টিম ইন্ডিয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে খোলামেলা ঋদ্ধি

অশ্বিনের চেয়ে ইশান্তকে কিপ করাটা বেশি কঠিন

ফিল্ডিং সেট করা নিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রায়ই আলোচনা হয় বিরাট কোহালির। ম্যাচ চলাকালীন। যখন তাঁর পাশে স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকেন অজিঙ্ক রাহানে আর কোহালি, তখন। প্রায়ই তাঁর পরামর্শ মেনে বোলারের সঙ্গে আলোচনা করে ফিল্ডিং সাজিয়ে থাকেন ভারতীয় টেস্ট ক্যাপ্টেন। ঋদ্ধিমান সাহার উপর কোহালির এখন এ রকমই ভরসা।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৫০
Share:

ফিল্ডিং সেট করা নিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রায়ই আলোচনা হয় বিরাট কোহালির। ম্যাচ চলাকালীন। যখন তাঁর পাশে স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকেন অজিঙ্ক রাহানে আর কোহালি, তখন। প্রায়ই তাঁর পরামর্শ মেনে বোলারের সঙ্গে আলোচনা করে ফিল্ডিং সাজিয়ে থাকেন ভারতীয় টেস্ট ক্যাপ্টেন। ঋদ্ধিমান সাহার উপর কোহালির এখন এ রকমই ভরসা।

Advertisement

দু’বছর আগেও টিম ইন্ডিয়ার সংসারে তাঁর চারপাশটা এ রকম ছিল না। ঋদ্ধিমান সাহা তখন এক নতুন, উঠতি উইকেটকিপার। যে ভবিষ্যতে লম্বা রেসে দৌড়তেও পারে, আবার নাও পারে। ব্যাটটা করতে না পারলে আর দলে জায়গাটা পাকা হবে কী করে? মহেন্দ্র সিংহ ধোনি নামক মহীরুহ ছাড়া তখন ভারতীয় দলে স্টাম্পের পিছনে আর কাউকে ভাবাই যেত না।

আর আজ? তিনিই সেরা। তিনিই ওয়ান অ্যান্ড ওনলি। ভারতীয় টেস্ট দলে অটোমেটিক চয়েস এবং মিস্টার ডিপেন্ডেবলও।

Advertisement

ঋদ্ধিমান সাহা।

ইডেন টেস্টের সময় দলে যাঁর পরিবর্ত নিয়ে জিজ্ঞেস করতেই বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলেন জাতীয় নির্বাচকদের চেয়ারম্যান এমএসকে প্রসাদ, ‘‘এখনও তেমন কেউ নেই, জানেন। খুঁজে পেলে জানিয়ে দেব।’’

তখন আর এখনকার সময়ের তফাতটা বলতে গিয়ে গলাটা যেন একটু উত্তেজিতই শোনাল ঋদ্ধির, ‘‘তখন কেমন যেন একটু একা একা লাগত টিমের মধ্যে। চারপাশে অনেক স্টার ছিল কি না। আমি সেই জায়গায় সদ্য শুরু করছি। দলে পাকা জায়গা ছিল না। বেশিরভাগ সময়ই রিজার্ভ বেঞ্চে। কিন্তু এখন আর তা মনে হয় না। তা ছাড়া এখন আর আমাদের টিমে অত স্টারডমের ব্যাপার নেই। তখন দলে অনেক স্টার, ঠিকমতো নিজেদের মধ্যে কথা হচ্ছে না, তেমন আর নেই। এখন দলে সবাই সবার বন্ধু, একটা ফ্যামিলির মতো। তাই এখন বেশ লাগে ইন্ডিয়া টিমের সঙ্গে থাকতে।’’

টিম কোহালির থিঙ্ক ট্যাঙ্কে যে তিনিও একজন, ঋদ্ধির কথাতেই তার ইঙ্গিত। যখন বলছিলেন, ‘‘স্টাম্পের পিছনে দাঁড়িয়ে গোটা টিমটাকে দেখতে পাই। পাশে স্লিপে যখন বিরাট আর রাহানে থাকে ওদের সঙ্গে আলোচনা করি। কোন বোলারের কী রকম ফিল্ড সেট করা যায়, মাঝে মাঝে বিরাট জিজ্ঞেসও করে। আমার কথায় মাঝে মধ্যে ফিল্ডিং সাজায়। ভালই লাগে।’’

অনিল কুম্বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ঋদ্ধিকে বিশ্রাম নিতে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিন টেস্টে যা ধকল নিয়েছেন, তার পর তাঁর বিশ্রামটা খুব জরুরি। তাই পরিবার নিয়ে আপাতত ছুটিতে ঋদ্ধি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লি থেকে ফোনে কথা বলার সময় আশপাশ থেকে তাঁর মেয়ের গলাও পাওয়া যাচ্ছিল মাঝে মাঝে।

কয়েক দিন আগেই যাঁর ঘরের মাঠে টেস্ট খেলার স্বপ্ন পূরণ হল এবং সেই টেস্টেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ। যা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও কখনও হতে পারেননি। না, ঘরের মাঠে প্রথম টেস্টে দলকে বিপদসীমার সামনে থেকে সরিয়ে এনে ম্যাচের সেরার খেতাব পেয়েও কোনও বিশেষ অনুভুতি নেই ভারতীয় টেস্ট উইকেটকিপারের। বললেন, ‘‘টেস্ট খেলাটাই সবচেয়ে বড় কথা। ইডেনে টেস্ট খেলা নয়। ইডেনে টেস্ট আমার কাছে আর পাঁচটা টেস্টের মতোই। ইডেন বলে আলাদা কিছু নেই। দুটো ইনিংসেই ভাল পার্টনারশিপ হয়েছিল বলে সামলে নিতে পেরেছিলাম। ইডেন বলে যে ভাল করতেই হবে, তেমন চাপ ছিল না।’’

বরং অনেক বেশি চাপ রবিচন্দ্রন অশ্বিনের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে কিপিং করা। ঋদ্ধিমান বলছেন, ‘‘চাপ তো থাকেই। তবে অশ্বিনের সঙ্গে আমার বোঝাপড়াটাও দিনদিন আরও ভাল হচ্ছে। ম্যাচের মাঝখানে ওর সঙ্গে কথা হয় আমার। কোন ব্যাটসম্যানকে কোন বলটা ভাল করছে, কে ভাল শট খেলে, সেগুলো জিজ্ঞেস করে আমাকে। কাকে কী বল করলে সে সমস্যায় পড়তে পারে, তাও জিজ্ঞেস করে। ওর বলে কিপ করার দক্ষতাটা এখন আরও ভাল হয়েছে আমার। ওর সঙ্গে নিজেও আরও উন্নত হতে হচ্ছে আমাকে।’’

তবে অশ্বিনের চেয়েও সামলানো কঠিন না কি আর একজনকে। তিনি ইশান্ত শর্মা। স্টাম্পের পিছনে দাঁড়িয়ে তেমনই উপলব্ধি ঋদ্ধিমানের। বললেন, ‘‘আমার তো মনে হয় ইশান্তের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে কিপ করাটা অশ্বিনকে সামলানোর চেয়েও কঠিন। ইশান্তের বল অনেক বেশি নড়াচড়া করে। স্টাম্পের পিছনেও। ভুবির সুইংও স্টাম্পের পিছনে অত নড়াচড়া করে না, যতটা ইশান্তের করে।’’

ইডেনে বাড়তি চাপ ছিল না ঠিকই। কিন্তু ইডেন থেকে যে আত্মবিশ্বাস পেয়েছেন, তা যথেষ্ট। ঋদ্ধি বলছিলেন, ‘‘যত ম্যাচ খেলছি, তত কনফিডেন্সও বাড়ছে ক্রমশ। ইডেন টেস্টে যেমন হয়েছে। ইনদওরে মাঠে নেমেই অনুভব করতে পারছিলাম, বেশ আত্মবিশ্বাসী লাগছে। এর ফলে ধারাবাহিকতা নিশ্চয়ই আরও বাড়বে।’’

ছুটির পর সেই ধারাবাহিকতার খোঁজেই রঞ্জি ম্যাচে ফিরে যাবেন বলে ঠিক করেছেন ঋদ্ধিমান। বললেন, ‘‘ভাবছি ২৭ তারিখ থেকে ম্যাচটা খেলব। ইংল্যান্ড সিরিজের জাস্ট আগে ওটাই তো পড়বে।’’ তবে তার আগে আর প্র্যাকটিস নয়, ক্রিকেট নিয়ে ভাবনাও নয়। ‘‘ইংল্যান্ড সিরিজ নিয়ে ভাবনা টিম জয়েন করার পর শুরু করব। তার আগে নয়।’’

এটা অবশ্য কুম্বলে বা কোহালি নয়, তাঁর নিজেরই পরিকল্পনা। বললেন, ‘‘এটা আমারই ভাবনা। ক্রিকেটে ফেরার আগে আর প্র্যাকটিস করব না। কয়েক দিন জিম করতে পারি। ব্যস। আমি এমনই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন