আই লিগ জয়ের পর নতুন মরসুমের দল গঠন নিয়েই কি মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেনের ‘গুস্সা’?
আর সে কারণেই কি বৃহস্পতিবার ক্লাব কর্তাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করলেন তিনি? না কি তাঁর বহুল চর্চিত ঠোঁট-কাটা স্বভাবের জন্যই মরসুম শুরুর আগে কর্তাদের চক্ষুশূল হয়ে পড়ছেন চেতলার বাসিন্দা?
ময়দানের অন্য একটি অংশের অভিমত যদিও— ময়দানের বাস্তুঘুঘু কর্তাদের সঙ্গে ঘর করতে গিয়ে প্রতিপদেই ঠোক্কর লাগছে সঞ্জয় সেনের মতো সোজা রাস্তায় চলা কোচের। আর তাতেই সংঘাত।
সঞ্জয় নিজে অবশ্য এ দিন মিডিয়ার ফোন ধরেননি। ফলে তাঁর প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যায়নি। সবুজ-মেরুনের শীর্ষ কর্তারাও এ দিন এ ব্যাপারে কোনও কথা বলতে চাননি। অর্থসচিব দেবাশিস দত্তর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলে দেন, ‘‘এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’’ তবে মুখে তাঁরা কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও ভিতরে ভিতরে মোহনবাগান কর্তারা সঞ্জয়ের সাম্প্রতিক বেশ কিছু আচরণে প্রবল অখুশি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সবুজ-মেরুনেরই এক কর্তা এ দিন বলছিলেন, ‘‘আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই ওর মাথাটা ঘুরে গিয়েছে। কখনও কর্তাদের অপদার্থ বলে পরের দিন ডিগবাজি খাচ্ছে। কখনও বা প্রকাশ্যে কর্তাদের উদ্দেশে ইউথ ডেভেলপমেন্টের প্রসঙ্গ তুলে তাঁদের অপসারণ চাইছে। এ ভাবে ও কিন্তু নিজের কবরটা নিজেই খুঁড়ে ফেলছে বোধহয়।’’
আই লিগ জিতে কলকাতায় ফেরার এক মাসের মধ্যেই খেতাব জয়ী কোচকে নিয়ে সবুজ-মেরুন কর্তাদের এই অসন্তোষের কারণ কী?
সবুজ-মেরুন তাঁবুতে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, চলতি মরসুমের দল গঠন নিয়েই কোচ-কর্তাদের বেশ কয়েকটি বিষয়ে মতের অমিল হওয়ায় সমস্যার সূত্রপাত। ক্লাব সূত্রে খবর, ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের তুখোড় অপারেশনে বেলোর লাল-হলুদ জার্সি পরার দিন থেকেই মোহনবাগান কোচ এবং কর্তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। শোনা যাচ্ছে, বেলোর পরিবর্ত হিসেবে উগা ওপারার ব্যাপারে কিছুটা এগিয়েছিলেন সবুজ-মেরুন কর্তারা। কিন্তু বাগানেরই একটা অংশের অভিযোগ, কোচই নাকি সেই প্রচেষ্টায় জল ঢেলে দেন। কোচের অনাস্থার জন্যই ওপারার বদলে ব্রাজিলীয় স্টপার গুস্তাভোকে সই করায় ক্লাব।
ইস্টবেঙ্গল থেকে এ বার চুক্তি শেষ হয়ে বেরিয়ে আসা সুবোধ কুমার মোহনবাগানে খেলার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। কর্তাদের একটা অংশও সুবোধকে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও নাকি কোচ না চাওয়ায় কথাবার্তা আর এগোয়নি।
এমনকী হন্ডুরাসের বিদেশি ওয়েলকামের ব্যাপারেও নাকি শুরুতে অনাস্থা দেখিয়েছিলেন বাগান কোচ। যা পছন্দ হয়নি কর্তাদের। কলকাতা লিগের জন্য দু’একজন জুনিয়র ফুটবলারের সঙ্গেও নাকি সবুজ-মেরুন কর্তাদের কথাবার্তা অনেকটা এগিয়ে গেলেও কোচের পছন্দ না হওয়ায় তাঁরা সই করেছেন ইস্টবেঙ্গলে। ফলে কোচের প্রতি বাগান কর্তাদের একটা বড় অংশ চলতি মরসুমে মাঠে বল গড়ানোর আগেই ক্ষুব্ধ।
কলকাতার ক্লাব কর্তাদের নিয়ে বাগান কোচের বৃহস্পতিবারের বিষ্ফোরক মন্তব্যের পর অবাক ময়দানের অনেক প্রাক্তনই। তবে তাঁরা কেউই এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাতে চান না। ক্রীড়া সাংবাদিক তাঁবুতে বাগান কোচ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ইউথ ডেভেলপমেন্ট নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। শুক্রবার লাল-হলুদের অন্যতম শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকারকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সব সময় প্রতিক্রিয়া দিতে নেই। জবাব দেওয়ার জায়গা খেলার মাঠ। তা ছাড়া কলকাতার তিন প্রধানকেই ক্লাব প্রশাসন চালাতে হয় লক্ষ-লক্ষ আবেগ, অনুরাগ নিয়ে। সুতরাং সব কিছু তুখোড় পেশাদারের মতো সামলানো সম্ভব হয় না অনেক ক্ষেত্রেই।’’
তবে কলকাতা ময়দানে প্রথম আই লিগ এনে দেওয়া কোচ যে বৃহস্পতিবার তাঁর জোরদার সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একঘরে হয়ে পড়েছেন, তা বলা যাচ্ছে না। ময়দানের এক প্রাক্তন ফুটবলার এ প্রসঙ্গে বলছেন, ‘‘সঞ্জয় একটু আবেগপ্রবণ। সোজাসাপ্টা কথা বলে। আসলে ওর সঙ্গে চলতে গিয়ে ময়দানের বাস্তুঘুঘু কর্তাদের অসুবিধা হওয়াতেই হয়তো এই সমস্যার সূত্রপাত।’’
শেষ পর্যন্ত কে ঠিক আর কে ঠিক নয়, তা সময়ই বলবে। কিন্তু নতুন মরসুম শুরুর আগেই মোহনবাগান কোচ যে বিতর্কের পুরোভাগে তা বলতেই হচ্ছে।