স্বপ্নভঙ্গের সঙ্গে অপমান দিয়ে গেল সান্তিয়াগো

দুই ১০-এর তুলনা ফের তুলল কোপা ফাইনাল

চোখের জলটা আজও বিদ্রোহ করল। কোমরে দু’টো হাত, শূন্য দৃষ্টি দেখছে অ্যালেক্সি সাঞ্চেজের জার্সি খুলে উৎসব, কিন্তু বুঝছে কি? ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন কাছে দাঁড়ানো জাভিয়ের মাসচেরানো। গঞ্জালো ইগুয়াইন মাথা তুলতে পারছেন না। লিওনেল মেসি নির্বিকার। কাঁদলেন না। রাগলেন না। কাউকে কিছু বললেন না। কেমন যেন আনমনা, ঘোরে ডুবে। চিলির খুদে এক বলবয় তাঁর কোমর জড়িয়ে ধরল হঠাৎ। সেলফি তুলতে। মিডিয়া বলল, ওটা পৃথিবীর সবচেয়ে দুখী সেলফি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৫ ০২:৪৪
Share:

সান্ত্বনা

চোখের জলটা আজও বিদ্রোহ করল।
কোমরে দু’টো হাত, শূন্য দৃষ্টি দেখছে অ্যালেক্সি সাঞ্চেজের জার্সি খুলে উৎসব, কিন্তু বুঝছে কি? ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন কাছে দাঁড়ানো জাভিয়ের মাসচেরানো। গঞ্জালো ইগুয়াইন মাথা তুলতে পারছেন না।
লিওনেল মেসি নির্বিকার।
কাঁদলেন না। রাগলেন না। কাউকে কিছু বললেন না। কেমন যেন আনমনা, ঘোরে ডুবে। চিলির খুদে এক বলবয় তাঁর কোমর জড়িয়ে ধরল হঠাৎ। সেলফি তুলতে। মিডিয়া বলল, ওটা পৃথিবীর সবচেয়ে দুখী সেলফি।
লিওনেল মেসি টেরও পেলেন কি?
মারাকানা ফাইনালের পর বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিল ছবিটা। আঠারো ক্যারাট সোনার বিশ্বকাপ রাখা মঞ্চে, আর সেটাকে নির্নিমেষ দেখে চলেছেন ফুটবল-ঈশ্বর। রবিবার সেটা ফের ছড়িয়ে পড়ল সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। সঙ্গে আরও একটা ছবি। কোপা আমেরিকা ট্রফি নিয়ে নাচছেন ভিদালরা, আর ‘ঈশ্বর’ পুরস্কার মঞ্চ ছাড়ছেন পরাজিতের মেডেল পরে। সতীর্থরা পোশাক পাল্টে জাম্পারে। তিনি, মাঠেরটাতেই।

Advertisement

লিওনেল মেসি জার্সি পাল্টাতেও ভুলে গেলেন।

সান্তিয়াগো ফাইনাল-উত্তর দু’টো তুলনা চলছে আর্জেন্তিনার সর্বকালের অন্যতম সেরাকে ঘিরে। একটা চিরাচরিত। দিয়েগো মারাদোনা বনাম লিওনেল মেসি। কেউ কেউ বলছেন, দেশের হয়ে পারেননি লিও। কিন্তু বার্সেলোনায় তাঁর সাফল্য তো কেড়ে নেওয়া সম্ভব নয়। দেশের হয়ে ১০৩ ম্যাচে ৪৬ গোল মেসির। মারাদোনার সেখানে ৯১ ম্যাচে ৩৪। ক্লাব পর্যায়ে ৪৮২ ম্যাচে ৪১২ গোল, মারাদোনার ৫৮৮ ম্যাচে ৩১২। চারটে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আছে মেসির। দিয়েগোর ইউরোপীয় খেতাব একটা। তা হলে? মারাদোনার পাশে তিনি এমনিই বসবেন। শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটের সমান ভাগীদার তিনিও। কিন্তু অন্য অংশটা বলছে, দেশকে একটা বিশ্বকাপ দিয়েছেন মারাদোনা। লিও একটাও বড় ট্রফি দিয়েছেন? তিনি অবশ্যই মহানায়ক, কিন্তু পেলে-মারাদোনার পরে। দ্বিতীয় তুলনাটা মর্মস্পর্শী। ফুটবলবিশ্বে প্রশ্ন, বিপর্যস্ত মহানায়কের কোন ছবিটা বেশি মর্মান্তিক? মারাকানার রাত? না কি সান্তিয়াগোর ওই অবিশ্বাসী চোখ? হতাশায় মুখ ঢেকে ফেলা?

Advertisement

পরিবেশ-পরিস্থিতি বিচার্য হলে কোথাও গিয়ে মারাকানার চেয়েও সান্তিয়াগো ফুটবল-রাজপুত্রের কাছে বেশি যন্ত্রণার। মাঠে অপমানিত তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব, গ্যালারিতে তাঁর পরিবার। ম্যাচের প্রথমার্ধে কিছু চিলি-সমর্থক উত্যক্ত করতে থাকে খেলা দেখতে আসা মেসি-পরিবারকে। মেসির ভাই রডরিগোর সঙ্গে একজনের তীব্র বাদানুবাদ বেধে যায়। শেষ পর্যন্ত সেই সমর্থক মেসির ভাইকে মেরেই বসেন বলে অভিযোগ! তার পরপরই মেসির পরিবারকে সুরক্ষিত জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সের্জিও আগেরোর পরিবারকেও ছাড়েনি চিলি-ভক্তরা। ম্যাচের পর লিওর কাটা ঘায়ে আবার নুনের ছিটে দিয়ে গেলেন জর্জ সাম্পাওলি। বলে গেলেন, ‘‘আমরা নব্বই মিনিটেই জিতে যেতাম যা খেলেছি।’’ মিডিয়ায় যার পর প্রচুর লেখালেখি হল কী ভাবে মেসিকে আটকে দিলেন সাম্পাওলি। কী ভাবে তাঁর সাপ্লাই লাইন কেটে দিলেন, কী ভাবে তাঁর মাথা গরম করতে মেদেলকে দিয়ে কড়া ট্যাকল করালেন। কোথাও কোথাও আবার ছবি এঁকেও বোঝানো হচ্ছে, আর্জেন্তিনার সেরা অস্ত্রকে কী ভাবে স্তব্ধ করে দিলেন চিলির আর্জেন্তিনীয় কোচ। ঠিক যেমন করেছিলেন হোসে মোরিনহো। জোয়াকিম লো।

আর্জেন্তিনা কোচ তবু বলেছেন, ‘‘চিলিকে ছোট করছি না। কিন্তু আর্জেন্তিনার আজ জেতা উচিত ছিল। আমরা নিজেদের খেলা খেলতে পারিনি, কিন্তু চিলিও তো পারেনি।’’ কোচ বলছেন বটে, শুনছে কে? মাসচেরানোর মতো কেউ কেউ কিছু ভাবার অবস্থায় নেই। বলে ফেলছেন, ‘‘এটা স্রেফ টর্চার। ফাইনালে উঠে দু’বার পারলাম না। প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে।’’ লাভেজ্জিও বলেছেন, ‘‘আবার একটা তিক্ত অভিজ্ঞতা দিয়ে সব শেষ হল। তবে মেসি কোনও না কোনও দিন দেশকে ঠিক বড় ট্রফি জেতাবে।’’ কিন্তু যাঁকে নিয়ে এত বলা, তিনি হারের চব্বিশ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও কিছু বলেননি।

বললেও বা বলতেন কী? কোপা শুরুর আগে তো বলেছিলেন, আর্জেন্তিনার এই প্রজন্মের একটা বড় ট্রফি প্রাপ্য। বিশ্বকাপের পর এটা এলে বড় ব্যাপার হবে। মারাকানায় অত কাছে পৌঁছেও স্বপ্ন ছোঁয়া হয়নি। বিশ্বকাপ শেষ। কোপাও শেষ। স্বপ্ন সেই স্বপ্নই, প্রত্যাবর্তন সেই অসম্মানজনক প্রশ্নের।

দেশের জার্সিতে লিওনেল মেসি আর ব্যর্থতা কি তা হলে এক? ওটা কি তাঁর ভবিতব্য হয়ে গেল?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন