চেলসিতে কোচ-ফুটবলার ভাঙন নিয়ে জল্পনা

গুগল-খোঁচায় সাংবাদিককে শায়েস্তা ‘অভিশপ্ত’ মোরিনহোর

জোসে মোরিনহোকে নাকি টিমের কেউ আর পছন্দ করছেন না। টিমে চেলসি ম্যানেজারের অবস্থান নাকি বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপের মতো। টিম এক দিকে। তিনি আর এক দিকে। জোসে মোরিনহোর সঙ্গে নাকি অস্কার, দিয়েগো কোস্তাদের কাজ করার যাবতীয় ইচ্ছে চলে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৪:৪৮
Share:

নানা মেজাজের মোরিনহো। লন্ডনে সাংবাদিক সম্মেলনে। মঙ্গলবার।

জোসে মোরিনহোকে নাকি টিমের কেউ আর পছন্দ করছেন না। টিমে চেলসি ম্যানেজারের অবস্থান নাকি বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপের মতো। টিম এক দিকে। তিনি আর এক দিকে।
জোসে মোরিনহোর সঙ্গে নাকি অস্কার, দিয়েগো কোস্তাদের কাজ করার যাবতীয় ইচ্ছে চলে গিয়েছে। টিমের প্লেয়াররা নাকি নিজেদের মধ্যে একটা জোট তৈরি করেছে। যেখানে অবশ্যই বস্ নেই। চেলসির টিম ডাক্তার ইভা কার্নেইরোর চাকরি যাওয়া যাঁরা মোটেই ভাল ভাবে নিচ্ছেন না। কোচকে হঠিয়ে তাঁরা এখন কার্নেইরোর পাশে।
জোসে মোরিনহোকে এখন প্রচুর কথাও শুনতে হচ্ছে। সহ্য করতে হচ্ছে সাংবাদিকদের চিমটি। যে যে ক্লাবে তাঁর তিনটে মরসুম কেটেছে, সব জায়গাতেই তৃতীয় মরসুমটা দাঁড়িয়েছে অভিশাপ। রিয়াল মাদ্রিদ। চেলসি। ব্রিটিশ সাংবাদিকরা তো মুখরোচক নামই বার করে ফেলেছেন— থার্ড সিজন কার্স! চেলসি কোচ নিতে পারেননি। একে টিমের অবস্থা শোচনীয়, তার মধ্যে এমন অভিশাপের কথা শোনায় এক সাংবাদিকদের সঙ্গে তো লেগেই গেল।
বিলেতের ফুটবলমহল, সাংবাদিককুল বলছে— জোসে মোরিনহো তুমি হয়তো জিনিয়াস। কিন্তু দেখতে খুব কষ্ট লাগলেও তোমার ভুলভ্রান্তিগুলো এখন আমাদের কাছে পরিষ্কার।
জোসে মোরিনহো পাল্টা বলছেন— তাঁর তৃতীয় মরসুমের রেকর্ড নিয়ে কথা বলার আগে একটু পড়াশোনা করে নিলে ভাল হয়! গুগলটা একটু দেখে নিলে ভাল হয়। আর তাঁকে ব্যর্থ বলতে হলে এমন কোনও কোনও কোচকেও বলা উচিত, যারা গত দশ বছরে ক্লাবকে কোনও ট্রফি না দিয়েও দিব্যি আছে!
বাংলায়, মোরিনহো বনাম ব্রিটিশ ফুটবলমহলকে ঘিরে এখন ধুন্ধুমার বিলেতের ফুটবলে।
বিতর্কিত মন্তব্য, অদ্ভুত আচার-আচরণের জন্য চেলসির পর্তুগিজ কোচের যেমন তুমুল জনপ্রিয়তা আছে, তেমন সমালোচকও কম নেই। ঠেস দিয়ে কথা বলাও তাঁর জীবনে নতুন নয়। মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে যা ঘটল, সেটাও যথেষ্ট রসালো। সাংবাদিক সম্মেলনে মোরিনহো ঢোকেনই নতুন হেয়ারস্টাইল নিয়ে। কথাবার্তাও বলতে থাকেন চোখা-চোখা। বলা হচ্ছে, মঙ্গলবারের মোরিনহো-সম্মেলন একটু আলাদা। কারণ মূহূর্তে-মূহূর্তে নিত্য নতুন আবেগের সন্ধান দিয়ে গিয়েছেন সাংবাদিকদের। কখনও হাসছেন, কখনও বেরোচ্ছে তাঁর অতি-পরিচিত ‘ডেথ স্টেয়ার’। মানে, পারলে সামনের জনকে প্রায় ভস্ম করে দেন। কথাবার্তাও হল তেমন। এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলেন, মনে হয় একজন দুর্দান্ত ম্যানেজারের যাবতীয় গুণগুলো এখনও আপনার মধ্যে আছে? বিভিন্ন ক্লাবে আপনার তৃতীয় মরসুম নিয়ে কিন্তু প্রচুর কথা হচ্ছে। অর্থাৎ, চেলসি কোচকে মনে করিয়ে দেওয়া যে রিয়াল মাদ্রিদ ও প্রথম বার চেলসিতে তাঁর প্রথম দু’টো মরসুম দারুণ গেলেও তৃতীয় মরসুমটা অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নানা গণ্ডগোলের পর রিয়াল ছেড়ে দিয়েছিলেন। তৃতীয় মরসুম শেষ হতে না হতেই চেলসিতে রোমান আব্রামোভিচ অপমানজনক ভাবে তাঁকে বরখাস্ত করে দিয়েছিলেন। এটা চেলসিতে তাঁর দ্বিতীয় পর্ব, কিন্তু সেই এক কাহিনি। তৃতীয় বছর এবং আবার অভিশাপের প্রহর।

Advertisement

কিন্তু সলতে-তে আগুন দিতে ওটুকুই যথেষ্ট ছিল। ‘‘ও, থার্ড সিজন? তা পোর্তোয় আমার কোনও তৃতীয় মরসুম ছিল বলে জানি না। ইন্টার মিলানেও না। প্রথম বার চেলসিতে আমার তৃতীয় মরসুমে এফএ কাপ জিতেছিলাম। কার্লিং কাপ জিতেছিলাম। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে উঠেছিলাম। রিয়াল মাদ্রিদে আমার তৃতীয় মরসুমে সুপার কাপ জিতেছি, কোপা দেল রে জিতেছি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে গিয়েছি। তো এগুলো আমার থার্ড সিজন!’’ সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক ফের বলার চেষ্টা করেন যে, তিনি কী তৃতীয় মরসুমের কথাটা কেন তুলেছেন। এ বার চেলসি কোচ তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলে দেন, ‘‘তা হলে গুগল দেখুন। এ সব বোকা বোকা প্রশ্ন না করে। গুগলে ক্লিক করুন, নিজেই খুঁজুন!’’ নাছোড় সাংবাদিক উত্তরে বলেন যে, ‘‘জোসে, তুমি বুঝতে পারছ আমি কী বলতে চাইছি। তাই নয়? তুমি কী ভাবে...’’ এবং আবারও তাঁকে থামিয়ে দেন মোরিনহো। বলে দেন, ‘‘না, তুমি আমাকে তৃতীয় মরসুম নিয়ে জিজ্ঞেস করলে। আমি বললাম, তোমার প্রশ্নটাই বোকা-বোকা। কারণ আমার থার্ড সিজনটা কী, বললাম তো।’’

মুশকিল হল, মোরিনহো যতই সাংবাদিককে পাল্টা গুগল-খোঁচায় থামিয়ে দিন। যতই আর্সেন ওয়েঙ্গারকে অদৃশ্য ভাবে টেনে এনে বলুন যে, ‘‘অনেকে তো পাঁচ-দশ বছর কিছু না জিতেও ভালই আছে। তাদের তো খারাপ সময় আপনারা দেখতে পান না।’’ যতই তাঁর টিম প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন সেটা মনে করিয়ে গর্জন তুলুন, ‘‘আসলে খুব একটা হারি না তো। তাই এখন একটু অদ্ভুত লাগছে!’’ বাস্তব হল, চেলসি কুড়িটা টিমের মধ্যে এখন সতেরোয় এবং মোরিনহোও নিঃসন্দেহে চাপে।

Advertisement

না হলে তেল আভিভ ম্যাকাবির বিরুদ্ধে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের উদ্বোধনী ম্যাচে কেনই বা টিমে প্রচুর বদলের কথা বলবেন? কেনই বা ইঙ্গিত দিয়ে যাবেন যে সিনিয়রদের কাউকে কাউকে বসিয়ে জুনিয়র প্লেয়াররা ঢুকবে টিমে? চাপের এখানেই শেষ নয়। ইংল্যান্ডের এক কাগজ লিখে দিয়েছে, প্লেয়ারদের সঙ্গে মোরিনহোর সম্পর্ক এখন তলানিতে। প্লেয়াররা আর মোরিনহোর সঙ্গে কাজ করতে চান না। চেলসি কোচ যত সময় যাচ্ছে, একা হয়ে পড়ছেন। জোসে মোরিনহোর সময়টা সত্যিই খুব খারাপ যাচ্ছে। নতুন হেয়ারস্টাইলে ভাগ্য পাল্টালে ভাল। নইলে তাঁর বায়োডাটায় ধুরন্ধর ফুটবল-মস্তিষ্ক বিশেষণটা যেমন থাকবে, তেমন এই কলঙ্কটাও বোধহয় সেখানে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে ফেলবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন