ডুডুর কান্না, সঞ্জয়ের ‘লজ্জার দিন’

লালকার্ড দেখে ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় যুবভারতীর টানেলের সিঁড়িতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন ডুডু ওমাগবেমি! মাঠে তখন দশ জনের মোহনবাগান টিমও হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ছে রফিক, ডু ডংদের আক্রমণের সামনে।

Advertisement

তানিয়া রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৩৭
Share:

লালকার্ড দেখার পরে ডুডুকে শান্ত করছেন বেলো। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

লালকার্ড দেখে ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় যুবভারতীর টানেলের সিঁড়িতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন ডুডু ওমাগবেমি!

Advertisement

মাঠে তখন দশ জনের মোহনবাগান টিমও হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ছে রফিক, ডু ডংদের আক্রমণের সামনে।

ডুডু লালকার্ড দেখার পরই লাল-হলুদ গ্যালারিতে উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল। জ্বলে উঠেছিল মশাল। অকাল হোলিতে মেতে উঠেছিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। আর সে সময় স্টেডিয়ামের ভিতর যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন মর্যাদার লড়াইয়ে হেরে যাওয়া ডুডু। ডুডুকে জোর করে ধরে টানেল থেকে ড্রেসিংরুমে নিয়ে যাওয়ার পথে ঘটল আরও বিপত্তি। যুবভারতীর কনফারেন্স রুমের সামনেই কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার। ধরাধরি করে ড্রেসিংরুমে ঢোকানো হলেও মাটিতে শুয়েই ছটফট করতে লাগলেন তিনি। পরে বলছিলেন, ‘‘ঘনিষ্ঠ কাউকে হারানোর চেয়ে কম যন্ত্রণা পাইনি এ দিন।’’

Advertisement

গত মরসুমে ইস্টবেঙ্গলকে লিগ চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন ডুডু-ই। এক বছর আগের লাল-হলুদের নায়ককে রবিবাসরীয় যুবভারতীতে সবুজ-মেরুনের খলনায়ক হয়েই থাকতে হল। শুধু লালকার্ড দেখাই নয়, গোলের সহজ সুযোগও এ দিন নষ্ট করেছেন তিনি। আক্ষেপ আর হতাশাগুলোই হয়তো দু’চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল। আপনাকে লালকার্ড দেখানোটা কি ঠিক হয়েছে? প্রশ্ন শুনেই রেগে উঠলেন শান্ত স্বভাবের ডুডু। ‘‘আমি লালকার্ড দেখার মতো কোনও অন্যায় করিনি। অকারণে আমাকে মাঠ থেকে বার করে দেওয়া হল।’’

বাড়ি ফেরার পর ডুডুকে ফোনে ধরা হলে অবশ্য রাগের বদলে আফসোসের সুর শোনা গেল। বলছিলেন, ‘‘আমি মোহনবাগানকে জেতাতে পারিনি। সিনিয়র হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল। কোচ এবং ক্লাব আমার উপর ভরসা করেছিল। ডুডু টিমে থাকা সত্ত্বেও চার গোল খেয়েছে মোহনবাগান। মানতে কষ্ট হচ্ছে।’’

৭ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে কলকাতা লিগের শেষ সারিতে রয়েছে আই লিগ চ্যাম্পিয়নরা। এমন উলটপুরাণের কথা কি দুঃস্বপ্নেও ভেবেছিলেন ভারত সেরা কোচ সঞ্জয় সেন? ‘‘এ দিনের হারটা আমার কাছে লজ্জার। এই হারের দায় আমার। লিগে খারাপ রেজাল্টের দায়ও আমার।’’

সঞ্জয়ের লজ্জা বা ডুডুর কান্না ছাড়াও খেলার শেষে রেফারিকে ধাক্কা মেরে লালকমলের লালকার্ড, ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের সঙ্গে বাগান কর্তাদের হাতাহাতি এবং যা নিয়ে অল্প সময়ের জন্য পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠা, রেফারির সিদ্ধান্তে ড্রেসিংরুমে ফিরে ক্ষুব্ধ কাতসুমির নাগাড়ে জলের বোতল ছুড়ে ফেলা, সনি নর্ডির বন্ধু আভাস্কার কার্যত বিদায়ের ঘণ্টা বেজে যাওয়া— এত সব ঘটনার মাঝেও সাংবাদিক সম্মেলনে এসে সঞ্জয়ের নতুন চ্যালেঞ্জ ‘‘এ বার খারাপ ফল হয়েছে ঠিকই, পরের টুর্নামেন্টগুলোয় মোহনবাগান ফুটবলাররা কী রকম খেলে দেখিয়ে দেবে,’’ বাগান সমর্থকদের উজ্জীবিত করতেই পারে। নতুন করে স্বপ্নও দেখতে পারেন তাঁরা। কারণ, গত মরসুমে ফেড কাপের ব্যর্থতার পর সঞ্জয় বলেছিলেন, ‘‘ফেড কাপ হেরেছে তো কী হয়েছে, আই লিগে আমার ছেলেরা দেখিয়ে দেবে!’’

গত মরসুমের পুনরাবৃত্তি আদৌ এই মরসুমে হয় কি না, সেটাই দেখার! প্রবাদ তো রয়েছেই, আজ যে ফকির, কাল সে রাজা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন