প্রাক্তনেরা কেউ চান বদল, কারও দাবি ঠিক প্রস্তুতি

গত বার সেমিফাইনালিস্ট ছিল তারা। সেই বাংলা এ বার শেষ আটেও নেই! 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৫
Share:

—ফাইল চিত্র।

গত বার সেমিফাইনালিস্ট ছিল তারা। সেই বাংলা এ বার শেষ আটেও নেই!

Advertisement

এমন কাণ্ডে রীতিমতো ক্ষোভের ঝড় বইতে শুরু করেছে বঙ্গ ক্রিকেট মহলে। ময়দান থেকে সোশ্যাল মিডিয়া— কোথাও দলে আমূল পরিবর্তনের দাবি, কোথাও আবার কোচ সরানোর প্রস্তাব।

রঞ্জি ট্রফিতে সফল হওয়া প্রাক্তন বঙ্গ ক্রিকেটারেরাও এই ব্যর্থতার যুক্তি খোঁজা শুরু করেছেন। যাঁদের বেশির ভাগেরই আঙুল জঘন্য ব্যাটিংয়ের দিকে। মনোজ তিওয়ারি ও অভিমন্যু ঈশ্বরন ছাড়া কোন ব্যাটসম্যান ধারাবাহিক ভাবে রান করেছেন, তা খুঁজতে যাওয়াই বৃথা। প্রাক্তনদের মধ্যে যা নিয়েও কোনও দ্বিমত নেই।

Advertisement

সল্টলেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পঞ্জাবের বিরুদ্ধে গত দু’দিনে ব্যাট হাতে মনোজ তিওয়ারি ও অভিমন্যু ঈশ্বরনের লড়াই যেন প্রদীপ নেভার আগে দপ করে জ্বলে ওঠারই মতো। যা নিয়ে বাংলার প্রাক্তন ওপেনার প্রণব রায় বলছেন, ‘‘মনোজ আর অভিমন্যু ছাড়া কেউই ধারাবাহিকতা দেখাতে না পারায় বাংলা কখনও লড়াই করার জায়গায় আসতে পারেনি। একসঙ্গে একাধিক ব্যাটসম্যান ফর্মে না থাকার জন্যই এমন বিশ্রী ফল হয়েছে মনে হচ্ছে। রঞ্জি ট্রফিতে সফল হতে হলে প্রতি ম্যাচে তিন-চারজন ব্যাটসম্যানকে অন্তত ভাল রান পেতেই হয়। প্রথম পাঁচের অন্তত তিন জনকে ক্রিজে টিকে থাকতেই হয়। বাংলার কোনও ম্যাচেই তা হয়নি।’’

প্রাক্তন স্পিনার ও রঞ্জি অধিনায়ক উৎপল চট্টোপাধ্যায়ও বলছেন, ‘‘দু-একজন ব্যাটসম্যানের উপর নির্ভর করে রঞ্জি ট্রফি জেতা তো দূরের কথা, শেষ আটেও যে ওঠা যায় না, তা তো প্রমাণই হল। ব্যাটিং ভীষণ ভাবে বাংলাকে ডুবিয়েছে এ বার। সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের মতো ভাল ব্যাটসম্যানের ফর্মে না থাকাও খুব ক্ষতি করেছে। সুদীপ-অনুষ্টুপরা ধারাবাহিক হলে এত খারাপ ফল হত না।’’ প্রাক্তন ভারতীয় স্পিনার শরদিন্দু মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘মনোজ বড় রান পেলে তবেই বাংলা বড় ইনিংস গড়বে, এটা বন্ধ না হলে রঞ্জি ট্রফিতে ভাল কিছু হওয়া সম্ভব নয়। রঞ্জির কঠিন ফর্ম্যাট ও অন্য দলগুলো যে ভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠছে, তাতে জেতা ছাড়া কোনও রাস্তা নেই।’’

অশোক ডিন্ডার উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা বাংলার বোলিংয়েরও ধার কমিয়ে দিচ্ছে বলে মনে করেন উৎপলেরা। মুকেশ কুমার ভাল বল করলেও ঈশান পোড়েলের চোটে শেষ পর্যন্ত ডিন্ডা-নির্ভরতা কমেনি বলেই মনে করেন তাঁরা। উৎপল বলেন, ‘‘দলে চার জন বিশেষজ্ঞ ও একজন পার্টটাইম বোলার থাকতে পারে। কিন্তু এই দলে দু-একজনকে বাদ দিয়ে অন্যদের পার্টটাইমার মনে হয়েছে।’’

এ বার তা হলে বঙ্গ ক্রিকেট নিয়ে নতুন করে ভাবতে বসার পালা? শরদিন্দুর দাবি, ‘‘বড়সড় রদবদল দরকার। কোচ বদল, দলে পরিবর্তন— সব করতে হবে। অনূর্ধ্ব ২৩ দল এত ভাল খেলছে। ওই দল থেকে অনেককেই পরের বার রঞ্জির দলে আনা উচিত।’’ নির্বাচকদের দায়িত্ব মনে করিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার সঠিক মিশ্রণ চাই দলে। নির্বাচকদেরই এটা ভাবতে হবে। এটা তো ওদেরই কাজ। আর পলাশ নন্দী, অরুণ লালের মতো অভিজ্ঞরা যেখানে দলের সঙ্গে যুক্ত, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো কিংবদন্তি যখন সঙ্গে আছে, তখন আর ভিনরাজ্যের কোচকে রেখে লাভ কী? তাকে ছেড়ে দেওয়াই ভাল।’’

উৎপল চান, ‘‘প্রস্তুতির সময় রঞ্জির নতুন ফর্ম্যাট ও অন্য দলগুলির শক্তি-দুর্বলতা জেনে রাখা উচিত। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে গেলে একই দক্ষতা ও মানসিকতার স্তরে পৌছতে হবে আমাদের ছেলেদের। ‘কমফর্ট জোন’ থেকে বেরিয়ে এসে খেলতে হবে ওদের। রঞ্জি ট্রফি এখন আর আগের মতো সোজা নেই।’’ শরদিন্দুর প্রস্তাব, ‘‘রঞ্জি শুরুর আগে সুপার লিগ হোক। এবং তার পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে দল বেছে নিয়ে অন্য রাজ্যে গিয়ে প্রস্তুতি হোক।’’

তবে প্রণব বর্তমান ক্রিকেটারদের উপরই আস্থা রাখার পক্ষে। তিনি বলছেন, ‘‘ওরা কেউ খারাপ ক্রিকেটার নয়। পরের বছর এরাই ভাল খেলতে পারে। সেই ভরসা রাখতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন