হেডিংলে টেস্টের আগে সাংবাদিক বৈঠকে শুভমন গিল। ছবি: রয়টার্স।
রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি না থাকলেও তাঁদের চিন্তা নেই বলে জানিয়ে দিলেন শুভমন গিল। উল্টে দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার না থাকায় তাঁদের জেতার তাগিদ আরও বেশি থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হিসাবে শুক্রবার প্রথম বার খেলতে নামবেন শুভমন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর পরিকল্পনা তৈরি। জয় দিয়ে সিরিজ় শুরু করতে চান শুভমন।
খেলার আগের দিন সাংবাদিক বৈঠকে স্বভাবতই রোহিত, কোহলির না থাকা নিয়ে প্রশ্নের সামনে পড়তে হয় শুভমনকে। তিনি আগেই থেকেই আন্দাজ করেছিলেন। তাই জবাব দিতে বেশি ভাবতে হয়নি তাঁকে। শুভমন জানিয়েছেন, রোহিত, কোহলির শিক্ষা ও পরামর্শ কাজে লাগাতে চান। ভারত অধিনায়ক বলেন, “আইপিএলের সময় দু’জনের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওরা ওদের ইংল্যান্ড সফরের অভিজ্ঞতা আমাকে বলেছে। এখানে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হয় সেটা জানিয়েছে। ওদের শিক্ষা এখানে কাজে লাগাতে চাই।”
পাশাপাশি শুভমন এ-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে রোহিত, কোহলি না থাকলেও তাঁদের জিততে সমস্যা হবে না। শুভমন বলেন, “গত বছর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যে সিরিজ় খেলেছিলাম সেটা আমার খেলা অন্যতম সেরা সিরিজ়। সেখানেও আমাদের প্রথম একাদশের অনেক ক্রিকেটার ছিল না। কিন্তু তার পরেও ইংল্যান্ডকে ৪-১ হারিয়েছিলাম। সেটা থেকেই বোঝা যায় আমাদের ক্রিকেটারদের মান কত ভাল। গত বারের ফল এ বারও করে দেখাতে চাই। রোহিত, কোহলিকে ছাড়াই আমরা জিতব।”
শুভমন ভারতের টেস্ট ইতিহাসে ৩৭তম অধিনায়ক। তিনি পঞ্চম কনিষ্ঠতম অধিনায়ক যিনি লাল বলের ক্রিকেটে দেশকে নেতৃত্ব দেবেন। নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে মুখিয়ে রয়েছেন শুভমন। তিনি বলেন, “এর থেকে বড় সম্মান একজন ক্রিকেটার আর কী পেতে পারে। টেস্টে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ ক’জন পায়। আমি খুব উত্তেজিত। যে দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে তার মান রাখতে চাই।”
গত মাসে আইপিএল জেতার পর কোহলি জানিয়েছিলেন, টেস্ট সিরিজ় জেতার গুরুত্ব আইপিএল জেতার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। শুভমনও কি সেটাই মনে করেন? কোহলির সুরেই কথা বলেছেন ভারতের নতুন টেস্ট অধিনায়ক। তিনি বলেন, “একদম। আইপিএল জেতার থেকে টেস্ট সিরিজ় জেতা আমার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
কেন এই কথা তিনি বলেছেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন শুভমন। তিনি বলেন, “অধিনায়ক হিসাবে ইংল্যান্ড সফরে আসার সুযোগ ক’বার পাওয়া যায়। দু’বার। খুব বেশি তিন বার। কিন্তু আইপিএল প্রতি বছর হয়। প্রতি বছর সেই ট্রফি জেতার সুযোগ পাওয়া যায়। তাই আমার মতে, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউ জ়িল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ় জেতা আইপিএল জেতার থেকে অনেক বেশি গর্বের।”
ভারতের হয়ে ৩২টা টেস্টে ১৮৯৩ রান করেছেন শুভমন। ছ’টা শতরান রয়েছে। কিন্তু সেনা (দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউ জ়িল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া) দেশে তাঁর রেকর্ড ভাল নয়। ১১টা টেস্টে মাত্র ২৫.৭০ গড়ে রান করেছেন। মাত্র দুটো অর্ধশতরান করতে পেরেছেন। ইংল্যান্ডে তিনটে টেস্টে ১৪.৬৬ গড়ে মাত্র ৮৮ রান করেছেন তিনি। তাই অধিনায়কত্বের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও এই সিরিজ় তাঁর সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ।
এই চ্যালেঞ্জে তিনি সহ-অধিনায়ক হিসাবে ঋষভ পন্থকে পেয়েছেন। দু’জনের মানসিকতা একই রকম বলে জানিয়েছেন শুভমন। তিনি বলেন, “আমরা একসঙ্গে অনেক খেলেছি। আমাদের মানসিকতা ও লক্ষ্য একই রকম। আমরা এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে চাই যেখানে সকলে নিজেদের সুরক্ষিত মনে করবে। আমার মনে হয় যখন ক্রিকেটারদের জায়গা হারানোর ভয় থাকে না, তখন তাদের কাছ থেকে সেরাটা পাওয়া যায়।”
গত কয়েক বছরে টেস্টে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলছে ইংল্যান্ড। তাদের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামের নামে এই ধরনের ক্রিকেটকে ‘বাজ়বল’ বলা হয়। তার জবাব কি ভারতের কাছে আছে? শুভমন বলেন, “আমার মনে হয় সেই জবাব পেতে আপনাদের অগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। গত পাঁচ-দশ বছর ধরে আমাদের সিনিয়র ক্রিকেটারেরা একটা নীল-নকসা তৈরি করেছে। সেটা মাথায় রেখেই আমরা খেলব। আমাদের পরিকল্পনা তৈরি। এখান থেকে সিরিজ় জিতে ফিরতে চাই।”
হেডিংলেতে ভারতের একাদশ কেমন হবে সেই বিষয়ে এখনও ধোঁয়াশা রেখে দিয়েছেন শুভমন। তিনি জানিয়েছেন, ছ’জন বিশেষজ্ঞ ব্যাটার খেলাতে পারেন। ক’জন পেসার খেলবেন, সেই ইঙ্গিতও দেননি তিনি। অধিনায়ক বলেন, “টেস্ট জিততে হলে প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট তুলতে হবে। সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। হতে পারে আমরা ছ’জন ব্যাটার খেলাতে পারি। এক বোলিং অলরাউন্ডারের পাশাপাশি তিন থেকে চার জন পেসার খেলাতে পারি। তবে সবটাই ম্যাচের আগে পিচ ও পরিবেশ দেখে ঠিক করব।”