Pakistan Cricketer

‘ধর্মীয় কারণে’ ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া পাকিস্তানের ১৮ বছরের আয়েশা নাসিম আবার মুখ খুললেন

১৫ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন। দেশের হয়ে চারটি এক দিনের ম্যাচ এবং ৩০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। আগ্রাসী ব্যাটার হিসাবে পরিচিত সেই ক্রিকেটার অবসর নিয়েছেন কিছু দিন আগে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৩ ১৭:৩৮
Share:

আয়েশা নাসিম। ছবি: টুইটার।

বয়স সবে ১৮। চোখে ছিল দেশের হয়ে দীর্ঘ দিন খেলার স্বপ্ন। কিন্তু সমাজের চাপে এই বয়সেই সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে বাধ্য হয়েছেন পাকিস্তানের আয়েশা নাসিম। সেই অবসর নিয়ে আবার মুখ খুলেছেন তিনি। জানিয়েছেন ‘ধর্মীয় কারণে’ এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

Advertisement

পাকিস্তানের মহিলা ক্রিকেটার আয়েশাকে বিস্ময় বালিকা বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ২০২০ সালে ১৫ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। দেশের হয়ে খেলেছেন চারটি এক দিনের ম্যাচ এবং ৩০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। কিন্তু কিছু দিন আগে ১৮ বছর বয়সেই ক্রিকেটজীবনে ইতি টেনেছেন তিনি। আয়েশা জানিয়েছেন, ‘ধর্মীয় কারণে’ অবসরের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাঁকে।

অ্যাবোটাবাদ এলাকার বাগান নামে এক গ্রামের জন্ম আয়েশার। সেখানকার প্রায় সব বাসিন্দাই বেশ রক্ষণশীল মানসিকতার। মেয়েদের খেলাধুলা করা পছন্দ নয় সেখানকার বাসিন্দাদের। খুব প্রয়োজন ছাড়া মেয়েদের বাড়ির বাইরে পা-ও দিতে দেওয়া হয় না। এমন রক্ষণশীল গ্রামে জন্ম নেওয়া আয়েশার ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পথ ছিল অত্যন্ত কঠিন। ছোটবেলায় খেলার কোনও সঙ্গী পেতেন না তিনি। তবু ক্রিকেটের প্রতি প্রবল আগ্রহ তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিল জাতীয় দল পর্যন্ত। আয়েশা বলেছেন, ‘‘আমার শহরে মেয়েদের বাড়ির বাইরে পা রাখার অনুমতিও দেওয়া হয় না। তাই একাই খেলতে হত আমাকে।’’

Advertisement

পরে আয়েশার পরিবার করাচিতে চলে আসে। সেখানে ভাইদের সঙ্গে খেলতেন। জাতীয় দলে অভিষেকের পর আয়েশা আবার অ্যাবোটাবাদের বাড়িতে চলে যান। করাচিতে থাকার সুযোগ থাকলেও ফেরেননি তরুণ ব্যাটার। খেলার জন্য পরিচিতদের কাছ থেকে কখনও উৎসাহ পাননি। বরং শুনতে হয়েছে কটাক্ষ। আয়েশা বলেছেন, ‘‘খেলার জন্য সকলের কাছে আমাকে অনেক কটাক্ষ শুনতে হয়েছে। সকলে সব সময় আমাকে নিরুৎসাহিত করেছে। বলা হত, আমার জন্য তাঁদের মেয়েদের উপর খারাপ প্রভাব পড়ছে।’’ তা হলে কেন করাচিতে ফিরে এলেন না? আয়েশা বলেছেন, ‘‘কী করতাম করাচিতে ফিরে গিয়ে? আমার অনেক বন্ধু আছে, যারা বেশ প্রতিভাবান। কিন্তু খেলার সুযোগই পেল না কেউ। আমি আমার পরিবারের সমর্থন পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আমার সাফল্য অন্যদের উৎসাহিত করবে। তাঁরাও নিজেদের মেয়েদের খেলতে পাঠাবেন। মেয়েগুলোর শুধু পরিবারের একটু সমর্থন এবং ভরসা দরকার ছিল।’’

আয়েশার হঠাৎ অবসরের সিদ্ধান্তে হতবাক পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারাও। বোর্ডের পক্ষ থেকে আয়েশার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হচ্ছে। অবসরের সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বোঝানো হতে পারে ১৮ বছরের আগ্রাসী ব্যাটারকে। এক কর্তা বলেছেন, ‘‘আয়েশা শুধু নিজের স্বপ্নকেই শেষ করল না। পাকিস্তানের অনেক মেয়ের স্বপ্ন নষ্ট করে দিল। যারা ওকে দেখে ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিল, তাদের হতাশ করবে ওর এই সিদ্ধান্ত।’’

পাকিস্তানের হয়ে চারটি এক দিনের ম্যাচে ৩৩ রান এবং ৩০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৩৬৯ রান রয়েছে আয়েশার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর সর্বোচ্চ রান ৪৫। মহিলাদের গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে ২৫ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন ১৮ বছরের ব্যাটার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন