ওঁদের সঙ্গে দয়া করে আমার তুলনা টানবেন না

ইতিহাস গড়েও সন্তুষ্ট নন। আত্মতুষ্টি তো ননই। বরং এএফসি কাপ সেমিফাইনালের জোড়া গোলের নায়ক তাঁর নতুন মিশন নিয়ে বুঁদ। বৃহস্পতিবার সকালে বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে আনন্দবাজার-কে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন সুনীল ছেত্রী। প্রশ্ন: ভাইচুং ভুটিয়া আপনাকে সর্বকালের সেরা ভারতীয় স্ট্রাইকার বলেছেন। জানেন? সুনীল: ভাইচুং ভাই অনেক ব়ড় মনের মানুষ। তাই আমাকে সর্বকালের সেরা বলেছে। এত বড় সম্মান পাওয়ার যোগ্য আমি এখনও হয়ে উঠিনি বলে অন্তত আমার নিজের ধারণা।

Advertisement

প্রীতম সাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৪৯
Share:

প্রশ্ন: ভাইচুং ভুটিয়া আপনাকে সর্বকালের সেরা ভারতীয় স্ট্রাইকার বলেছেন। জানেন?

Advertisement

সুনীল: ভাইচুং ভাই অনেক ব়ড় মনের মানুষ। তাই আমাকে সর্বকালের সেরা বলেছে। এত বড় সম্মান পাওয়ার যোগ্য আমি এখনও হয়ে উঠিনি বলে অন্তত আমার নিজের ধারণা।

Advertisement

প্র: ভাইচুং তো আপনাকে প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, চুনী গোস্বামী, তুলসিদাস বলরামের উপরেও রেখেছেন!

সুনীল: আরে না, না। ওঁরা হলেন কিংবদন্তি। প্রদীপদা, চুনীদা, ভাইচুং ভাইদের দেখানো পথেই আমরা হাঁটছি। চেষ্টা করছি ভারতীয় ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। প্লিজ, ওঁদের সঙ্গে আমাকে তুলনা করবেন না। তা ছাড়া একটা আমলের ফুটবলারের সঙ্গে অন্য একটা আমলের ফুটবলারের তুলনা হয় না। ছোট মুখে বড় কথা শোনাবে হয়তো। কিন্তু মারাদোনার সঙ্গে মেসির তুলনা হয়? কিংবা পেলের সঙ্গে নেইমারের?

প্র: কিন্তু পরিসংখ্যান? ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার মুকুট তো আপনার মাথাতেই?

সুনীল: নিছক পরিসংখ্যান দিয়ে এক জন প্লেয়ারের ক্লাস মাপা যায় না। পেলে এক হাজার গোলের মালিক। মারাদোনার সেখানে সর্বসাকুল্যে তিনশো গোল হবে কি না সন্দেহ। তা হলে কি মারাদোনা কিংবদন্তি নন? একটা কথা মনে রাখবেন— ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট, ফর্ম ইজ টেম্পোরারি।

প্র: ভাইচুং আপনার কাছে একটা আবদার করেছে!

সুনীল: কী?

প্র: ভারতের হয়ে প্রথম একশো গোল করার আবদার।

সুনীল: ওরে বাবা! সবে তো হাফ সেঞ্চুরি করলাম। সেঞ্চুরি তো অনেক দূর (হাসতে হাসতে)। তবে ভাইচুং ভাই যখন বলেছে, নিশ্চয়ই আপ্রাণ চেষ্টা করব।

টিম বাসের সিটে পড়ে থাকা ভক্তের সেই চিঠি। ছবি: টুইটার।সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন।

প্র: ইতিহাস গড়ার ম্যাচে জোড়া গোল কাকে উৎসর্গ করতে চান?

সুনীল: পুরো বেঙ্গালুরু টিমকে। গোলগুলো হয়তো আমার পা থেকে এসেছে। কিন্তু এই রেজাল্টের পিছনে আমাদের গোটা টিমের অবদান আছে। বেঙ্গালুরুর শক্তিই টিমগেম। হারলে গোটা টিমের ব্যর্থতা। জিতলে গোটা টিমের সাফল্য।

প্র: বুধবারের রাতটা কী ভাবে সেলিব্রেট করলেন?

সুনীল: খেলার পরে আমাদের ড্রেসিংরুমে নাচানাচি হয়নি বলব না। তবে সত্যি বলতে কী, সেলিব্রেশনটা এফএফসি কাপ ফাইনালের জন্য তুলে রেখেছি। কাল আমার মা-বাবা-বোন খেলা দেখতে মাঠে এসেছিল। ওদের সঙ্গে একটা আইসক্রিম পার্লারে গিয়েছিলাম।

প্র: আপনি তো মিষ্টি খেতে খুব ভালবাসেন!

সুনীল: (হাসতে হাসতে)। বিশ্বাস করবেন কি না জানি না। প্রায় ছ’মাস বাদে কাল মন খুলে রসগোল্লাও খেলাম। আবার কবে কপালে জুটবে ভেবে সন্দেশের একটা বড় বাক্স আমরা চার জন মিলে শেষ করে দিলাম। বলতে পারেন, সেলিব্রেশনটা পরিবারের সঙ্গে মিষ্টি খেয়েই করেছি।

প্র: ম্যাচটার আগে বাংলার তিন প্রধানই আপনাদের শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিল তো!

সুনীল: এটা যে আমাদের বেঙ্গালুরুর কাছে কতটা তৃপ্তির ভাবতে পারবেন না। একটা ম্যাচ গোটা ভারতকে কাল রাতে একই সুতোয় বেঁধে ফেলেছিল। সাধারণ মানুষ থেকে সেলিব্রিটি, কেউ বাদ ছিলেন না সেই লিস্টে। টিম বাসের সিটে খোলা চিঠি পড়ে থাকা থেকে শুরু করে মাঠে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল পতাকাও উড়ছে! এক কথায় অভাবনীয় পরিবেশ। আসলে বেঙ্গালুরুকে নয়, দেশকে সমর্থন করছিলেন সবাই। এ রকম পরিস্থিতিতে যদি ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানও আসতে পারে, তা হলে বেঙ্গালুরু টিমও গর্ব বোধ করবে। মন খুলে ওদের সমর্থন করব আমরা।

প্র: কিন্তু ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান যা একশো বছরে করতে পারেনি, আপনারা মাত্র সাড়ে তিন বছরে করে দেখালেন!

সুনীল: এই ভাবে দেখাটা মনে হয় ঠিক নয়। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানেরও প্রচুর ইতিহাস আছে। ঐতিহ্য আছে। একটা এএফসি কাপ ফাইনালে এখনও পর্যন্ত খেলতে পারেনি বলে ওদের সাফল্যকে কোনও ভাবে ছোট করা যাবে না। বরং ওরাই তো ভারতীয় ফুটবলের পথ নির্দেশক। গর্ব। ওদের বাদ দিয়ে ভারতীয় ফুটবল হয় না।

প্র: বুধবারের সাফল্যকে কোথায় রাখবেন আপনি?

সুনীল: ভারতীয় ফুটবলে কোনও অ্যাচিভমেন্টই বড় বলা যায় না। কারণ আমরা যাই করি না কেন সব কিছু কমই থেকে যায়। তাই ইতিহাস গড়লেও আমাদের ফুটবলকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে হবে, যাতে আন্তর্জাতিক স্তরেও সম্মানের জায়গাটা করে নিতে পারি। আমরা তো আর বার্সেলোনা নই।

প্র: তা হলে আপনাদের এএফসি কাপ ফাইনালে ওঠা থেকে ভারতীয় ফুটবলের কোনও লাভ হল না?

সুনীল: সেটা হয়তো নয়। তবে এটাও ঠিক এএফসি কাপ না জিতলে এই ইতিহাসের কোনও দাম থাকবে না। লোকে এক দিন বলবে, দু’দিন বলবে, তিন দিনের দিন ভুলে যাবে। ট্রফি না পেলে কেউ মনে রাখবে না। ভারতীয় ফুটবল তখনই সঠিক মর্যাদা পাবে যখন আমরা এএফসি কাপ চ্যাম্পিয়ন হব। দাদার (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) টিম ইন্ডিয়া বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেছিল। কিন্তু সবাই বেশি মনে রাখে কপিল দেব আর ধোনির বিশ্বকাপ জয়কে। আমাদেরও ধোনির মতো ফিনিশার হতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন