Yorker

IPL 2022: স্টাম্প থেকে বহু দূরে বল, ওয়াইড ইয়র্কারই কি এখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সেরা অস্ত্র

ইয়র্কারের ক্ষেত্রে ঠিক মতো জায়গায় বল না রাখতে পারলে ফুলটসও হয়ে যেতে পারে। সেই বল সহজেই মাঠের বাইরে পাঠাতে পারেন ব্যাটাররা। ওয়াইড ইয়র্কার ফুলটস হয়ে গেলেও ব্যাটারদের পক্ষে খেলা কঠিন হয়। ব্যাটারকে আগে থেকে তৈরি হয়ে বলের লাইন বুঝে ঠিক জায়গায় পৌঁছতে হয় সেই বল খেলার জন্য। না হলে বলের নাগাল ঠিক মতো পাবেন না তিনি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২২ ১৯:৪৭
Share:

ওয়াইড ইয়র্কার। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

একের পর এক ওয়াইড করে যাচ্ছেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ এবং ওবেড ম্যাকয়। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে ১৯তম ওভারে বল করতে এসে একটি ওয়াইড দিলেন প্রসিদ্ধ। তার আগে দু’টি বল ওয়াইড হতে হতে হয়নি। শেল্ডন জ্যাকসন কোনও রকমে ব্যাট ছুঁইয়ে খুচরো রান নিলেন। দরকার ছিল বাউন্ডারির। সেটা আটকে দিলেন কৃষ্ণ। কিন্তু বলগুলি তো ওয়াইডও হতে পারত। এমন বল করার ঝুঁকি কেন নিচ্ছেন বোলাররা?

ব্যাটারদের পরাস্ত করতে এক সময় বেশির ভাগ পেসারের অস্ত্র ছিল ইয়র্কার। প্রচণ্ড গতিতে আসা বল আছড়ে পড়ছে পায়ের সামনে। ব্যাটার সেই বলের সামনে থেকে পা সরিয়ে ব্যাট নামাতে নামাতে ছিটকে যাচ্ছে স্টাম্প। কখনও আবার পা সরানোর সময় না পেয়ে এলবিডব্লিউ হচ্ছেন ব্যাটার। কখনও ইয়র্কার সামলাতে গিয়ে চোট পাচ্ছেন কেউ। এমন দৃশ্যই ছিল স্বাভাবিক। বহু বছর ধরে ক্রিকেটে ইয়র্কারের ব্যবহার হচ্ছে। সেই বলকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন লাসিথ মালিঙ্গা, মিচেল স্টার্ক, যশপ্রীত বুমরা, লকি ফার্গুসন, ট্রেন্ট বোল্ট, শাহিন আফ্রিদি, ভুবনেশ্বর কুমার, কাগিসো রাবাডারা।

Advertisement

কিন্তু টি-টোয়েন্টি যুগে পেসারদের এই অস্ত্রের উত্তর বার করে ফেলেছেন ব্যাটাররা। এখনকার ব্যাট আধুনিক হয়েছে। শুধু ব্যাটের মাঝে নয়, অন্য জায়গায় লাগলেও বল বাউন্ডারি পৌঁছে যাচ্ছে। স্টাম্প থেকে সরে গিয়ে খেলছেন ব্যাটাররা। সরে গিয়ে খেলা সেই বল কখনও বাউন্ডারিতে যাচ্ছে, কখনও আবার ব্যাটাররা ব্লক করে দিচ্ছেন। ব্যাটাররা ইয়র্কার অস্ত্র ভোঁতা করে দিতেই পেসাররা নতুন অস্ত্র আবিষ্কার করেছেন সাদা বলের ক্রিকেটের জন্য। ওয়াইড ইয়র্কার।

ইয়র্কার লেংথেই করা হচ্ছে এই বলগুলি কিন্তু স্টাম্প থেকে দূরে রাখা হচ্ছে। বল করা হচ্ছে পঞ্চম থেকে সপ্তম স্টাম্পে। এই বল করার একটা বড় সুবিধা হচ্ছে ব্যাটার বুঝতে পারছেন না বলটি খেলবেন নাকি খেলবেন না। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ডট বল খুবই মূল্যবান। ওয়াইড ইয়র্কার করলে বোলারদের কাছে সুযোগ থাকে ডট বল করার। যদি কোনও ব্যাটার পৌঁছেও যান বলের কাছে তবু ঠিক মতো না লাগলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

Advertisement

ইয়র্কারের ক্ষেত্রে ঠিক মতো জায়গায় বল না রাখতে পারলে ফুলটসও হয়ে যেতে পারে। সেই বল সহজেই মাঠের বাইরে পাঠাতে পারেন ব্যাটাররা। ওয়াইড ইয়র্কার ফুলটস হয়ে গেলেও ব্যাটারদের পক্ষে খেলা কঠিন হয়। ব্যাটারকে আগে থেকে তৈরি হয়ে বলের লাইন বুঝে ঠিক জায়গায় পৌঁছতে হয় সেই বল খেলার জন্য। না হলে বলের নাগাল ঠিক মতো পাবেন না তিনি।

তবে ওয়াইড ইয়র্কার করতে গিয়ে অনেক বলই ওয়াইড হয়ে যায়। সেই জন্য প্রয়োজন অনুশীলনের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই ধরনের বল করার অভ্যেস করতে হয় বোলারদের। শোনা যায় কোনও বোলার স্টাম্পের সামনে বুট রেখে অভ্যেস করেন, কেউ রাখেন কয়েন। এক দিনে তো আর ওয়াসিম আক্রম, ইউনিস খান তৈরি করা যায় না। তাঁরা বলটাকে কথা বলাতে পারতেন। ইয়র্কার লেংথে বল রেখে তাঁরা সুইংও করাতে পারতেন।

আধুনিক ক্রিকেট মানেই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। ক্রিকেট অনেক বেশি সুবিধা করে দিচ্ছে ব্যাটারদের, এমন অবস্থায় বোলারদের নতুন কিছু খুঁজে বার করতেই হবে। পেসার অনেক ধরনের ইয়র্কার করার চেষ্টা করছেন। কখনও ওয়াইড ইয়র্কার, কখনও স্লোয়ার ইয়র্কার। নির্ধারিত ওভারের খেলায় আরও বেশি করে প্রয়োজন এই ধরনের বলের। আইপিএলে সদ্য অভিষেক ঘটানো কুলদীপ সেন হোক বা জাতীয় দলে খেলা নবদীপ সাইনি, শেষ বেলায় ম্যাচ জেতার জন্য ওয়াইড ইয়র্কারের উপর ভরসা রাখছেন তাঁরা। রাজস্থান রয়্যালসকে ম্যাচ জেতানো কুলদীপের প্রশংসা করে সঞ্জু স্যামসন বলেন, “আমি অনুশীলনে ওকে ওয়াইড ইয়র্কার করতে দেখেছি, তাই ভরসা ছিল ও পারবে।”

তরুণ বোলাররাও এই ধরনের বোলিংয়ে দক্ষ হয়ে উঠছেন। পাল্টে যাচ্ছে খেলার ধরন। মাঠ ছোট হচ্ছে, ব্যাট আধুনিক হচ্ছে আর বোলাররা নতুন নতুন অস্ত্র বার করছেন তাঁদের ফেরানোর জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন