মঙ্গলবার সিএবিতে সৌরভের ছবি তুলেছেন শঙ্কর নাগ দাস
বিকেলে ইডেনের ক্লাব হাউসে এসে সেই যে নিজের ঘরে ঢুকে পড়লেন তিনি, তার পর টানা ঘণ্টা চারেক দফায় দফায় বৈঠক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। কখনও আইনি উপদেষ্টার সঙ্গে তো কখনও সিএবি-র সিনিয়র কর্তার সঙ্গে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই যেন সিএবি নির্বাচনের ঢাকে কিছুটা হলেও কাঠি পড়ে গেল।
এত দিন ধরে যে প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ আটকে ছিল বিসিসিআই বনাম লোঢা কমিটির আইনি যুদ্ধের চক্রব্যূহে, সোমবার সুপ্রিম কোর্টের সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পর সেই রাস্তা সাফ হয়ে গেল। ফের দৌড় শুরু হল টিম সৌরভের। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নতুন টিম তৈরি করে সিএবি-কে থিতু করাই এখন বাংলার ক্রিকেট প্রশাসনের ক্যাপ্টেনের লক্ষ্য। বলেও দিলেন, ‘‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজটা শেষ করতে চাই। আর দেরি করলে চলবে না।’’
এখন কী ভাবে এগোবে সিএবি?
প্রথমে বিশেষ সাধারণ সভা ডেকে লোঢা সুপারিশ অনুযায়ী সিএবি গঠনতন্ত্রে সংশোধন। পরে সাধারণ সভা ডেকে সেই পরিবর্তিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নতুন কমিটি গঠন করে শীর্ষকর্তাদের নির্বাচন করে রাজ্যের ক্রিকেট প্রশাসনের নিয়মিত কাজ শুরু করা। এই দুই ধাপই সৌরভরা পেরোতে চলেছে যথাসম্ভব দ্রুত।
কিন্তু এ সবের মধ্যেই যে একটা বড় কাজ বাকি সিএবি-র। ২২ জানুয়ারি ইডেনে ভারত-ইংল্যান্ড ওয়ান ডে। সেটা উতরে না দেওয়া পর্যন্ত এই প্রশাসনিক ভোলবদলের কাজ শেষ করতে চান না সৌরভ। এ দিন সিএবি-তে তিনি বলেই দিলেন, ‘‘ওয়ান ডে-টা হয়ে যাক। তার পর এসজিএম ডাকা হবে। তার পর এজিএম। তবে আর বেশি দেরি করা যাবে না।’’ সিএবি-তে তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলছেন ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নাকি সব কাজ শেষ করে ফেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট।
এ দিনই আবার বঙ্গ ক্রিকেটের অন্দরমহলের একাংশে প্রশ্ন উঠেছিল, ২০১৪-র জুলাইয়ে সিএবি যুগ্মসচিবের আসনে বসার পর থেকে সিএবি-তে শাসক সৌরভের মেয়াদ প্রায় তিন বছর পূর্ণ হতে চলেছে। এই অবস্থায় তিনি সিএবি প্রেসিডেন্টের পদে বহাল থাকবেন কী করে? এই ধোঁয়াশা সৌরভ নিজেই সাফ করে দিয়ে জানান, বিচারপতি লোঢা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তিনি সিএবি প্রেসিডেন্ট পদে যত দিন রয়েছেন, তত দিনের মেয়াদই এ ক্ষেত্রে ধরা হবে। অর্থাৎ, সিএবি-র পদে তিনি এখনও প্রায় দু’বছর থাকতে পারেন।
কিন্তু যেখানে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সর্বোচ্চ আসনে তাঁর বসার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে সৌরভ সিএবি-তে আদৌ থাকবেন কি না, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। সিএবি-র অন্দরমহলে শোনা গেল, বোর্ডে যাওয়ার রাস্তা মসৃণ থাকলে সিএবি-র কোনও সিনিয়র কর্তাকে তাঁর জায়গায় বসাতে পারেন তিনি। বঙ্গ ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসনের জন্য ভাইস প্রেসিডেন্টদের মধ্যে একজন ও ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের মধ্যে একজন সিনিয়র কর্তার নামও নাকি ভেবে রাখা হয়েছে ইতিমধ্যেই।
এই ব্যাপারে অবশ্য এ দিন কিছুই বলতে চাইলেন না সৌরভ। শুধু বললেন, ‘‘কাল (বুধবার) বিকেলে শীর্ষকর্তাদের নিয়ে একটা বৈঠক করব। সেখানেই ঠিক করব, কী হবে, না হবে।’’ রাতে শোনা গেল, ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদেরও সেই বৈঠকে ডাকা হয়েছে।
এই বৈঠকেই যুগ্মসচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় ও কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-কে সরকারি ভাবে সিএবি থেকে সরে যাওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ আজ বিকেলেই বিদায়ী কর্তাদের ‘ফেয়ারওয়েল’? ইঙ্গিত তেমনই।