হার্দিক না শার্দূল? ভাবনা শুরু
India

T20 World Cup 2021: বিপর্যয়ের মধ্যেই বার্তা, বিশ্বাস হারিয়ো না বন্ধু

দলের পক্ষ থেকে কখনও রোহিত শর্মা, কখনও বিরাট কোহালি, কখনও হার্দিক নিজে বলে যাচ্ছেন, প্রতিযোগিতায় কোনও একটা সময়ে বল হাতে দেখা যাবে তাঁকে।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৪৮
Share:

ধাক্কা: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচের হার সামলে রোহিত, বিরাটদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। ছবি: টুইটার।

হার্দিক পাণ্ড্যর কাঁধের চোটের স্ক্যান রিপোর্টে উদ্বেগের কিছু নেই বলে সোমবার রাতের দিকে জানতে পারল ভারতীয় দল। রবিবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চোট পাওয়ার পরে ফিল্ডিং করতেও নামেননি হার্দিক। আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে।

Advertisement

মেডিক্যাল রিপোর্ট ঠিকঠাক থাকলেও হার্দিককে নিয়ে আর একটি স্ক্যান রিপোর্ট রয়েছে। তা ভারতীয় ক্রিকেট জনতার। যা সন্তোষজনক তো নয়-ই, বরং উত্তরোত্তর ক্ষোভ বাড়ছে। দলের পক্ষ থেকে কখনও রোহিত শর্মা, কখনও বিরাট কোহালি, কখনও হার্দিক নিজে বলে যাচ্ছেন, প্রতিযোগিতায় কোনও একটা সময়ে বল হাতে দেখা যাবে তাঁকে। শুনে পাল্টা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে, এটা বিশ্বকাপ হচ্ছে নাকি পাড়ার ১৫ অগস্টের টুর্নামেন্ট? টিমের এক নম্বর অলরাউন্ডারের ফিটনেস নিয়ে এমন আপসমূলক নীতি নেওয়া হবে কেন?

পাকিস্তানের কাছে বিরাট কোহালিরা দশ উইকেটে পর্যুদস্ত হওয়ার পরের দিন, আমিরশাহিতে ফোন করে মনে হল, ভারতীয় দলের অন্দরমহলে একাংশের মধ্যে অন্তত শুভবুদ্ধির উদয় ঘটতে শুরু করেছে। মরুভূমিতে এই মুহূর্তে হার্দিক যে মরীচিকা, তা বোধ হয় এঁরা ধরতে পারছেন। দূর থেকে দেখে শুধু মনেই হবে, ওই তো জল পাওয়া যাবে। আসলে তার অস্তিত্ব নেই। বিকল্প হিসেবে তাই শার্দূল ঠাকুরের কথা ভাবা শুরু হয়েছে।

Advertisement

অস্ট্রেলিয়া থেকে ইংল্যান্ড ঘুরে আইপিএলে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস। হালফিলে সর্বত্র সফল হয়েছেন শার্দূল। স্যর রবীন্দ্র জাডেজার মতো ক্রিকেট ভক্তরা নতুন নামই দিয়ে দিয়েছে— ‘লর্ড শার্দূল’। সব চেয়ে বড় কথা, হার্দিক শুধু ব্যাটার হিসেবে খেলায় বোলিংয়ের উপরে চাপ পড়ে যাচ্ছে। এক জন বোলার কম পাচ্ছেন কোহালিরা। পাকিস্তান সেই ফায়দা পুরোপুরি তুলেছে। এর পরে ৩১ অক্টোবর সামনে নিউজ়িল্যান্ড। মরণ-বাঁচন ম্যাচ। সে দিন ভুল করলে বিশ্বকাপ অভিযান কাঁটায় ভরে উঠবে। তাই কারও কারও পরামর্শ, হার্দিক বন্ধন এ বার ত্যাগ করো।

পাশাপাশি, পাকিস্তানের কাছে দশ উইকেটে হারের ময়নাতদন্তও হয়েছে কোহালিদের দলে। অধিনায়ক, কোচেরা বলেছেন, আতঙ্কিত-উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই। বলেছেন, পাকিস্তান সব বিভাগে টেক্কা দিয়েই হারিয়েছে, সততার সঙ্গে নিজেদের খুঁতগুলো স্বীকার করো। যেমন, বোলিং ঠিক হয়নি। রাতের দিকে শিশিরের প্রভাব থাকবে, এ আর নতুন কী? আমিরশাহিতে আইপিএলের সময় থেকেই তো একই জিনিস দেখা যাচ্ছে। কারও কারও মত, রবিবারের ম্যাচে শিশিরের খুব উৎপাত ছিল না। বোলারদের নিয়ন্ত্রণহীন প্রদর্শনই হারের জন্য দায়ী।

তবু দল পরিচালন সমিতি ঠিক করেছে, মঙ্গলবার থেকে ভেজা বলে বোলারদের অনুশীলন করানো হবে। ক্যাচিং অনুশীলনেও বালতিতে চুবিয়ে ভিজে বল ব্যবহার করা হবে। যাতে ম্যাচে গিয়ে টসে হেরে পরে বোলিং করতে হলে প্রশ্নপত্র সিলেবাসের বাইরে বলে মনে না হয়। আগেও বুমরা, শামিরা এ ভাবে অনুশীলন করেছেন। নিউজ়িল্যান্ড ম্যাচের মাঝে চার দিন সময়। ধাক্কা খেয়ে প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রস্তুতির উপরে জোর দিতে চায় ভারতীয় দল। বরাবরের সেই শাস্ত্রী-কোহালি মন্ত্র— প্রক্রিয়ার উপরে জোর দাও, ফল আপনিই আসবে।

ব্যাটিংয়ে কি রদবদল দরকার? আরও ডাকাবুকো মনোভাব আনার জন্য ইশান কিশানের মতো তরুণ রক্তকে কি নিয়ে আসা দরকার? যা ইঙ্গিত, এখনই সে রকম কিছু ভাবা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে, প্রথম তিন ব্যাটারের নাম রোহিত শর্মা, কে এল রাহুল, বিরাট কোহালি। এঁরা যদি না পারেন, কারা পারবেন? তা ছাড়া দলের মধ্যে মনোভাব হচ্ছে, একটা হারেই ঢালাও পরিবর্তনের ডাক দেব কেন? নিজেদের উপরে তৈরি এতদিনকার বিশ্বাসের তা হলে কী মূল্য? বরং অতীতে বহু বার দেশে-বিদেশে শুরুতে পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্ত ভাবে ফিরে এসে সিরিজ় জেতার উদাহরণ রয়েছে। সেগুলোকে মনের মধ্যে বাজিয়ে ফিরে আসার বারুদ তৈরি করো।

এর মধ্যেই উঠছে সঠিক প্রথম একাদশ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা এবং হার্দিক পাণ্ড্য নিয়ে তর্ক। দলের মধ্যে তাঁর প্রতি সমর্থনের অভাব নেই। মেন্টর মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বিশেষ স্নেহভাজন। নেপথ্যে জাতীয় নির্বাচকদের প্রবল সমর্থন যে রয়েছে, তা আন্দাজ করতে ফেলু মিত্তির হওয়ার দরকার পড়ে না। অধিনায়ক বিরাট কোহালি পাকিস্তান ম্যাচের আগে বলে গেলেন, শুধু ব্যাটার হিসেবেই ছ’নম্বরে খেলার যোগ্য হার্দিক। অস্ট্রেলিয়াতে খেলে জিতিয়েছিলেন। অধিনায়ককে মনে করিয়ে দেওয়া দরকার, সেই অস্ট্রেলিয়া সফর ছিল গত বছরের শেষে। তার পরে বুর্জ খলিফায় অনেক রং পরিবর্তনই দেখা গিয়েছে। এই হার্দিক এ বারের আইপিএলে একটি মাত্র ম্যাচ ছাড়া ব্যাট হাতে কিছুই করতে পারেননি। রাতারাতি দারুণ উন্নতি ঘটিয়ে তিনি ভারতীয় ক্রিকেট অনুরাগীদের আরব্য রজনী উপহার দেবেন, কেউ খুব একটা আশা করছে না!

দেখেশুনে অনেকের ইংল্যান্ডে ২০১৯ বিশ্বকাপের বিজয় শঙ্করকে মনে পড়ে যাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে অম্বাতি রায়ডুকে বাদ দিয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল। যেন বিলেতের জল-আবহাওয়ায় বিজয় শঙ্কর হয়ে উঠবেন গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ। শেষ পর্যন্ত বিজয়ের হাত ধরে বিজয় তো আসেইনি, উল্টে চার নম্বরের কাঁটায় বিদ্ধ হতে হতে সেমিফাইনালে গিয়ে পতন! বিজয় নিজেও চোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছিলেন।

দলের মধ্যে কেউ কেউ সেই ঐতিহাসিক ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে নারাজ। তাই স্লোগান উঠে গিয়েছে, ‘লর্ড শার্দূল লাও’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন