টেস্ট এবং ওয়ান ডে দু’টোই সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘরানার ক্রিকেট। তাই দু’ধরনের ক্রিকেটে দৃষ্টিভঙ্গিটাও আলাদা হওয়া দরকার। বহু প্রচলিত এই বার্তাটাই ফের পাওয়া গেল এ বারের ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট এবং ওয়ান ডে সিরিজ থেকে। টেস্টে সুবিধা করতে না পারলেও ওয়ান ডে সিরিজে ভারতীয়রা শুধু ভাল পারফর্মই করল না, দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনও ঘটাল। আর কয়েক মাস পরেই বিশ্বকাপ। সেখানে ভাল কিছু করতে গেলে ইংল্যান্ডেরও কিন্তু এ রকম একটা প্রত্যাবর্তন ভীষণ জরুরি।
ওয়ান ডে সিরিজে ইংল্যান্ডের এত খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য অধিনায়কের উপর পুরোপুরি দায় চাপিয়ে দেওয়াটা আমি কোনও ভাবেই সমর্থন করি না। গত দু’তিনটে দশক ধরেই ওয়ান ডে ক্রিকেটে ইংল্যান্ড সে রকম ভাল পারফর্ম করতে পারেনি। আর ধোনি টেস্টে সে ভাবে সফল না হলেও ওয়ান ডে ফর্ম্যাটে ভারতের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক। যদি কুক ব্যাটসম্যান হিসেবে পরবর্তী সিরিজগুলোতে দলে থাকে, তা হলে ইংল্যান্ডের উচিত বিশ্বকাপেও ওকেই ক্যাপ্টেন হিসেবে রেখে দেওয়া। কারণ হঠকারী কোনও সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে। যেহেতু এই মুহূর্তে চলতি সিরিজের নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে, তাই হেডিংলেতে কিছু নতুন মুখকে দেখে নেওয়া যেতেই পারে।
এজবাস্টনে ভারত সেই ফের এক তরফা জয় পেল। যেখানে ধোনি ঠিক সেই ম্যাচের গোড়া থেকেই ইংল্যান্ডে ওপেনারদের পুরোদস্তুর চাপে রেখে যাওয়ার ফল পেল। এর সঙ্গে উল্লেখ করতেই হবে ভারতের দুর্দান্ত ফিল্ডিং। যা বোলারদের আগাগোড়া সহযোগিতা করে গিয়েছে। বিশেষ করে গালিতে রায়না, এক্সট্রা কভারে রাহানে। ম্যাচে তিন উইকেট ৩০ রানে চলে যাওয়ার পর থেকেই রাস্তা হারিয়ে ফেলা শুরু ইংল্যান্ডের। যদিও মর্গ্যান এবং রুট একটা পার্টনারশিপ গড়েছিল। কিন্তু আত্মবিশ্বাস না থাকায় বড় রান করতে ব্যর্থ। তবে মইন আলিকে ব্যাট করতে দেখে ভাল লাগল। স্পিনের বিরুদ্ধে কী ভাবে ব্যাট করা উচিত ও যেন সেটাই শেখাতে নেমেছিল। ফুটওয়ার্ক ভাল, তাই ব্যাটটাও ভালই করে গেল। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
ভুবনেশ্বর কুমারের কথা বলতেই হচ্ছে। ও পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে গোটা সিরিজেই ভাল বল করে গেল। বিশেষ করে ওর নিয়ন্ত্রিত সুইং। হেলসকে যে ভাবে আউট করল সেটাও মুগ্ধ করার মতো। প্রথমে দু’টো আউটসুইঙ্গার। তার পরেই বড় একটা ইনসুইং— যা বেল নড়িয়ে দিয়ে গেল হেলসের। ইংল্যান্ডে প্রথম সিরিজেই ভুবনেশ্বরের এই পারফরম্যান্স স্মরণীয় হয়ে থাকার মতো। সঙ্গে শামির কথাও বলব। টেস্ট সিরিজের পর ওকেও বল হাতে উন্নতি করতে দেখলাম।
ব্যাটিংয়েও ভারতের উন্নতি উল্লেখ করার মতো। রাহানে এবং ধবন দুর্দান্ত। রাহানেকে এই সফরের আগে দেখিনি। এ বার দেখলাম। টাইমিংটা বেশ ভাল। ব্যাটিংয়ে যে কোনও অর্ডারে নেমে শট খেলতে গিয়ে কুঁকড়ে যায় না। আর ধবনকে আমি সব সময়েই প্রশংসা করি। ওর আগ্রাসী মনোভাবটা দারুণ। ও ফর্মে ফেরায় লাভবান হয়েছে ভারত।
সিরিজের নিষ্পত্তি যখন হয়েই গিয়েছে, তখন ইংল্যান্ডের উচিত হেডিংলেতে জয়ের জন্য ঝাঁপানো। আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে নামা। যাতে ফলাফলটা একটু সম্মানজনক হয়। উল্টোদিকে ভারতের সামনে টেস্ট সিরিজের বদলা নেওয়ার সুযোগ। যা হলে ৪-০ সিরিজ শেষ করে দেশে ফিরবে ধোনিরা।