দীপার নতুন ‘প্রোদুনোভা’

অলিম্পিক্স পদক না জিতেও হৃদয় জয় করে নিয়েছেন। তবে দেশে ফেরার পরেও চ্যালেঞ্জ শেষ হয়ে যাচ্ছে না দীপা কর্মকারের। ত্রিপুরা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি পড়ছেন দীপা। ‘ডিসট্যান্স মোড’-এ। জিমন্যাস্টিক্সের লড়াইয়ের পাশাপাশি সেই পরীক্ষার জন্য তাঁকে রিওতেও পড়াশোনা করতে হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আগরতলা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৭
Share:

অলিম্পিক্স পদক না জিতেও হৃদয় জয় করে নিয়েছেন। তবে দেশে ফেরার পরেও চ্যালেঞ্জ শেষ হয়ে যাচ্ছে না দীপা কর্মকারের।

Advertisement

ত্রিপুরা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি পড়ছেন দীপা। ‘ডিসট্যান্স মোড’-এ। জিমন্যাস্টিক্সের লড়াইয়ের পাশাপাশি সেই পরীক্ষার জন্য তাঁকে রিওতেও পড়াশোনা করতে হয়েছে। রবিবার প্রথম পরীক্ষায় বসতে পারেননি। তবে মঙ্গলবােরর পরীক্ষা কিছুতেই ফস্কাতে চান না। তাই সোমবার ত্রিপুরায় ফেরার পরই আর এক চ্যালেঞ্জের মুখে দেশের সেরা জিমন্যাস্ট। যা ‘প্রোদুনোভা’ ভল্টের চেয়ে কম কঠিন নয়।

পরীক্ষা সামলে মাস্টার্স ডিগ্রি পাওয়ার চ্যালেঞ্জ। যেটা আরও কঠিন হয়ে পড়ছে বাঙালি কন্যার জন্য সব ক’টা পরীক্ষা দিতে না পারায়।

Advertisement

তবে তিনি যে দীপা কর্মকার। ‘মৃত্যুভল্ট’কেই তোয়াক্কা করেন না, পরীক্ষা তো দূরের কথা। সোমবার ত্রিপুরায় ফেরার পরই দীপা বলেন, ‘‘পরীক্ষার জন্য ভাল করে প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। তাই আজ সারা রাত জেগে পড়ে কাল সকালে পরীক্ষা দিতে যাব। পরীক্ষাটা আগে হয়ে যাক। তার পর প্র্যাকটিস শুরু করব।’’

কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে তত পরিস্থিতির চাপে পরীক্ষাকে পিছনের সারিতে ঠেলে রাজীব গাঁধী খেলরত্ন সম্মানকে অগ্রাধিকার দিতে হয়েছে দীপাকে। ২৯ অগস্ট রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাত থেকে দেশের সর্বোচ্চ ক্রীড়াসম্মান নেওয়ার কথা দীপার। কিন্তু ৩০ অগস্ট পর্যন্ত তাঁর পরীক্ষা রয়েছে। তা হলে উপায়? শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছে খেলরত্ন নিতে দিল্লি উড়ে যাবেন দীপা। তার আগে যতগুলো সম্ভব পরীক্ষা দিয়ে যাবেন। আর যে সব পরীক্ষায় বসতে পারবেন না, সেগুলোয় আবার পরে বসবেন।

সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ আগরতলার সিঙ্গারবেলি বিমানবন্দরে কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীর সঙ্গে দীপা পা রাখার অনেক আগে থেকেই শ’পাঁচেক মানুষ অপেক্ষা করছিলেন তাঁর জন্য। দেশের জিমন্যাস্টিক্সের সোনার মেয়েকে দেখেই সেই ভিড় চেঁচিয়ে ওঠে, ‘ওই তো আমাদের দীপা।’ শুভেচ্ছার মালায় প্রায় ঢেকে যাওয়াও চলল যথারীতি।

বিমানবন্দর থেকে কোচকে পাশে নিয়ে হুডখোলা জিপে এর পর রওনা দেন বিবেকানন্দ স্টেডিয়ামে। সংবর্ধনা নিতে। জিপের আগে শ’খানেক মোটরবাইকের কনভয়। সবাই ছুঁতে চায় সোনার মেয়েকে। পথে যত স্কুল পড়ল তার সব খুদে পড়ুয়াও আজ দাঁড়িয়ে ‘দীপাদিদি’কে এক বার দেখার জন্য। বলার জন্য, ‘দীপাদি তুমি আমাদের হিরো।’

তবু একটা কষ্ট যেন কিছুতেই যাচ্ছে না দীপার। সংবর্ধনা মঞ্চে যার কিছুটা আভাস পাওয়া গেল তাঁর কথায়, ‘‘দেশকে পদক দিতে না পেরেও যে ভাবে সবার শুভেচ্ছা, অভিনন্দন পাচ্ছি তাতে আপ্লুত। তবে আমার পরের টার্গেট টোকিও অলিম্পিক্স। এ বার আর পদক ফস্কাতে চাই না।’’ গ্যালারি আর মাঠে থাকা প্রায় হাজার পাঁচেক মানুষের সামনে যেন জ্বলে উঠল প্রতিজ্ঞার দীপ। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলছিলেন, ‘‘দীপা পদক না পাওয়ায় আমার কোনও আফসোস নেই। অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ, এটাই তো বড় সাফল্য ওর।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন