কলকাতা লিগের ডার্বি নির্দিষ্ট দিন ৭ সেপ্টেম্বর করার ব্যাপারে অনড় আইএফএ।
আজ শনিবার বিকেলে লিগ সাব কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে রাজ্য ফুটবল সংস্থার অফিসে। ডার্বি জট সেখানেই খুলে যেতে পারে। কারণ, তাদের ভেস্তে যাওয়া টালিগঞ্জ অগ্রগামী ম্যাচ সাত দিনের মধ্যে করতে হবে বলে মোহনবাগান যে চিঠি আইএফএ-র কাছে পাঠিয়ে ডার্বি পিছোনোর কথা বলছে তাতে জল ঢেলে দিতে তৈরি পেরেন্ট বডি। তাদের কাছে বাগানের যুক্তি নস্যাৎ করার জন্য এমন এক অস্ত্র নাকি আছে যা বাগানের পক্ষে এড়িয়ে যাওয়া কঠিন। তবে ভেস্তে যাওয়া ম্যাচ এবং ডার্বির সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে কোনও রকম সংঘাতের রাস্তায় যেতে রাজি নয় আইএফএ। বরং শান্তির পথে হেঁটে তারা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় শুক্রবার বললেন, ‘‘লিগ সাব কমিটিতে যা ঠিক হবে, সেটাই আমরা জানিয়ে দেব মোহনবাগানকে।’’
বাগানও আগের চেয়ে অনেকটা নরম হয়েছে। লিগের সূচি অনুযায়ী পর পর ম্যাচ খেলার দাবি থেকে সরে এসে তারা শুক্রবার ইউনাইটেড ম্যাচও খেলেছে। এমন কী ভাল ভাবে জিতেছেও। যার পর সবুজ-মেরুন শিবিরের অনেকে বলতে শুরু করেছেন, যে রকম ফর্মে থেকে ইউনাইটেডকে হারাল ক্লাব, পরের ম্যাচটাই ডার্বি হলে ইস্টবেঙ্গলকেও ডাফি-বিদেমিরা চাপে ফেলে দেবেন। কিন্তু মাঝে যদি লিগের ভেস্তে যাওয়া ম্যাচ নিয়ে কোনও রকম ঝামেলা হয়, সেটার প্রভাব পড়তে পারে ফুটবলারদের উপর। অবাক করার মতো ব্যাপার, এ বিষয়ে বাগান কর্তারা তাঁদের পরিচিত উত্তেজনা দেখাচ্ছেন না। বরং তাঁরা ধীরে চলো নীতি নিয়েছেন। অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত বললেন, ‘‘লিগ সাব কমিটির সভায় কী হয় আগে দেখি, তার পর এই নিয়ে ভাবা যাবে।’’
কিন্তু মোহনবাগান কলকাতা লিগের যে নিয়মের কথা তুলে ধরে বলছে, সাত দিনের মধ্যে রিপ্লে ম্যাচ করতে হবে, সেটার মধ্যে কিন্তু ফাঁক আছে। সেই ‘অ্যাপেন্ডিক্স কে’-র ‘এইট-সি’ নিয়মে দু’টি শব্দ রয়েছে ‘মে বি’। অর্থাৎ নিয়মে ম্যাচটি সাত দিনের মধ্যে হতেও পারে, আবার না-ও হতে পারে। করতেই হবে এ রকম কথা লেখা নেই। সে ক্ষেত্রে কিন্তু মোহনবাগানের যুক্তি না খাটার সম্ভাবনাও আছে। আইএফএর কাছে এ রকম একটা হাতে গরম উদাহরণও রয়েছে।
গত মরসুমেই কলকাতা লিগে মোহনবাগান-এরিয়ান ম্যাচ বৃষ্টির জন্য ভেস্তে গিয়েছিল। সেই ম্যাচও রিপ্লে হয়। তবে সেটা হয় দশ দিন পরে। বাগান সেই রিপ্লে খেলেওছিল। শুধু তাই নয়, ভেস্তে যাওয়া ম্যাচের রিপ্লে খেলার আগে বাগান খেলেছিল পুলিশ এসি ম্যাচ। এবং তার পর তারা ডার্বিও খেলে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে। ঠিক এ বার যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটাই হয়েছিল গত বার। বাগান লিগ সাব কমিটির সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিল।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, গত বার যদি একই অবস্থায় বাগান কর্তারা এটা মেনে নেন, তা হলে এ বার কেন তা মানবেন না? লিগ সাব কমিটির বৈঠকে সেটা নিয়েও হয়তো আলোচনা হবে। এবং গত বারের ঘটনা তুলে ধরে তা জানিয়েও দেওয়া হতে পারে বাগানকে।
ডার্বির পর আইএসএলের জন্য ফুটবলার ছেড়ে দিতে হবে ইস্টবেঙ্গলকে। পাশাপাশি তারা টানা সাত বার কলকাতা লিগ জয়ের রেকর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে। স্বভাবতই ৭ সেপ্টেম্বরের পর লাল-হলুদ শিবির ডার্বি খেলতে রাজি নয়। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, মোহনবাগান আসলে এই সুবিধেটাই নিতে চাইছে। কিন্তু আইএফএ তাতে জল ঢেলে দিতে চাইছে যুক্তি দিয়ে।
৭ সেপ্টেম্বর ডার্বি না হলে আইএফএ-ও হয়তো সমস্যায় পড়বে। তাদের ম্যাচ সম্প্রচার চুক্তির নির্দিষ্ট সময়কাল রয়েছে। পুলিশ বা প্রশাসনিক সব কাজও শেষ। টিকিট ছাপাও হয়ে গিয়েছে। কল্যাণী স্টেডিয়ামে ডার্বির জন্য অস্থায়ী গ্যালারি তৈরি হয়ে গিয়েছে। এত আয়োজনের পর ডার্বির তারিখ বদল করা কঠিন। সেখানে মোহনবাগানের এ ধরণের কোনও সমস্যা নেই। কারণ বাগানের এই টিমে সে অর্থে আইএসএলের কোনও প্লেয়ার নেই। তাই পরে ডার্বি হলেও সমস্যায় পড়তে হবে না তাদের।
বাগান যা-ই দাবি করুক, পরিস্থিতি যা তাতে আইএফএ নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড়। কোনও ভাবেই তারা ডার্বির তারিখ বদলাতে রাজি নয়। আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘ডার্বি ৭ সেপ্টেম্বরই হবে। আমাদের আশা মোহনবাগানও খেলবে। আমরা ওদের সব দাবির চিঠি নিয়ে দ্রুত আলোচনা করছি। সিদ্ধান্তও জানিয়ে দিচ্ছি। ওদের না খেলার তো কোনও কারণ দেখছি না ? দেখা যাক কী হয়?’’