ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল স্টেফির।’’
জার্মান টেনিসের কিংবদন্তি অবশ্য বরাবরই সেরেনাকে নিয়ে মন্তব্য এড়িয়ে চলেন। জুনে ফ্রান্সের লে’কিপ সংবাদপত্রকে শুধু বলেছিলেন, ‘‘অসাধারণ অ্যাথলিট। ওর শটগুলো যেন টেনিসের ইতিহাসের এক একটা স্মরণীয় অস্ত্র।’’ বছরের সব গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের বছরে যে প্রচণ্ড চাপে ছিলেন, তাও সেই সাক্ষাৎকারে স্বীকার করে নেন স্টেফি।
এখন যে সেই একই চাপ অনুভব করছেন, তা বলছেন সেরেনাও। যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের তৃতীয় রাউন্ডে ওঠার পর তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এখানকার তুমুল গরম শুধু নয়, প্রত্যাশার চাপটাও এখন বেশ বুঝতে পারছি।’’ তৃতীয় রাউন্ডে তাঁর বিপক্ষে স্বদেশীয় বেথানি ম্যাটেক স্যান্ডস। যে ম্যাচ ‘হাউসফুল’ বলে দাবি করছেন আয়োজকরা।
এ দিকে, মেয়েদের চতুর্থ বাছাই ক্যারোলিন ওজনিয়াকিকে হারিয়ে বড় অঘটন ঘটালেন বিশ্বের ১৪৯ নম্বর চেক প্লেয়ার পেত্রা সেতকোভস্কা। এই হারের ফলে মেয়েদের সেরা দশ বাছাইয়ের মধ্যে মাত্র তিনজন লড়াইয়ে বেঁচে থাকলেন। সেরেনার কাজটা আরও সহজ হয়ে গেল বলেই মনে করছেন অনেকে।
বৃহস্পতিবার অ্যান্ডি মারে অবশ্য গরম উপেক্ষা করেই দ্বিতীয় রাউন্ডের বাধা পেরোলেন। গরমকে তেমন আমল দিতে চাইছেন না রজার ফেডেরার। স্ট্রেট সেটে জিতে তৃতীয় রাউন্ডে ওঠার পরই এই কথা বলেন দ্বিতীয় বাছাই। কিন্তু তাতেই কাহিল পুরুষ খেলোয়াড়রা। ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পাঁচ সেটের ম্যাচ খেলতে দম বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম তাঁদের। এখন পর্যন্ত পুরুষদের বিভাগে ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ার সংখ্যাটা এ বার ১২। এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন ২৮ নম্বর বাছাই মার্কিন জ্যাক সক। চতুর্থ সেটে এ দিন কোর্টে লুটিয়ে পড়েন তিনি। তবে গরমকে উপেক্ষা করেই এগিয়ে চলেছেন স্ট্যানিসলাস ওয়ারিঙ্কা, টমাস বের্ডিচ, সিমোনা হালেপ, পেত্রা কিভিতোভারা।
ভারতীয়দের মধ্যে ডাবলস পার্টনার মার্টিনা হিঙ্গিসকে নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে সানিয়া মির্জা। তবে পুরুষদের ডাবলসে লিয়েন্ডার পেজ ও ফার্নান্দো ভার্দাস্কো দ্বিতীয় রাউন্ডে হারলেন মার্কিন জুটি স্টিভ জনসন-স্যাম কুরির বিরুদ্ধে। ফল ৫-৭, ৬-৪, ৩-৬। এর মধ্যে আবার আর এক কাণ্ড লুইস আর্মস্ট্রং স্টেডিয়ামে। ড্রোন ওড়ানোর জন্য এক ব্যক্তিকে আটক করল পুলিশ। এই ঘটনা নিরাপত্তার ঘেরাটোপ ভাঙার কোনও চক্রান্ত কি না, খতিয়ে দেখছে নিউইয়র্ক পুলিশ।