কীর্তির পরেও উষাদের পাশে নিজেকে রাখছেন না দীপা

সারারাত দু’চোখের পাতা এক করেননি দু’জনে। কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী আর দীপা কমর্কার শুধুই ভেবেছেন এত কাছে এসেও পদকটা হল না। ‘‘জানেন, পঞ্চম বা ষষ্ঠ হলে এত দুঃখ ছিল না। চার নম্বর হলাম, মাত্র ০.১৫০ পয়েন্টের জন্য। এই আফসোস কিছুতেই যাচ্ছে না আমার।’’ বলছিলেন সারা রাত না ঘুমানো দীপার কোচ।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

রিও দে জেনেইরো শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৬ ০২:০১
Share:

সারারাত দু’চোখের পাতা এক করেননি দু’জনে। কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী আর দীপা কমর্কার শুধুই ভেবেছেন এত কাছে এসেও পদকটা হল না।

Advertisement

‘‘জানেন, পঞ্চম বা ষষ্ঠ হলে এত দুঃখ ছিল না। চার নম্বর হলাম, মাত্র ০.১৫০ পয়েন্টের জন্য। এই আফসোস কিছুতেই যাচ্ছে না আমার।’’ বলছিলেন সারা রাত না ঘুমানো দীপার কোচ। পাশে বসে দীপার সান্ত্বনা, ‘‘স্যার আমি সেরাটা করেছি। পরের বার ঠিক পদক আনব দেখে নেবেন।’’ কিন্তু কোচ তাতেও বিমর্ষ।

বিশ্বেশ্বর বারবার বলছিলেন, ‘‘সবাইকে বলে দেবেন দেশকে আমার ছাত্রী একটা পদক দিতে পারল না বলে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। আমরা সৎ ভাবে চেষ্টা করেছি। সাই বা সরকার যে ভাবে আমাদের সাহা়য্য করেছে তাতে আমরা কৃতজ্ঞ। পদক দিতে পারলে সবাইকে আনন্দ দিতে পারতাম।’’ বলতে বলতে বুজে আসে তাঁর গলা। ‘‘কাল সারারাত আমরা বিশ্লেষণ করেছি কেন এমন হল। যা হওয়ার ছিল তা তো করেইছি।’’

Advertisement

কখন বুঝলেন আর পদক হবে না? বিশ্বেশ্বরবাবু বললেন, ‘‘যখন দেখলাম আমার ছাত্রী তিন নম্বরে নেমে এসেছে। আর এর পর রয়েছে সিমন বাইলস। তখনই ধরে নিয়েছিলাম আর হল না।’’

কোচ হতাশায় ডুবে থাকলেও এর মধ্যেই নিজেকে অনেকটাই গুছিয়ে নিয়েছেন দীপা। তাঁর পরের কথাগুলোতেই বেরিয়ে এল করে দেখানোর জেদটা। যা তাঁকে সিমোন বাইলসের মতো বিশ্বের সর্বকালের সেরাদের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার শক্তি জোগায়। বলে দিলেন, ‘‘আমি মনে করি না হতাশ হওয়ার কোনও কারণ আছে। এটা আমার প্রথম অলিম্পিক্স। রিওয় পদক পাব ভেবে তো আসিনি। কিন্তু চার বছর পর টোকিওয় আমার টার্গেট থাকবে সোনা জেতা। তার জন্য নিজের সেরাটা দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিতে হবে।’’

অবশ্য রিওয় ফাইনালের দুই ভল্ট মিলিয়ে গড় স্কোর ১৫.০৬৬ এখনও পর্যন্ত দীপার সেরা। ‘‘পারফরম্যান্সে আমি কিন্তু খুশি। এখানে প্রথম লক্ষ্য ছিল দু’টো ভল্টেই স্কোরে উন্নতি করা। সেটা হয়েছে। আজ পর্যন্ত যতটুকু শিখেছি, সেটা করে দেখাতে পেরেছি। ফাইনালে জীবনের সেরা স্কোর করেছি। কিন্তু যারা পদক জিতল তারা আমার চেয়ে ভাল করেছে। হতে পারে দিনটা আমার ছিল না,’’ বলতে বলতে একটু আনমোনা যেন।

রবিবারের ফাইনালে আট প্রতিযোগীর মধ্যে দীপা ভল্ট দিতে আসেন ছ’নম্বরে। তাঁর আগে ভল্ট দেন উত্তর কোরিয়া, চিন, কানাডা, উজবেকিস্তান এবং সুইৎজারল্যান্ডের পাঁচ মেয়ে। দীপা যখন নিজের প্রথম ভল্ট, সুকাহারার ৭২০ ডিগ্রি টার্নের দৌড় শুরু করেন তখনও কেউ ভাবেনি পদকের দাবিদার হয়ে উঠতে পারেন তিনি। প্রথম ভল্টেই স্কোর ১৪.৮৬৬। যেটা দেখে নিয়েই দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে যেতে শুরু করেন নিজের দ্বিতীয় এবং বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক ‘মৃত্যু ভল্ট’ প্রোদুনোভার জন্য দৌড় শুরুর নির্দিষ্ট মার্কের দিকে।

আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এবং ‘প্রায় নিখুঁত’ ভল্ট শেষ করার পর হাততালিতে ফেটে পড়ল স্টেডিয়াম। বিশ্বেশ্বর বলছিলেন, ‘‘ভল্টটাকে ‘প্রায় নিখুঁত’ বলব কারণ ল্যান্ডিংয়ে ও খুব নিচু হয়ে গিয়েছিল। ও যদি দাঁড়ানো পজিশনে শেষ করত তা হলে আজ সোনা আসতই।’’

ত্রিপুরার মেয়ে অবশ্য কী হতে পারত তাতে পড়ে থাকতে চান না। বললেন, ‘‘আমাদের কোনও বিদেশি ট্রেনিং নেই। যা শিখেছি আমার কোচের কাছে। স্রেফ তিন মাসের প্রস্তুতিতে অলিম্পিক্সে নেমেছি। চতুর্থ হওয়ার মধ্যে তাই কোনও লজ্জা নেই। দেশবাসী যে ভাবে আমাকে সমর্থন দিয়েছেন, তার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। ’’

ভারতে তাঁর সঙ্গে মিলখা সিংহ, পিটি উষার তুলনা হচ্ছে শুনে অবশ্য অবাক। একটু যেন লজ্জাই পেলেন। বললেন, ‘‘ওঁরা মহান। আমি যদি দেশকে কোনও দিন অলিম্পিক্স সোনা দিতে পারি, একমাত্র তা হলেই ওঁদের ধারেকাছে পৌঁছতে পেরেছি বলে মনে করব।’’

বোঝাই যাচ্ছে এখন থেকেই টোকিও ঘুরছে ত্রিপুরার মেয়ের মাথায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন