দীপিকা। রিওয় প্রধান ভরসা।
পদক জিতে ইতিহাস গড়ার আশায় প্রায় সাড়ে তিন সপ্তাহ আগে রিও পৌঁছেছে ভারতীয় তিরন্দাজি দল। মূলত পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই পুরো টিমকে এত আগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
গত লন্ডন অলিম্পিকে আশা জাগিয়েও কিছু করতে পারেননি দীপিকা-জয়ন্ত-রাহুলরা। এ বার কি সেই প্রত্যাশা পূর্ণ হবে? রিওতে ফোনে ধরলে কয়েক মাস আগে সাংহাই বিশ্বকাপে রুপো জিতে ফেরা মেয়ে দলের সদস্য দীপিকাকুমারী বললেন, ‘‘আমাদের সব প্লেয়ারের ফোনে কথা বলার উপর নিষেধাজ্ঞা আছে।’’ ব্যক্তিগত পদক জেতার দৌড়ে যাঁর উপর সবথেকে বেশি নির্ভর করছেন কোচেরা, সেই সোনার মেয়ে কথা না বললেও দলের কোচ ধর্মেন্দ্র তিওয়ারি কিন্তু বলে দিয়েছেন, ‘‘পদক জেতার আশা নিয়েই আমরা এখানে এসেছি। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে র্যাঙ্কিং রাউন্ডের উপর।’’ আর এক কোচ পূর্ণিমা মাহাতো-র মন্তব্য, ‘‘এ বার আমাদের টিম যথেষ্ট অভিজ্ঞ। সবাই মিলে চেষ্টা করছে পদক জেতার। আমি আশাবাদী।’’
অলিম্পিক্সে প্রতিবারই তিরন্দাজরা পদক আনবেন বলে টুনার্মেন্ট শুরুর আগে প্রচণ্ড হইচই হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই জোটে না। গত বার লন্ডনে দীপিকাকুমারী, জয়ন্ত, রাহুলদের নিয়েও এক ঘটনা ঘটেছিল।
‘‘গতবারের সঙ্গে এ বারের টিমের তুলনা টানলে ভুল হবে। দীপিকার অলিম্পিক্স অভিজ্ঞতা ছিল না লন্ডনে। আর ছেলেদের টিম অনুশীলনই করতে পারেনি ওখানে। দশ দিন জ্বরে পড়েছিল সবাই। আমার মতে অভিজ্ঞতা এবং পারফরম্যান্সের বিচারে গতবারের চেয়ে অনেক ভাল এ বারের মেয়েদের টিম,’’ বলছিলেন দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়। আথেন্স আর বেজিং— জোড়া অলিম্পিক্সে দেশের হয়ে নামার অভিজ্ঞতা আছে যাঁর। রেলের স্পোর্টস অফিসার, ভারতীয় তিরন্দাজির অন্যতম সফল মুখ দোলা নিজের বক্তব্যের সপক্ষে যুক্তি দিয়ে বললেন, ‘‘এটা দীপিকার দ্বিতীয় আর বোম্বাইলার তিন নম্বর অলিম্পিক্স। দলের অন্য সদস্য লক্ষ্মীরাণীও গতবছর ডেনমার্ক বিশ্বকাপে প্রায় ব্রোঞ্জ পেয়ে গিয়েছিল। অল্পের জন্য চতুর্থ হয়। এ রকম সফল ও অভিজ্ঞ টিম সাম্প্রতিক কালে ভারত অলিম্পিক্সে পাঠায়নি।’’ প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দোলার আশা, ব্যক্তিগত রিকার্ভ ইভেন্টে দীপিকা এবং মেয়েদের টিম ইভেন্ট, এই দু’টো পদক আসবেই।
দোলার ভাই, অলিম্পিয়ান তিরন্দাজ রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য আশাবাদী টিমের ধারাবাহিক সাফল্য দেখে। ‘‘অতনু দাস গত দু’মাস খুব ভাল ছুড়ছে। আর মেয়েদের টিম তো তিন মাস আগে সাংহাই, তুরস্ক বিশ্বকাপে ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলেছে। পদক না আসলে তাই অবাকই হব। তবে আমাদের খেলাটার মজা হল সেই দিনটায় কে কেমন ছুড়ছে তার উপর নির্ভর করে অনেক কিছু।’’
রিও-র সাম্বাদ্রোমোয় (যেখানে সাম্বা নাচের উৎসব হয়) এ বার তিরন্দাজি ইভেন্ট হবে। সেই রেঞ্জেই এ বার প্রাক অলিম্পিক্সে খেলে এসেছেন রাহুল। বলছিলেন, ‘‘জায়গাটা অনেকটা ডিমের মতো। এক ফুট উঁচুতে উঠে তির ছুড়তে হয়। হাওয়া দেয় মাঝে মধ্যে। তবে আমাদের মূল লড়াই তো কোরিয়ানদের সঙ্গে।’’ তিরন্দাজির নিয়ম বদলেছে। আগে সব তির মিলিয়ে যত পয়েন্ট হত, তার যোগফলের উপর নির্ভর করত জয়-পরাজয়। এখন পাঁচ রাউন্ডের মধ্যে যে বেশি রাউন্ড জিতবে সেই জয়ী। ঠিক টেবল টেনিস বা টেনিসের মতো।
অভিজ্ঞতা, ধারাবাহিক পারফরম্যান্স, নতুন নিয়ম— সবই দীপিকা-অতনুদের পক্ষে। সেজন্যই তিরন্দাজির কর্তারা গেমস ভিলেজের বদলে এই চারজনকেই হোটেলে রেখে অনুশীলনের ব্যবস্থা করছেন। ‘‘আবহাওয়া ভাল। খুব একটা হাওয়াও নেই। তবে রাতের দিকে তাপমাত্রা নামছে। তিন দফায় আমরা অনুশীলন করছি। রাতে এক দফা করছি। এর আগে আমরা রাতে কখনও টুর্নামেন্ট খেলিনি। ব্যক্তিগত ইভেন্টের কিছু ম্যাচ শুনছি হবে রাতে। তবে আমরা তৈরি,’’ বলছেন দীপিকাদের কোচ।
এ বারের অলিম্পিক্সে ভারতের প্রথম দল হিসাবে রিও পৌঁছলেও মূল কোর্ট বা তার আশেপাশে অনুশীলন করার সুযোগ পাচ্ছেন না বোম্বাইলা-লক্ষ্মীরাণীরা। ভারতীয় তিরন্দাজি দল এখন যে হোটেলে রয়েছে সেটা রিও শহর থেকে প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে। জায়গাটার নাম মারিকা। ২২ জুলাই পর্যন্ত ওখানেই অনুশীলন হবে। এর পর পুরো দল চলে যাবে সান্ত্রোতে। যা সাম্বাদ্রোমোর খুব কাছে। ওখানে অনুশীলন করলে সমুদ্র সৈকতের আবহাওয়ার সঙ্গে অনেকটাই সড়গড় হতে পারবেন ভারতের তিরন্দাজরা।
ব্যক্তিগত ও দলগত তিনটি ইভেন্টে এ বার ছেলে এবং মেয়ে মিলিয়ে মোট চার জন তিরন্দাজ নামবেন। ছেলেদের টিম যোগ্যতামান পেরোতে ব্যর্থ হওয়ায় শুধু ব্যক্তিগত ইভেন্টে নামবেন বরাহনগরের অতনু দাস। তবে মেয়েদের ইভেন্টে দীপিকাকুমারী, বোম্বাইলাদেবী এবং লক্ষীরাণী মাঝি, তিন জনই নামবেন ব্যক্তিগত ও দলগত ইভেন্টে। ৬ অগস্ট থেকে শুরু হয়ে যাবে তিরন্দাজি। গতবারের মতোই সবার নজর থাকবে দীপিকাকুমারীর দিকেই। প্রাক্তন এই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন যদি অন্তত রুপো বা ব্রোঞ্জ না পান সেটা অঘটন হবে বলছেন দোলা-রাহুলরা। দেখার ঝাড়খন্ডের সোনার মেয়ে তিরন্দাজির পদক জিতে ইতিহাস গড়তে পারেন কি না?