লাল্টু হেমব্রম ও দেবজিৎ ঘোষ।
তেরো বছর আগের ২০ জুলাইয়ের দিনটি হঠাৎ করেই যেন আরও একবার ফিরে এল দেবজিৎ ঘোষের জীবনে! যিনি এই মুহূর্তে ভবানীপুরের কোচ।
তবে সেই দিনটার সঙ্গে ২৬ অগস্ট, ২০১৬-র একটা তফাত রয়েছে। তেরো বছর আগে ফুটবলার দেবজিৎ নিজে ছিলেন প্রবল বিপদে। আর শুক্রবার বারাসত স্টেডিয়ামে কোচ দেবজিৎ নিলেন ত্রাতার ভূমিকা।
এ দিন কলকাতা লিগের ম্যাচ ছিল ভবানীপুর-পিয়ারলেসে। ম্যাচের তখন তিরিশ মিনিট। পিয়ারলেসের লাল্টু হেমব্রম হেড করতে উঠলে তাঁকে আটকাতে এগিয়ে যান ভবানীপুর একাধিক ফুটবলার। সেই সময় সংঘর্ষে লাল্টুর নাক ফেটে যায়। চোট পান মাথাতেও। তাঁকে স্ট্রেচারে করে বাইরে নিয়ে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। এর পর তিনি মাঠে নামার জন্য হাঁটছিলেন। কিন্তু ভবানীপুর রিজার্ভ বেঞ্চের কাছে এসেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন লাল্টু। হাত-পা ছেড়ে দেন। দাঁতে দাঁত লেগে যায়। বিপক্ষ দলের কোচ হওয়া সত্ত্বেও ওই বিপদের সময় ‘মাউথ পাম্প’ করে পিয়ারলেসের লাল্টুর জ্ঞান ফেরান দেবজিৎ।
একই ঘটনা ঘটেছিল দেবজিতের নিজের ফুটবলারজীবনে। ২০০৩ আসিয়ান কাপ কোয়ার্টার ফাইনালে। ইন্দোনেশিয়ার ক্লাব পার্সিতার সঙ্গে ম্যাচ ছিল ইস্টবেঙ্গলের। এরিয়াল বল দেবজিৎ হেড করতে উঠলে পার্সিতার আরিফের সঙ্গে সংঘর্ষে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। সতীর্থ লাল-হলুদ ফুটবলার ডগলাস দৌড়ে এসে ‘মাউথ পাম্প’ করতে থাকলে জ্ঞান ফিরে আসে দেবজিতের। পরে তাঁকে বিদেশে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।
এ দিন ম্যাচের পরে দেবজিৎ বলছিলেন, ‘‘লাল্টুর ব্যাপারটা আজ প্রথমে বুঝতেই পারিনি। আমাদের রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। হঠাৎ দেখি মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে ও। সেই সময় ও হাত-পা ছেড়ে দিয়েছিল। দাঁতে দাঁত লেগে গিয়েছিল। আমার নিজের খেলোয়াড়জীবনে মাউথ পাম্পের অভিজ্ঞতা থাকায় ঠিক সেটাই করায় লাল্টুর জ্ঞান ফেরে।’’ তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে বারাসতেরই এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে সেখান তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পিয়ারলেস হাসপাতালে।
আসিয়ান কাপের সেই ম্যাচে মাঠে ছিলেন ইস্টবেঙ্গল সহ-সচিব ও ডাক্তার শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত। তিনি এ দিন বললেন, ‘‘খেলার সময় হঠাৎ করে কোনও সংঘর্ষে হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে গেলে এ রকম ভাবেই জ্ঞান হারায় প্লেয়াররা। তিন মিনিটের মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে তখন কিন্তু সমস্যা হয়ে যায়। মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।’’ যে ভাবে মারা গিয়েছিলেন ম্যাঞ্চেস্টার সিটি, ওয়েস্ট হ্যামে খেলা ক্যামেরুন ফুটবলার ভিভিয়েন ফো। কাকতালীয় ভাবে দেবজিতের ঘটনার মাত্র এক মাস আগে। ২৬ জুন, ২০০৩। কনফেড কাপ সেমিফাইনালে।
শনিবার
কলকাতা লিগে-- ইস্টবেঙ্গল: সাদার্ন সমিতি (বারাসত, ৫-৩০)