দেশের জার্সিতে ফর্মে ফিরতেই হবে, বলছেন দীপা

কঠিন প্রোদুনোভা ভল্টকে যিনি এ দেশের চা-এর দোকানের আড্ডা থেকে রান্নাঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছেন, সেই দীপা এ দিনও রি হ্যাব করেছেন দিল্লিতে। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে শুরু করেছেন হালকা দৌড়, জগিং।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৭ ০৫:৪৩
Share:

এপ্রিলে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে নামতে পারেননি। অক্টোবরে মন্ট্রিওলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও নামতে পারছেন না।

Advertisement

রিও অলিম্পিক্সে অল্পের জন্য পদক হারানোর পর এই দু’টি টুনার্মেন্টের পদককেই কিন্তু পাখির চোখ করেছিলেন দীপা কর্মকার। ডান পায়ের অস্ত্রোপচারের জেরে ছিটকে যাওয়ার পর ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সের সোনার মেয়েকে নিয়ে হঠাৎই দেশ জুড়ে আশা আর আশঙ্কা। দীপা কি আবার নিজের ফর্মে ফিরতে পারবেন? পারবেন দেশের জার্সিতে আলো ছড়াতে? বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে ফোনে দীপা কিন্তু বলে দিলেন, ‘‘ফিরতে আমাকে হবেই। ২০২০-র টোকিও অলিম্পিক্সে পদক জেতাই আমার স্বপ্ন এখন।’’

কঠিন প্রোদুনোভা ভল্টকে যিনি এ দেশের চা-এর দোকানের আড্ডা থেকে রান্নাঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছেন, সেই দীপা এ দিনও রি হ্যাব করেছেন দিল্লিতে। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে শুরু করেছেন হালকা দৌড়, জগিং। অগস্টের শেষে বা সেপ্টেম্বরের শুরুতে তাঁর অ্যাপারেটাস অনুশীলনে নামার কথা। সে ভাবেই ছাত্রীর রোড ম্যাপ তৈরি করছেন দ্রোণাচার্য কোচ। সব ঠিক আছে। কিন্তু জেদের মধ্যে মন খারাপও আছে। মাঝেমধ্যেই কোচের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করছেন বলে খবর। এ দিন অবশ্য অনুশীলনের পর দীপা বলছিলেন, ‘‘পরপর দুটো টুর্নামেন্টে নামতে পারছি না। আমি কেন, যে-কোনও অ্যাথলিটের কাছে এটা যন্ত্রণার। আমারও মন খারাপ হচ্ছে। আবার এটাও ভাবছি, ঠিকঠাক রিহ্যাব করে যদি রিও-র চেয়েও ভাল পারফরম্যান্স করতে পারি, তা হলে সব দুঃখ মুছে যাবে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ার কাছে হেরে বিশ্ব হকি লিগ থেকে বিদায় ভারতের

কিন্তু দীপার পক্ষে কী তা সম্ভব? পরের বছরের কমনওয়েলথ গেমস, এশিয়াডে পারলেও সাড়ে তিন বছর পরের অলিম্পিক্সে কী পারবেন কিছু করতে? গত কয়েক মাসে তাঁর ওজন বেড়েছে দেড় কেজি। ডাক্তাররা বলছেন, অস্ত্রোপচার হওয়া ডান পায়ে পুরো জোর ফিরতে আরও তিন মাস লাগবে। এই অবস্থায় একেবারেই ভেঙে পড়তে রাজি নন দীপা এবং তাঁর কোচ। ছাত্রীকে পাশে নিয়ে বিশ্বেশ্বর নন্দী দাবি করছিলেন, ‘‘ওর যা মনের জোর আর জেদ, তাতে রিওর চেয়ে টোকিওতে ভাল করবে দেখবেন। এ রকম অস্ত্রোপচার করে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ফিরেছে। বিদেশের কথা ছেড়ে দিন, আমাদের এখানে পায়েল ভট্টাচার্য থেকে আদিত্যা সিংহ রানা বা অরিক দে-র মতো জিমন্যাস্ট সফল হয়েছে।’’ বিশ্বেশ্বরের সঙ্গে একমত হলেও পুরোপুরি তা মানতে নারাজ খেলার মাঠের পরিচিত শল্য চিকিৎসক মানবেন্দ্র ভট্টাচার্য। বলছিলেন, ‘‘দীপার ফেরা সম্ভব নয় এটা বলছি না। তবে ফুটবল আর জিমন্যাস্টিক্স কিন্তু এক নয়। আসল হল রিহ্যাবটা কেমন হচ্ছে। সব ঠিকঠাক হলেও দীপার এক বছর লাগবে পুরো ফিট হতে। এখানে জেদ আর ইচ্ছে শক্তি বড় ব্যাপার।’’ এশিয়াড, কমনওয়েলথে ভারতীয় দলের তো বটেই, জাতীয় ফুটবল দলের সঙ্গে নানা সময় প্রায় পনেরো বছর চিফ মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে ছিলেন মানবেন্দ্র। বলছিলেন, ‘‘দীপার যে অস্ত্রোপচার হয়েছে ওটা ফুটবলারদের তো বটেই, অ্যাথলিট, জিমন্যাস্টদেরও নিয়মিত হয়। কিন্তু দীপা তো এখন এশীয় পর্যায়ের জিমন্যাস্ট নন। ওর লক্ষ্য আরও অনেক ওপরে। অলিম্পিক্স। ওখানে পারবে কি না সেটা বলার সময় এখনও আসেনি।’’

দীপাকে নিয়ে দেশজুড়ে ওঠা প্রশ্নচিহ্ন থামিয়ে দিতে তাঁর কোচ বলছিলেন, ‘‘ডাক্তার তো ওকে ছ’মাস পর অ্যাপারেটাস দিতে বলেছেন। অক্টোবরে আমি নামাতেই পারতাম মন্ট্রিওলে। কিন্তু কেন নামাব? পদক পাওয়ার জায়গায় পৌঁছলেই তো ওকে নামাব! আমার ছাত্রী দশ নম্বর হতে নামবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন