Yashasvi Jaiswal

তাঁবুতে থাকা, ফুচকা বিক্রি করে দিন গুজরান, তবু ক্রিকেট-স্বপ্ন তাড়া করে গিয়েছেন যশস্বী

ক্রিকেটে যশস্বীর সুযোগ পাওয়াটাই রূপকথার মতো। ময়দানেরই এক মাঠ কর্মীর সঙ্গে পরিচয় হয়ে যায়। তাঁর সঙ্গে তাঁবুতেই রাত কাটাতেন। সেখানে বিদ্যুৎ ছিল না, খাওয়ার জল ছিল না। শুধু ছিল ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৩ ০১:৫০
Share:

ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখা কখনওই ছাড়েননি যশস্বী জয়সওয়াল। ছবি: সংগৃহীত এবং পিটিআই।

৬২ বলে ১২৪ রান। রবিবার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে শতরান যখন করেছিলেন, বুঝতে পারেননি বল বাউন্ডারি লাইন পেরিয়ে গিয়েছে। ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিতে এসে সে কথা নিজেই জানালেন যশস্বী জয়সওয়াল। তারপর রাজস্থান রয়্যালসের ব্যাটার বললেন, ‘‘যখন বুঝতে পারলাম, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানালাম আমাকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।’’

Advertisement

ক্রিকেটে যশস্বীর সুযোগ পাওয়াটাই রূপকথার মতো। উত্তরপ্রদেশের ভাদোহি জেলার সুরিয়া এলাকায় জন্ম যশস্বীর। বাবা ভূপেন্দ্র রং বিক্রি করতেন। বেসরকারি স্কুলে পড়াতেন মা কাঞ্চন। চার সন্তানের লালন-পালনের পর যশস্বীকে ক্রিকেটার বানানোর খরচ জোগানো অসম্ভব হয়ে উঠছিল। কিন্তু নাছোড় তাঁকে মুম্বইয়ে নিয়ে আসার জন্য বাবাকে বুঝিয়েছিলেন। দশ বছর বয়সে মুম্বই চলে আসেন তিনি। চোখে স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হওয়ার। পেট চালাতে প্রথমে দোকানে কাজ নেন। কিন্তু মাথায় তখন শুধুই ক্রিকেট। প্রতি দিন অনর্গল অনুশীলন। প্র্যাকটিসের পিছনে এতটাই সময় দিতেন যে, দোকানের জন্য আর সময় ছিল না। কাজ চলে যায় কিছু দিনের মধ্যেই।

অনুশীলন বন্ধ থাকেনি। কিন্তু স্বপ্নপূরণের জন্য টাকাও তো দরকার। মুম্বইয়ের আদাজ ময়দানে গোলগাপ্পা বেচতে শুরু করেন। আর কারও কাছে কৈফিয়ৎ দেওয়ার নেই। কাজের বাঁধাধরা নিয়ম, সময় নেই। জীবনের স্বাধীনতা পাওয়ার আনন্দে ক্রিকেটের সাধনা বেড়ে যায় যশস্বীর। ময়দানেরই এক মাঠ কর্মীর সঙ্গে পরিচয় হয়ে যায়। তাঁর বদান্যতায় তাঁবুতেই রাত কাটাতেন। সেখানে বিদ্যুৎ ছিল না, খাওয়ার জল ছিল না। শুধু ছিল ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন।

Advertisement

রোহিত শর্মাদের বোলিংকে ছিন্নভিন্ন করা যশস্বী হঠাৎই নজরে পড়ে যান জ্বালা সিংহের। ঘুরে যায় জীবনের গতিপথ। তাঁকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন জ্বালা। হবু স্ত্রী বন্দনাকে বলে দেন, এই ছেলেটাকে কিন্তু নিজের ছেলের মতোই গড়ে তুলতে হবে। বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। সেই শুরু। আর ফিরে তাকাতে হয়নি যশস্বীকে। জ্বালাকে যশস্বী শুরুতে শুধু বলেছিলেন, ‘‘স্যার, আমি আর কোনও কিছু পারি না। শুধু ক্রিকেট খেলতে পারি। আমি আপনার সব কাজ করে দেব। যা বলবেন সব করব। ঘর পরিষ্কার করব, জুতো পালিশও করে দেব। শুধু ক্রিকেট খেলতে দেবেন।’’

মুম্বইয়ের সান্তাক্রুজে নিজের অ্যাকাডেমি রয়েছে জ্বালার। সেখানেই এর পর থেকে সাধনা শুরু হয় যশস্বীর। তাঁর চেষ্টা বিফলে যায়নি। ২০১৫ সালে স্কুল ক্রিকেটে তাঁর ৩১৯ রানের ইনিংস এবং ৯৯ রান দিয়ে ১৩ উইকেট জায়গা করে নেয় লিমকা বুক অব রেকর্ডসে। সুযোগ চলে আসে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৬ দলে। ধীরে ধীরে জায়গা করে নেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলেও। এরপর ২০২০ সালে যুব বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার। ১৩৩ গড়ে টুর্নামেন্টে ৪০০ রান। সেমিফাইনালে ম্যাচ-জেতানো সেঞ্চুরি ও চারটি হাফ-সেঞ্চুরির অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা।

এই ধারাবাহিকতাই ধরে রাখতে চান যশস্বী। ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিয়ে তাই মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দর্শনে বলে যান, ‘‘শুধু কঠোর পরিশ্রম করে যে তে চাই। পদ্ধতিটাই আসল। ফল আপনিই আসবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন