Virat Kohli's 35th Birthday

৩৫-এ কোথায় ছিলেন সচিন, কোথায় বিরাট? তেন্ডুলকরকে ছাপিয়ে গিয়ে কোহলিই এখন ক্রিকেটভক্তের নতুন ‘ঈশ্বর’!

রবিবার ৩৫ বছরে পা দেবেন বিরাট কোহলি। যাঁর সঙ্গে তাঁর তুলনা অহরহ চলে আসে, সেই সচিন তেন্ডুলকর ৩৫-এ কত দূর গিয়েছিলেন? বিরাট কি ছাপিয়ে গেলেন সচিনকে?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৪০
Share:

—ফাইল চিত্র।

ক্রিকেট মাঠে ‘সচিন, সচিন’ চিৎকার বেশ কয়েক বছর ধরেই পাল্টে গিয়েছে ‘বিরাট, বিরাট’এ। আগে রাহুল দ্রাবিড় আউট হলে মুহূর্তের নিস্তব্ধতা বদলে যেত এক পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চিকে ব্যাট হাতে মাঠে নামতে দেখলে। একই দৃশ্য এখন দেখা যায় রোহিত শর্মা বা শুভমন গিল আউট হলে। সারা মাঠ গর্জে ওঠে বিরাট-ধ্বনিতে। সেই বিরাট কোহলি রবিবার পা রাখলেন ৩৫ বছরে। আর এই দিনই তিনি ইডেনে খেলবেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। বিরাটের এই জন্মদিনে গোটা বিশ্ব একটাই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য ছটফট করছে। ক্রিকেটের নতুন ঈশ্বর কি ছাপিয়ে গিয়েছেন আগের ঈশ্বরকে?

Advertisement

একাধিক প্রাক্তন ক্রিকেটারের মতে, এ বারের বিশ্বকাপেই সচিনের এক দিনের ক্রিকেটে করা ৪৯টি শতরানের রেকর্ড ভেঙে দেবেন বিরাট। সুনীল গাওস্কর তো বলেছিলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ইডেন গার্ডেন্সে নিজের ৫০তম শতরান করবে বিরাট। কারণ, সে দিনই বিরাটের জন্মদিন। তাই সচিনকে টপকে যাওয়ার জন্য এর থেকে ভাল মঞ্চ হতে পারে না। ইডেনের দর্শকের সামনে এই শতরানের আনন্দও অনেক বেশি।” বিরাটের এখন এক দিনের ক্রিকেটে শতরানের সংখ্যা ৪৮। তাই ইডেনে সচিনকে টপকাতে না পারলেও ছোঁয়ার সুযোগ রয়েছে বিরাটের কাছে।

৩৫ বছর বয়সে এক দিনের ক্রিকেটে সচিন করেছিলেন ১৬,৩৬১ রান। বিরাট করেছেন ১৩,৫২৫ রান। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, সচিন তত দিনে ৪০৭টি এক দিনের ইনিংস খেলে ফেলেছিলেন। সেখানে বিরাট খেলেছেন ২৭৫টি। তাই সচিনের থেকে রান কম হলেও গড় অনেকটাই বেশি। ৩৫-এর সচিনের গড় ছিল ৪৪.৩৩। বিরাটের সেখানে ৫৮.০৪। অর্থাৎ, সচিনের সমান ম্যাচ খেললে তাঁকে ছাপিয়ে যেতে পারতেন বিরাট।

Advertisement

এ বারের বিশ্বকাপে দুরন্ত ফর্মে রয়েছেন বিরাট কোহলি। —ফাইল চিত্র।

এক দিনের ক্রিকেটে সচিনের অভিষেক হয়েছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। যে দলটির সঙ্গে ভারতের ক্রিকেট মাঠে যুদ্ধ চিরকালীন। রাজনৈতিক কারণে যা সময়ে-অসময়ে অন্য মাত্রা পেয়ে যায়। ৩৫ বছর বয়সি সচিন সেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলেছেন ৬৪টি এক দিনের ইনিংস। করেছেন ২৩৮১। গড় ৩৯.৬৮। সেই সময় দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ় চালু ছিল। কিন্তু বিরাটের সময় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ খেলা হয় শুধুই বহু দেশযুক্ত প্রতিযোগিতায়। তাই এক দিনের ক্রিকেট পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিরাটের খেলার সুযোগ হয়েছে মাত্র ১৬টি ইনিংস। করেছেন ৬৭৮ রান। গড় ৫২.১৫। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অতগুলি ইনিংস খেলার পরেও সচিনের শতরানের সংখ্যা ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত আটকে ছিল পাঁচে। বিরাট সেখানে ১৬টি ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে শতরান করে ফেলেছেন। উল্লেখ্য, এক দিনের ক্রিকেটে বিরাটের সর্বোচ্চ রানের (১৮৩) ইনিংসটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই।

বলা হয় এক জন ভারতীয় ব্যাটার কত ভাল তা বোঝা যায় অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউ জ়িল্যান্ডের মাটিতে খেললে। এক দিনের ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সচিন খেলেছেন ৩৯টি ইনিংস। করেছেন ১৩৪৮ রান। গড় ৩৭.৪৪। বিরাট সেখানে ৩৫-এর সচিনকে ছাপিয়ে গিয়েছেন বলাই যায়। কারণ সচিনের থেকে ১০টি ইনিংস কম খেলে বিরাট করেছেন ১৩২৭ রান। গড় ৫১.০৩। শতরানের সংখ্যায় বিরাটের থেকে বেশ পিছিয়ে সচিন। ৩৫-এর সচিন অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এক দিনের ক্রিকেটে করেছিলেন মাত্র একটি শতরান। বিরাট করেছেন পাঁচটি।

২০১১ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর বিরাটের কাঁধে সচিন। —ফাইল চিত্র।

ইংল্যান্ডের মাটিতে আবার সচিনের থেকে বেশি ইনিংস খেলেছেন বিরাট। ২৬টি ইনিংস খেলে সচিন সেখানে ১০৫১ রান করেছিলেন। বিরাট ৩৩টি ইনিংসে করেছেন ১৩৪৯ রান। যদিও গড় বিরাটের বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ৩৫টি ইনিংসে সচিন করেছিলেন ১৪১৪ রান। গড় ৪০.৪০। বিরাট ১৮টি ইনিংসে করেছেন ৯৯৩ রান। গড় ৭৬.৩৮। নিউ জ়িল্যান্ডের মাটিতে সচিন ১৯টি ইনিংসে করেছিলেন ৫৭৭ রান। গড় ৩০.৩৬। বিরাট ১৩টি ইনিংসে করেছেন ৫৯৬ রান। গড় ৪৯.৬৬।

এক দিনের ক্রিকেটে সচিনকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দেওয়া বিরাট কি টেস্টেও এগিয়ে গিয়েছেন? এখানেও ম্যাচ সংখ্যায় ৩৫-এর সচিন অনেকটাই এগিয়ে বিরাটের থেকে। সচিন ২৩৮টি ইনিংসে করেছিলেন ১১,৭৮২ রান। বিরাট খেলেছেন ১৮৭টি ইনিংস। করেছেন ৮৬৭৬ রান। সচিনের গড় ৫৫.৩১। বিরাটের গড় ৪৯.২৯। শতরানের সংখ্যাতেও বিরাটের থেকে অনেক এগিয়ে সচিন। মুম্বইকর করেছিলেন ৩৯টি শতরান। দিল্লির বিরাট করেছেন ২৯টি শতরান।

সচিন এবং বিরাট একসঙ্গে পাঁচ বছর খেলেছেন। এক দিনের ক্রিকেটে ১৭টি ম্যাচে তাঁরা একসঙ্গে খেলেছেন। সেই ম্যাচগুলিতে সচিন করেছিলেন ৮৩৫ রান। বিরাট চারটি শতরান-সহ করেছিলেন ১১৫৯ রান। ৩১টি টেস্টে একসঙ্গে খেলেছিলেন তাঁরা। সেখানে সচিন সামান্য এগিয়ে বিরাটের থেকে। সচিন করেছিলেন ১৩৫২ রান। বিরাট করেছিলেন ১৩৪৭ রান। যদিও গড় (৫১.৮০) বেশি বিরাটের। দু’জনেই ওই ৩১টি টেস্টে পাঁচটি করে শতরান করেছিলেন।

বিরাট কখনও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলেননি। সচিন আবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কখনও টি-টোয়েন্টি খেলেননি। যুগের তফাতে অনেক কিছুই পাল্টেছে। সচিনকে সামলাতে হয়েছে গ্লেন ম্যাকগ্রা, ব্রেট লি, ওয়াকার ইউনিস, ওয়াসিম আক্রম, শোয়েব আখতারের মতো পেসারদের। সচিনের লড়াই ছিল আব্দুল কাদির, শেন ওয়ার্ন, মুথাইয়া মুরলীধরনের মতো স্পিনারদের বিরুদ্ধে। বিরাট যে বোলারদের সামলেছেন, তাঁদের কেউই সচিনের সময়কার সেই বোলারদের সমান নন। আবার সচিনের সময় ফিল্ডার সাজানোর নিয়ম আলাদা ছিল। বিরাটের সময় ক্রিকেট অনেক বেশি ব্যাটারদের খেলা। দুই প্রান্ত থেকে এখন দু’টি নতুন বলে খেলা হয়। তাতে সাদা বলের ক্রিকেটে রিভার্স সুইং প্রায় হয় না।

ইডেনে সচিনকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন বিরাট। —ফাইল চিত্র।

সেই কারণেই সচিনের সঙ্গে একই ম্যাচে টেস্ট অভিষেক হওয়া ওয়াকার বলেছিলেন, “ক্রিকেট বদলে গিয়েছে। পিচ এখন অনেক ভাল। এখন ক্রিকেটে এমন অনেক শট খেলা হয়, যা আগে দেখাই যায়নি। তাই সচিনের সঙ্গে বিরাটের তুলনা করাই সম্ভব নয়। আলাদা প্রজন্ম, আলাদা যুগ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এসেছে। তাই দুটো আলাদা যুগের ক্রিকেটারের তুলনা করা সম্ভব নয়।”

তবু তুলনা আসেই। কারণ সচিনকে ক্রিকেট ঈশ্বর বানানো জনতা নতুন আরাধ্য দেবতা হিসাবে বিরাটকে বেছে নিয়েছেন। তাই সচিনের জায়গা বিরাট নিতে পারলেন কি না সেই দিকে নজর থাকেই। আর এখানেই প্রশ্ন আসে বিরাট এবং সচিনের মধ্যে ম্যাচ জেতানো ইনিংস কার বেশি? এই লড়াইয়ে সচিনকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিতে পারেন বিরাট। ৩৫-এর সচিনের খেলা এক দিনের ম্যাচগুলির মধ্যে ভারত জিতেছে ২০৬টিতে (৪১৭টি ম্যাচের মধ্যে)। সেখানে বিরাটের খেলা ২৮৮টি এক দিনের ম্যাচের মধ্যে ভারত জিতেছে ১৭৭টি। জয়ের শতাংশে বিরাট অনেকটাই এগিয়ে। রান তাড়া করতে পছন্দ করেন বিরাট। বড় ম্যাচে বড় ইনিংস খেলতে পারেন। আর তাই বিরাট ‘চেজ় মাস্টার’। সে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৮২ রানের ইনিংস হোক বা এক দিনের বিশ্বকাপে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৯৫ রান। বিরাট ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলতে ভালবাসেন। এ বারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও শতরান এসেছিল পরে ব্যাট করেই। সচিনের বেশির ভাগ বড় ইনিংস প্রথমে ব্যাট করে। যদিও সচিন সমর্থকেরা মনে করিয়ে দেবেন পিঠের ব্যথা নিয়ে শারজাতে তাঁর করা ১৪৩ রানের সেই ইনিংস।

৩৫-এর বিরাট রবিবার ইডেনে নামবেন। বিশ্বকাপের ম্যাচ। সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফর্মে থাকা বিরাট কি সেই ম্যাচে শতরান করবেন? আশায় সমর্থকেরা। সেই সঙ্গে বিরাটের জন্য অদৃশ্য লড়াই থাকবে সচিনের বিরুদ্ধে। কখনও সেটা শতরানের সংখ্যায়, কখনও সেটা রানে। ১২ বছর আগে বিশ্বকাপ জিতে সচিনকে কাঁধে করে মাঠ ঘুরিয়েছিলেন বিরাটেরা। এই বছর আমদাবাদে বিশ্বকাপ জিতে বিরাটকে কি দেখা যাবে সতীর্থদের কাঁধে? এই দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় বিরাট-ভক্তরা, সম্ভবত সচিন-ভক্তরাও।

বিরাট কি পারবেন সচিনকে টপকে যেতে? প্রশ্নটা সহজ, উত্তর কি জানা?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন