Asia Cup 2022

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে হার বাংলাদেশের, শ্রীলঙ্কার ব্যাটারদের দাপটে বিদায় শাকিবদের

শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গেল বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে বড় রান করলেও জিততে পারলেন না শাকিবরা। কুশল মেন্ডিস ও দাসুন শনকার ব্যাটে জিতে শেষ চারে শ্রীলঙ্কা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:২২
Share:

আশা জাগিয়েও ম্যাচ জিততে পারল না শাকিবের বাংলাদেশ। —ফাইল চিত্র

আশা জাগিয়েও ব্যর্থ বাংলাদেশ। একটা সময় দেখে মনে হচ্ছিল, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে এশিয়া কাপের শেষ চারে জায়গা করে নেবেন শাকিব আল হাসানরা। কিন্তু সেটা হতে দিলেন না শ্রীলঙ্কার দুই ব্যাটার কুশল মেন্ডিস ও দাসুন শনকা। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে দুই উইকেটে হেরে এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নিল বাংলাদেশ। অন্য দিকে প্রতিযোগিতার সুপার ফোর-এ উঠল পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা।

Advertisement

টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। সাব্বির রহমানের সঙ্গে মেহেদি হাসান মিরাজকে পাঠিয়ে চমক দেন শাকিবরা। সেই সিদ্ধান্ত কাজে লাগে। সাব্বির রান না পেলেও মেহেদি দ্রুত রান তুলতে থাকেন। পাওয়ার প্লে কাজে লাগিয়ে দলের রানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন তিনি। মাত্র পাঁচ রান করে আসিথা ফার্নান্ডোর বলে আউট হন সাব্বির।

তিনে ব্যাট করতে নামেন দলের অধিনায়ক শাকিব। প্রথম বলেই তিনি যে ভাবে ব্যাট চালান তাতেই বোঝা যাচ্ছিল কতটা অস্থির হয়ে রয়েছেন তিনি। পাওয়ার প্লে-তে ৫৫ রান করে বাংলাদেশ। কিন্তু তার পরে স্পিনাররা আক্রমণে আসতেই ধস নামল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। প্রথম ওভারেই মেহেদিকে বোল্ড করলেন ওয়ানিন্দু হাসরঙ্গ। ২৬ বলে ৩৮ রান করেন তিনি। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম শাকিবের সঙ্গে জুটি বাঁধতে পারেননি। চার রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি।

Advertisement

দলের রান এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ছিল শাকিবের কাঁধে। কিন্তু ২৪ রান করে মাহেশ থিকশানার বলে তিনি আউট হলে বাংলাদেশ চাপে পড়ে যায়। আফিফ হোসেন কয়েকটি বড় শট খেললেও অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লার ব্যাট চলছিল না।

১৪ ওভারের পর থেকে বাংলাদেশের রানের গতি বাড়ে। আফিফের পাশাপাশি মাহমুদুল্লাও হাত খোলা শুরু করেন। বেশি আক্রমণাত্মক দেখাচ্ছিল বাঁ হাতি আফিফকে। ফিল্ডার অনুযায়ী শট খেলছিলেন তিনি। রান আসতে থাকায় কিছুটা চাপে পড়ে শ্রীলঙ্কা। বাঁ হাতি, ডান হাতি জুটিতে দ্রুত রান উঠছিল। দেখে মনে হচ্ছিল অর্ধশতরান করবেন আফিফ। কিন্তু ২২ বলে ৩৯ রান করে বড় শট খেলতে গিয়ে সাজঘরে ফিরলেন তিনি। ২৭ রান করে পরের ওভারেই আউট হয়ে দেলেন মাহমুদুল্লা।

দু’জন আউট হওয়ার পরে দলের রানকে টেনে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ছিল মোসাদ্দেকের। আগের ম্যাচে যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকে ব্যাট করা শুরু করলেন তিনি। প্রথম বল থেকেই বড় শট খেললেন। শেষ পর্যন্ত ১৮৩ রানে শেষ হল বাংলাদেশের ইনিংস। মোসাদ্দেক ২৪ রান করে অপরাজিত থাকেন।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে ভাল শুরু করেন শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার পাথুম নিসঙ্ক ও কুশল মেন্ডিস। বেশি আক্রমণাত্মক দেখাচ্ছিল মেন্ডিসকে। পাওয়ার প্লে-তে বল করতে নেমে বিশেষ সুবিধা করতে পারলেন না শাকিব। প্রথম ওভারেই ১৭ রান দেন তিনি। বাংলাদেশকে খেলায় ফেরালেন ইবাদত। প্রথম ওভারেই দু’টি উইকেট নিলেন তিনি। প্রথমে নিসঙ্ক ও তার পর চরিথ আসালঙ্ককে সাজঘরে ফেরান তিনি। পাওয়ার প্লে-র শেষ ওভারে জোড়া ধাক্কায় কিছুটা চাপে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা।

শ্রীলঙ্কার স্পিনাররা ভাল করলেও বাংলাদেশের স্পিনাররা উইকেট থেকে বিশেষ সাহায্য পাচ্ছিলেন না। তার বদলে পেসাররা দাপট দেখাচ্ছিলেন। এক দিকে মেন্ডিস বড় শট খেলছিলেন। ভাগ্যও তাঁর সঙ্গে ছিল। একটি ক্যাচ পড়ে তাঁর। তার পরে মাহেদি হাসানের বলে আউট হলেও রিপ্লে-তে দেখা যায় নো বল করেছেন বোলার। ইবাদতের ওভারে একটি বল তাঁর গ্লাভসে লেগে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের কাছে যায়। আম্পায়ার আউট দেননি। বাংলাদেশ রিভিউ নেয়নি। নিলে মেন্ডিসকে সাজঘরে ফিরতে হত।

মেন্ডিস টিকে থাকলেও অন্য দিকে উইকেট পড়ছিল। নিজের দ্বিতীয় ওভারে দানুষ্কা গুণতিলককে আউট করেন ইবাদত। তাসকিন আহমেদের বলে সাজঘরে ফেরেন ভানুকা রাজাপক্ষ। চার উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে চাপে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা।

মেন্ডিসের সঙ্গে মিলে দলের রানকে টেনে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ছিল অধিনায়ক দাসুন শনকার। জরুরি রানরেট ক্রমাগত বাড়ছিল। শুরুতে কিছুটা ধীরে খেলার পরে হাত খোলা শুরু করেন শনকা। বাংলাদেশের সব থেকে সফল বোলার ইবাদতকে পর পর দু’বলে দু’টি শক্কা হাঁকান তিনি। অর্ধশতরান করেন মেন্ডিস।

প্রতি ওভারে বড় রান আসছিল। দেখে মনে হচ্ছিল খেলা ধীরে ধীরে শ্রীলঙ্কার হাতের মুঠোয় চলে আসছে। কিন্তু ফের তা পেন্ডুলামের মতো অন্য দিকে ঢলে গেল। অভিজ্ঞ মুস্তাফিজুরের বলে ৬০ রান করে আউট হয়ে গেলেন কুশল। হাসরঙ্গও রান পেলেন না। খেলা যত শেষের দিকে যাচ্ছিল তত হৃদ্‌স্পন্দন বাড়ছিল দর্শকদের।

শেষ তিন ওভারে শ্রীলঙ্কার জিততে দরকার ছিল ৩৪ রান। মাহেদির ওভারে বড় শট মারতে গিয়ে ৪৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন শনকা। ১২ বলে দরকার ছিল ২৫ রান। শ্রীলঙ্কার শেষ আশা ছিলেন চামিকা করুণারত্নে। ইবাদতের সেই ওভারে শাকিবের থ্রোয়ে করুণারত্নে রানআউট হলেও ১৭ রান এল। শেষ ওভারে দরকার ছিল আট রান। মাত্র দু’বলে সেই রান তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন