শোয়েব সাহস দিয়েছেন, সব ফাঁস করবেন কানেরিয়া

কানেরিয়ার বয়স এখন ৩৯। অনিল দলপতের পরে পাকিস্তানের হয়ে খেলা দ্বিতীয় হিন্দু ক্রিকেটার তিনি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:১৫
Share:

দানিশ কানেরিয়া।—ফাইল চিত্র।

শোয়েব আখতার তাঁকে নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করার পরের দিন মুখ খুললেন দানিশ কানেরিয়াও। পাকিস্তানের লেগস্পিনার এই মুহূর্তে স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে নির্বাসিত। ক্রিকেট সমাজ থেকে কার্যত বহিষ্কৃত তিনি।

Advertisement

তা নিয়েই আবেদন রেখে কানেরিয়া বলেছেন, তাঁর জীবন খুব ভাল অবস্থায় নেই। অনেকের কাছে তিনি গিয়েছেন কিন্তু কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি। কানেরিয়া তাই পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন। তাঁর পাশে দাঁড়ানোর জন্য শোয়েব আখতারের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন তিনি। শোয়েবের অভিযোগ সত্যি বলেও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, পাকিস্তানে অনেকের থেকে সমর্থনও পেয়েছেন। এক টুইটার পোস্টের মাধ্যমে কানেরিয়া আবেদন করেছেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগত ভাবে সকলের কাছে আবেদন করছি, এই ঘটনাকে দয়া করে কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ব্যবহার করবেন না।’’

কানেরিয়া সকলের উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘আমার জীবন খুব ভাল অবস্থায় নেই। পাকিস্তানে এবং সারা বিশ্বে অনেকের কাছে আমি আবেদন করেছি কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি। পাকিস্তানেরই অনেক ক্রিকেটার আমার মতো শাস্তি পেয়েছে, তাদের আবার ক্ষমাও করে দেওয়া হয়েছে,’’ বলেছেন কানেরিয়া। যোগ করছেন, ‘‘এক জন ক্রিকেটার হিসেবে পাকিস্তানের জন্য আমি সর্বস্ব দিয়েছি। আমি তার জন্য গর্বিত। আমার কঠিন সময়ে আশা করছি পাকিস্তানের মানুষ আমার পাশে দাঁড়াবেন।’’

Advertisement

একই সঙ্গে পাক প্রধানমন্ত্রী এবং প্রাক্তন অধিনায়ক ইমরান খানের কাছে আবেদন রেখেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘পাকিস্তানের সব কিংবদন্তি ক্রিকেটার এবং ক্রিকেট প্রশাসনের কাছ থেকে আমার সমর্থন দরকার। এই দুরবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কাছেও সাহায্য প্রার্থনা করছি।’’ সঙ্গে আকুতি, ‘‘দয়া করে আপনারা সকলে এগিয়ে এসে আমাকে সাহায্য করুন।’’

বৃহস্পতিবারেই শোয়েব আখতার একটি ভিডিয়োতে বিস্ফোরক দাবি করেন যে, পাকিস্তান দলে একঘরে করে রাখা হত কানেরিয়াকে। বলেন, অন্য ধর্মের হওয়ায় তাঁর সঙ্গে বসে পাকিস্তানের অনেক ক্রিকেটার খেতে চাইতেন না। এ দিন কানেরিয়া প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘শোয়েব আখতারের ভিডিয়োটি আমি দেখেছি। ব্যক্তিগত ভাবে ওর কাছে কৃতজ্ঞ আমি। বিশ্বকে ও সত্যি কথাটা বলার সাহস দেখিয়েছে।’’ সঙ্গে অবশ্য যোগ করেছেন, ‘‘সমাজে সব সময়ই কিছু লোক থাকে যারা বিরোধিতা করবে। সেটা ছিল। কিন্তু আমি মানুষের ভালবাসাও পেয়েছি। অনেক বড় ক্রিকেটারের সংস্পর্শে এসেছি, যাঁরা খুব সমর্থন করেছেন। সংবাদমাধ্যম, প্রকৃত প্রশাসক এবং পাকিস্তানের নাগরিকদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, যাঁরা আমার ধর্ম না দেখে আমাকে ভালবেসেছেন, সমর্থন করেছেন।’’

কানেরিয়ার বয়স এখন ৩৯। অনিল দলপতের পরে পাকিস্তানের হয়ে খেলা দ্বিতীয় হিন্দু ক্রিকেটার তিনি। ৬১টি টেস্ট খেলে ২৬১ উইকেট, দাগ কাটার মতোই পারফরম্যান্স ছিল। ১৫টি ওয়ান ডে ম্যাচও খেলেন। করাচিতে জন্ম তাঁর এবং পাকিস্তানের হয়ে খেলার সময় লেগস্পিনার হিসেবে বেশ সফলই ছিলেন। বিশেষ করে তাঁর গুগলি ছিল খুবই বিখ্যাত। পাকিস্তানের সব চেয়ে বেশি উইকেটশিকারিদের তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছেন কানেরিয়া। কিংবদন্তি তিন ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনিস এবং ইমরান খানের পরেই।

২০০৪ থেকে ২০১০ কাউন্টি ক্রিকেটে এসেক্সের হয়ে খেলেন তিনি। কাউন্টিতেই তাঁর বিরুদ্ধে গড়াপেটার অভিযোগ ওঠে এবং তদন্তের পরে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড তাঁকে সারা জীবনের জন্য নির্বাসিত করে। শাস্তির বিরুদ্ধে আবেদন করলেও সেই নির্বাসন ওঠেনি। কারা তাঁর সঙ্গে খাবার খেতে চাইতেন না, সেই সব নামও প্রকাশ করে দেবেন বলে জানিয়েছেন কানেরিয়া।

তবে শোয়েব ও কানেরিয়ার অভিযোগ মানতে নারাজ প্রাক্তন পাক অধিনায়ক জাভেদ মিয়াঁদাদ। তাঁর কথায়, ‘‘কানেরিয়া দশ বছর টেস্ট খেলেছে। সেই সময়ে পাকিস্তানে ইমরান তাহিরের মতো লেগস্পিনার ছিল। সুযোগ না পেয়ে যে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যায়। সুযোগ পায় কানেরিয়া। দু’হাজার সালে আমি পাকিস্তানের কোচ ছিলাম। কানেরিয়া যা বলছে, সে রকম কিছু আমার সামনে ঘটেনি।’’ পাক ক্রিকেট বোর্ড এই বিতর্ক থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। পিসিবির মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘আখতার ও কানেরিয়া দু’জনেই অবসরপ্রাপ্ত ক্রিকেটার, এখন বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ নয়। তাই ওরা যা খুশি বলতে পারেন। তা ছাড়া তাঁরা কয়েকজন ক্রিকেটারের ব্যবহার নিয়ে অভিযোগ তুলছেন, গোটা পাকিস্তান ক্রিকেট বা বোর্ডের বিরুদ্ধে কিন্তু নয়।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘ইনজামাম-উল-হক, রশিদ লতিফ, ইউনিস খান, মহম্মদ ইউসুফ পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দিয়েছেন কানেরিয়া খেলার সময়। আখতার বা কানেরিয়া যা বলছেন, তা নিয়ে এঁদের প্রতিক্রিয়াও দেওয়া উচিত। বোর্ডকে কেন এর মধ্যে জড়ানো হবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন