হ্যাটট্রিকের হাসি। ছবি: এএফপি।
জিয়ানি ইনফ্যান্টিনোকে চেনা চেনা লাগছে না? ফিফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার পরে টুইটারজুড়ে একটাই প্রশ্ন। সেপ ব্লাটারের দু’দশকের কলঙ্কিত অধ্যায় ইতি হওয়ার পরে এ বার ইনফ্যান্টিনোর পালা ড্যামেজ কন্ট্রোলের। কিন্তু স্বয়ং ব্লাটার নতুন প্রেসিডেন্টকে ‘আশীর্বাদ’ করে বসেছেন এই ভাষায়— আমার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাও! গ্যারি লিনেকার যেমন টুইট করেছেন, ‘‘আমার তো মনে হচ্ছে জিয়ানি মুখোশ খুলবে আর ভিতর থেকে সেপ ব্লাটার বেরোবে।’’
ব্লাটারের উত্তরসূরি একদা উয়েফা জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন সেটা উইকিপিডিয়া ঘাঁটলেই দেখা যায়। কিন্তু যেটা অনেকের অজানা, ফিফার নতুন প্রধান ফুটবলের ‘ড্র ম্যান’ হয়ে উঠেছিলেন। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ড্র বা ইউরোপা লিগ সূচি যখন টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার হত, তখনই ইনফ্যান্টিনো সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকতেন। পাশাপাশি আবার ড্র-এ টিমও বাছতেন। গত কয়েক বছরে বার্সেলোনা বনাম বায়ার্ন মিউনিখ হোক, রিয়াল মাদ্রিদ বনাম বরুসিয়া ডর্টমুন্ড হোক, সমস্ত মেগা ম্যাচ হওয়ার পিছনে জিয়ানির অবদান!
তাই তো ফিফার হটসিট পাওয়ার পরক্ষণে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং প্রায় পুরোটা চলে যায় ইনফ্যান্টিনোর দখলে। ‘‘আরে এ তো সেই লোকটা যাকে টিভিতে দেখতাম চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ড্র করতে!’’ পোস্ট করেন এক অবাক সমর্থক। আবার আর একজনের পোস্ট, ‘‘ফুটবলের ড্র ম্যান সত্যিই অনুপ্রেরণা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ড্র করা থেকে ফিফার হটসিটে।’’ ম্যান অব দ্য উইক তাই ‘ফুটবলের ‘ড্র ম্যান’ জিয়ানি ইনফ্যান্টিনোই।
মাঠের ভেতর আবার আর এক অনন্য নজির! যত টুর্নামেন্ট এগোচ্ছে এ মরসুমে, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ততই যেন ১৯৯৫-এর সেই বিখ্যাত ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স-অধ্যায় হয়ে উঠছে। ব্ল্যাকবার্নের জায়গাটা নিয়েছে লেস্টার সিটি। ক্লডিও র্যানিয়েরির দলকে কত কথাই না শুনতে হয়েছিল এ বার ইপিএলের গোড়ার দিকে! প্রতিটা বেটিং ওয়েবসাইট লেস্টারের বিরুদ্ধে বাজি ধরেছিল। বিশেষজ্ঞরা আগেভাগে বলেছিলেন, ‘‘লেস্টার নামকা কা ওয়াস্তে টেবল টপার। আসল সময়ে অবনমনের জন্য লড়বে।’’ ২৮ ম্যাচ কেটে গিয়েছে। এখনও ‘শেয়াল’-রাই ইউরোপের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবল লিগে শীর্ষে।
এক লেস্টার সমর্থক মরসুমের শুরুতে পঁচিশ হাজার পাউন্ড বাজি ধরেছিলেন প্রিয় ক্লাবের ইপিএল জেতার পক্ষে। তখন তাঁকে বাড়ির লোকও পাগল বললেও এখন বলছে জিনিয়াস। কুড়ি বছর আগে কেনি ড্যালগ্লিসের ব্ল্যাকবার্ন জিতেছিল প্রিমিয়ার লিগ। লেস্টার সেই ইতিহাস ছোঁবে কি না সেটা সময়ই বলবে। কিন্তু এখনও আর্সেনাল, দুই ম্যাঞ্চেস্টার, লিভারপুল, চেলসি-সব বাঘা বাঘা দল লেস্টারের পিছনে। মঙ্গলবার রাতে ওয়েস্ট ব্রমের সঙ্গে লেস্টার ২-২ ড্র করায় টটেনহ্যাম, আর্সেনাল, ম্যান সিটির সামনে সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল শেয়ালদের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলার। কিন্তু তিনটে দলই হেরেছে নিজেদের ম্যাচ।
সপ্তাহের সেরা যিনি-ই হোন না কেন, মেসির বাঁ পায়ের কথা না বললে ইউরোপিয়ান ফুটবল শেষ হয় নাকি? লা লিগায় সেভিয়ার বিরুদ্ধে বার্সেলোনার ২-১ জয়ে মেসির ফ্রিকিক-ই তো শিরোনাম। মেসির ক্লাবের টানা ৩৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ডের দিন সেটা হওয়া সত্ত্বেও। বৃহস্পতিবার রাতে আবার রায়ো ভায়োকানো ম্যাচে মেসির হ্যাটট্রিকে বার্সা ৫-১ জেতায় তাদের টানা অপরাজিত থাকার সংখ্যা বাড়ল ৩৫-এ। আর এ মরসুমে লা লিগায় মেসি-গোল বেড়ে হয়েছে ৩৩। শুধু ২০১৬-তেই ২০ ম্যাচে ১৬ গোল এল এম টেনের।
আসলে রোনাল্ডো যখন মাদ্রিদ ডার্বি ০-১ হেরে সতীর্থদের কাঠগরায় দাঁড় করিয়েছেন, তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রমাণ করেছেন, ‘বেন্ড ইট লাইক বেকহ্যাম’ হয়ে ওঠাও তাঁর কাছে দুধভাত! ও রকম ফ্রিকিক বলে বলে মারেন লিও মেসি।