এই টিমটাকে একটু সময় দিন, তার পর না হয় বিচারে বসবেন

তিন ওয়ান ডে-র সিরিজের শেষ ম্যাচটায় অবশেষে ভারতকে দেখতে ভারতের মতো লাগছে। তবে ঘটনা হল, আজ মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা যদি জিতেও যায়, তা হলেও সিরিজ ওরা পাবে না। ওটা আগেই বাংলাদেশের দখলে চলে গিয়েছে। তাই আজকের এই ম্যাচটা নিয়ে কাটাছেঁড়া না করে বরং সার্বিক ভাবে সিরিজটা নিয়ে কথা বলা যাক। সিরিজ হারের তিনটে মূল কারণ আছে বলে আমি মনে করি।

Advertisement

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৫ ১৯:৫৬
Share:

তিন ওয়ান ডে-র সিরিজের শেষ ম্যাচটায় অবশেষে ভারতকে দেখতে ভারতের মতো লাগছে। তবে ঘটনা হল, আজ মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা যদি জিতেও যায়, তা হলেও সিরিজ ওরা পাবে না। ওটা আগেই বাংলাদেশের দখলে চলে গিয়েছে। তাই আজকের এই ম্যাচটা নিয়ে কাটাছেঁড়া না করে বরং সার্বিক ভাবে সিরিজটা নিয়ে কথা বলা যাক।
সিরিজ হারের তিনটে মূল কারণ আছে বলে আমি মনে করি। এক, টানা ক্রিকেট খেলার ক্লান্তি। দুই, দুটো ফর্ম্যাটে দু’জন ক্যাপ্টেনের ধরনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। আর তিন নম্বর, এই বাংলাদেশের অপ্রত্যাশিত ভাবে ভাল পারফরম্যান্স।
ক্লান্তির ব্যাপারটা অনেকে মানতে চাইছেন না জানি। কিন্তু এই জিনিসটা এড়ানোও সম্ভব নয়। মনে করে দেখুন তো, কবে থেকে টানা ক্রিকেট খেলে যাচ্ছে ধোনি-কোহলিরা? গত বছরের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়ায় লম্বা সফর, তার পর দেড় মাসের বিশ্বকাপ, তার পর দু’মাসের আইপিএল। তারও পর আবার এই বাংলাদেশ সিরিজ। মাঝে একটা সপ্তাহও পুরো বিশ্রাম পেয়েছে কি না ধোনিরা, সন্দেহ। ওদের সূচিটা এত ঠাসা বলে স্বাভাবিক ভাবেই এই সিরিজটার প্রস্তুতি নেওয়ার যথেষ্ট সময় পায়নি টিম। আইপিএলের পরে যদি আরও লম্বা একটা ছুটি পেত ওরা, তা হলে ভারতের পারফরম্যান্স এ রকম হত বলে মনে হয় না। আর আত্মতুষ্টিও কিছুটা কাজ করেছে টিম ইন্ডিয়ার মনোভাবে। ওরা ভেবেছিল বাংলাদেশ টেকনিক্যালি খুব ভাল টিম না। ইতিহাসও তাই বলে। তাই হয়তো প্রস্তুতিটা সঠিক হয়নি।
তার পর ভাবুন, কত বছর পরে আমরা দুটো ফর্ম্যাটে দু’জন ক্যাপ্টেন দেখছি। শেষ বার এটা হয়েছিল যখন অনিল কুম্বলে টেস্ট অধিনায়ক ছিল আর ওয়ান ডে-তে নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছিল ধোনিকে। কিন্তু তখনকার টিম আর এই টিমের মধ্যে তফাত আছে। তখন টিমে ভর্তি সিনিয়র, যারা ব্যাপারটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছিল। আর এখন গোটা টিমটাই ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নিজেরা নিজেদের জায়গা পাকা করার চেষ্টায় সব প্লেয়ার। এর উপর দু’রকম ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে খেলা— সব মিলিয়ে মোটেও সহজ নয়।

Advertisement

মনে রাখবেন, ধোনি আর কোহলি একদম আলাদা ঘরানার অধিনায়ক। কোহলি বেশির ভাগ সময় নিজের আবেগটা খোলাখুলি প্রকাশ করে। কিন্তু ধোনির মনে যে ঠিক কী চলছে, বোঝা অসম্ভব বললেও কম বলা হয়। ওদের দু’জনকেও ব্যাপারটার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময় দিতে হবে। ক্রিকেট হল ক্যাপ্টেন্স স্পোর্ট, তাই টিম তৈরির এই সময়ে যদি ক্যাপ্টেনও আলাদা-আলাদা হয়, তা হলে কাজটা সহজ নয়। ধোনির নেতৃত্বেও যেমন কয়েকটা নতুন জিনিস দেখলাম। এই যে পরপর তিনটে ম্যাচে টিমে ও এত পরিবর্তন করল, সে রকম শেষ কবে করেছে, বলা কঠিন। ধোনি তো টিমে বদল আনতেই চায় না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ওর মানসিকতায় খুব সূক্ষ্ম কিছু বদল এসেছে।

তবে বাংলাদেশের প্রাপ্য প্রশংসা তো ওদের দিতেই হবে। মাশরফির এই টিমটাই যে বাংলাদেশ ইতিহাসের সেরা ক্রিকেট টিম, তা নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই। ভারতের প্রতি ব্যাটসম্যান নিয়ে আলাদা করে প্ল্যান করেছে ওরা। তার পর সেগুলোকে সফল ভাবে কাজেও লাগিয়েছে।

Advertisement

সব শেষে দুটো জিনিস নিয়ে বলি। এক, অধিনায়ক ধোনির সরে দাঁড়ানো উচিত কি না। আর দুই, ব্যাটসম্যান কোহলির অফ ফর্ম।

ধোনি নিয়ে যে যা-ই বলুক না কেন, আমার মনে হয় না ওর সরে দাঁড়ানো উচিত। এই যে বলছিলাম এটা টিম ভাঙাগড়ার সময়, তো এই সময়টা ড্রেসিংরুমে একটা ঠান্ডা মাথা খুব দরকার। যে প্লেয়ারদের মানসিক ভাবে তৈরি করতে পারবে। কাজটা ধোনি ছাড়া কে করবে বলুন? আর এই কয়েক মাস আগেই তো আমরা ধোনিকে মাথায় তুলে নাচছিলাম। দুটো ম্যাচে হার দিয়ে সব কিছু পাল্টে ফেলা যায় না। সেটা ধোনির প্রতি খুব অন্যায়। আসলে ব্যাপারটা হল, দেশ হিসেবে আমরা হার-জিতটা সঠিক দৃষ্টিকোণে দেখি না। আমি ভারতীয় সমর্থকদের অনুরোধ করব, সিরিজ হারটাকে অন্তত সঠিক দৃষ্টিকোণে দেখতে। পরিস্থিতি বিচার করে দেখে তার পর আলোচনায় নামতে।

আর বিরাট কোহলিকে নিজের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাতে হবে। ওর উপর যে অসীম প্রত্যাশার চাপ, সেটা সামলানো শিখতে হবে। এই যে আজ সাকিবকে যে ভাবে খেলতে গিয়ে আউট হল, সেটা হওয়াই উচিত না। ও জানে সাকিবকে কী ভাবে খেলা দরকার, তবু সেটা করছে না। বা সে দিন ফ্রি হিটে ডিফেন্স করাটা। এগুলো ওর স্বাভাবিক ক্রিকেট নয়। আসলে কী জানেন, একটা টেস্টে নিজে অধিনায়কত্ব করে তার পর একটা সিরিজ অন্য কারও নেতৃত্বে খেলাটা সহজ নয়। আমার নিজের এ রকম অভিজ্ঞতা আছে তাই জানি। হয়তো সেটা কোহলির কাছ থেকে ওর স্বাভাবিক খেলাটা কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু ওর যা প্রতিভা, ফিরে আসতে সময় লাগবে না।

ওই যে বললাম না, গোটা টিমটাই অচেনা একটা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ওদের সবাইকেই একটু সময় দিন। তার পর না হয় বিচার করতে বসবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন