ক্যাম্পার ভ্যানের ভবঘুরে এখন উইম্বলডন মাতানো নতুন বম্বার

বরিস বেকারের পর তিনিই টেনিস সার্কিটে সবচেয়ে নামী জার্মান তারকা হিসেবে উঠে আসছেন। যদিও দু’জনের মধ্যে মিল প্রায় নেই। শুধু জিভে ‘পিয়ারসিং’ই নয়, তাঁর বুকে বিরাট ট্যাটু আর লম্বা পাকানো চুলের ঢল তা বলে দিচ্ছে। উইম্বলডনে শোরগোল ফেলে দিতেও তো তাঁকে ৩০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল। বেকার যে হইচইটা ফেলে দিয়েছিলেন মাত্র ১৭ বছর বয়সেই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ০৩:৫০
Share:

বরিস বেকারের পর তিনিই টেনিস সার্কিটে সবচেয়ে নামী জার্মান তারকা হিসেবে উঠে আসছেন। যদিও দু’জনের মধ্যে মিল প্রায় নেই।

Advertisement

শুধু জিভে ‘পিয়ারসিং’ই নয়, তাঁর বুকে বিরাট ট্যাটু আর লম্বা পাকানো চুলের ঢল তা বলে দিচ্ছে। উইম্বলডনে শোরগোল ফেলে দিতেও তো তাঁকে ৩০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল। বেকার যে হইচইটা ফেলে দিয়েছিলেন মাত্র ১৭ বছর বয়সেই।

তবে একটা ব্যাপারে দু’জনের মিল আছে। আশির দশকে ‘ডের বম্বার’ যেমন নামী প্রতিপক্ষদের হারিয়ে চমকে দিয়েছেন, তিনিও বৃহস্পতিবার সেটাই করে দেখালেন। দু’বারের চ্যাম্পিয়ন রাফায়েল নাদালকে উইম্বলডন থেকে ছিটকে দিয়ে। তিনি— ডাস্টিন ব্রাউন। এস ডব্লিউ নাইনটিনের নতুন মহাঅঘটনকারী।

Advertisement

স্প্যানিশ তারকার বিরুদ্ধে জয়টা যাঁর কাছে শুধু সাফল্য নয়, পুরস্কার। বছরের পর বছর প্রচুর কষ্ট করে টেনিস শেখা চালিয়ে যাওয়ার, ক্যাম্পার ভ্যানে দিনের পর দিন ইউরোপ জুড়ে টেনিস টুর্নামেন্ট খেলতে চষে বেড়ানোর। একটাই লক্ষ্যে— পেট চালানোর জন্য যত বেশি সম্ভব ম্যাচ খেলা।

অবশ্য ব্রিটিশ প্লেয়ার হিসেবেও তিনি কেরিয়ার শুরু করতে পারতেন। কেন না ডাস্টিনের বাবা জামাইকান আর মা জার্মান হলেও তাঁর ঠাকুমা ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন। ফলে ডেভিস কাপে গ্রেট ব্রিটেনের প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা রয়েছে তাঁর। প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশ লন টেনিস সংস্থা তাঁর প্রস্তাব খারিজ করে দেয়। তাই প্রথমে কিছু দিন জামাইকার হয়ে নামলেও এখন তিনি জার্মানির।

শুধু টেনিস নয়। ফুটবল, হ্যান্ডবল আর জুডোতেও তিনি রীতিমতো দক্ষ। তবে কেরিয়ার হিসেবে বেছে নেন টেনিসকেই। যে সিদ্ধান্তে টিকে থাকা ডাস্টিন আর তাঁর পরিবারের কাছে সহজ ছিল না। জার্মানিতে ছেলের জুনিয়র টেনিসের খরচ চালাতে না পেরে ১১ বছর বয়েসে তাঁর পরিবার যেতে বাধ্য হয় জামাইকায়। পর্যটনে কাজ পাওয়ার আশায়। জার্মানিতে টেনিস শেখার নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ বদলে যায় মন্টেগো বে-র জীর্ণ পাবলিক টেনিস কোর্টে। যে বদলটা তাঁর টেনিসকে আরও কঠিন করে তুলেছে, জীবনকে নতুন করে দেখতে শিখিয়েছে।

জামাইকা যে তাঁকে প্রভাবিত করেছে, সেটা ডাস্টিনের বুকে রেগে গায়ক ডেনিস ব্রাউনের ট্যাটু আর তাঁর মতো লম্বা চুল রাখাতেই স্পষ্ট। যে চুল নাকি তিনি শেষ কেটেছেন প্রায় ১৯ বছর আগে। যা নিয়ে কম প্রশ্ন সামলাতে হয়নি। ‘‘অনেকেই জানতে চান এত বড় চুলে ঘুরে বেড়ালে গরম লাগে না? আসলে চুলটার একটা কুলিং এফেক্ট আছে। মাথায় রোদ পড়তে দেয় না,’’ বলছেন ডাস্টিন।

শুধু স্টাইলই নয়, ছেলের মধ্যে যে টেনিস প্রতিভাও রয়েছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন ডাস্টিনের বাবা-মা। কিন্তু জামাইকায় টেনিস-পরিকাঠামো না থাকায় ছেলের স্বপ্ন আটকে ছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁরা ক্যাম্পার ভ্যান কিনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যাতে চড়ে ইউরোপের বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলতে যেতে পারে তাঁদের ছেলে। ডাস্টিন নিজেও স্বীকার করেছেন, ‘‘বাবা-মা বড়লোক ছিলেন না। কিন্তু আমার স্বপ্ন সত্যি করার জন্য এ ভাবেই সমর্থন করে গিয়েছেন।’’

২০০৪-এ ভ্যান কেনা। যার অর্থ শোধ দিতে গড়িয়ে যায় আরও ছ’বছর। গাড়ির নাম্বার প্লেটেও ছিল অভিনবত্ব। ‘সিই ডিআই ১০০’। সিই হল ডাস্টিনের জন্মস্থান সেলে। ডি তাঁর নাম। আই তাঁর মায়ের নাম, ইঙ্গে। আর ১০০ বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং, যেটা তিনি ভাঙতে চান।

তবে উঠতি তারকার স্বপ্ন দেখার শুরুর দিকের সময়টা খুব কঠিন কেটেছে। টুর্নামেন্ট খেলতে কোথায় না গিয়েছেন ডাস্টিন! বসনিয়া-হার্জেগোভিনার বাঞ্জা লুকা থেকে কাজাখস্তানের আলমাটিতেও।

অর্থের জন্য ডাস্টিনকে স্ট্রিংগিং মেশিনও কিনতে হয়েছে। যা দিয়ে অন্য প্লেয়ারদের র‌্যাকেটের স্ট্রিং ঠিক করে মিলত পাঁচ ইউরো। তিন বছর ক্যাম্পার ভ্যানে টুর্নামেন্ট খেলে বেড়ানোর পর অবশেষে ২০০৯-এ সাফল্যের মুখ দেখেন ডাস্টিন। গত বছর কেরিয়ার সেরা র‌্যাঙ্কিং ৭৮-এও পৌঁছন। এখন তাঁর র‌্যাঙ্কিং অবশ্য ১০২। যদিও ডাস্টিন এখন ক্যাম্পার ভ্যান ত্যাগ করেছেন। তবে তাঁর আয় ফুলেফেঁপে উঠেছে ভাবলে ভুল হবে। এখনও পর্যন্ত চলতি মরসুমে তাঁর আয়ের পরিমাণ মাত্র ২৫ হাজার পাউন্ড। নাদাল বধের চমকের পর যা ৫০ হাজার পাউন্ডে উঠতে পারে।

সে যাই হোক, এত দিনের পরিশ্রম যে শেষ পর্যন্ত সফল, তাতেই খুশি ডাস্টিন। তাই নাদাল-বধের পর তিনি বলেছেন, ‘‘এর আগে কোনও দিন সেন্টার কোর্টে খেলিনি। তাই ভেবেছিলাম খেলতে সমস্যা হবে। কিন্তু এখানে বেশ চেনা পরিবেশে আছি বলেই মনে হচ্ছে।’’

রক্তের স্বাদটা পেয়ে গিয়েছেন ডাস্টিন ব্রাউন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন