ডাচ বরাত পেয়েও হারাল বঙ্গ হকি

রাজ্য সংস্থার কর্তাদের ক্ষমতা দখলের মারামারিতে পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে তাতে বিশ্ব হকির পেনাল্টি কর্নারের ‘জাদুকর’ ফ্লোরিস ইয়ান বোভেলেন্ডারের সাহায্য থেকে বঞ্চিত হতে চলেছে বাংলার হকি।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:১৪
Share:

খারিজ: বাংলার হকির উন্নতির চেষ্টা করেও ব্যর্থ বোভেলেন্ডার।

নেদারল্যান্ডস কিংবদন্তির হাত ধরে বাংলার মৃতপ্রায় হকির ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত মুখ থুবড়ে পড়ল।

Advertisement

রাজ্য সংস্থার কর্তাদের ক্ষমতা দখলের মারামারিতে পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে তাতে বিশ্ব হকির পেনাল্টি কর্নারের ‘জাদুকর’ ফ্লোরিস ইয়ান বোভেলেন্ডারের সাহায্য থেকে বঞ্চিত হতে চলেছে বাংলার হকি। কারণ নেদারল্যান্ডসের হয়ে তিনটি অলিম্পিক্সে প্রতিনিধিত্ব করা বোভেলেন্ডা-ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সরকার ও রাজ্য হকি সংস্থার চুক্তি শেষ পর্বে এসেও বিশ বাঁও জলে।

বাংলায় কী করতে চেয়েছিলেন আথেন্স অলিম্পিক্স ও লাহোর বিশ্বকাপের সোনাজয়ী নেদারল্যান্ডসের প্রাক্তন তারকা। রাজ্য হকি সংস্থার পদত্যাগী প্রেসিডেন্ট নুমি মেহতা বলছিলেন, ‘‘প্রত্যেকটি জেলায় দশটি করে স্কুল বেছে নিয়ে প্রতিশ্রুতিমান হকি খেলোয়াড় তুলে আনার পরিকল্পনা ছিল বোভেলেন্ডারের।

Advertisement

হকির সরঞ্জাম দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিটি স্কুলে কৃত্তিম টার্ফের মতো মসৃন ম্যাটও পাতার চুক্তিও হত।’’ জানা গিয়েছে, এখানেই অবশ্য থেমে থাকতে চাননি নেদারল্যান্ডসের হকি-দূত। হকির উন্নতির জন্য নিজের ফাউন্ডেশন থেকে টাকা দিয়ে বাংলায় কোচিং সেন্টার, আধুনিক ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা এবং ‘সেন্টার অব এক্সেলেন্স’ তৈরি করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। জায়গাও বাছা হয়ে গিয়েছিল। অন্তত তিন বার কলকাতায় এসে বেভেলেন্ডারের মতো মানুষ সবকিছু নিয়ে আলোচনা করে গিয়েছেন। রাজ্য সরকারের ক্রীড়া সচিব ও বিএইচএ কর্তাদের সঙ্গে দিন কুড়ি আগেও শহরে এসে শেষ বার সভা করেছেন। বাকি ছিল শুধু চুক্তি। নভেম্বর মাঝামাঝি কাজ শুরুর কথা ছিল। যা হলে বাংলায় হয়তো ফিরে আসত হকির সোনার দিন। ফিরত লেসলি ক্লডিয়াস, কেশব দত্ত, গুরবকস সিংহদের জমানা।

কিন্তু কোথায় কী? যিনি এই প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা সেই হকি সংস্থার প্রেসিডেন্টের হঠাৎ পদত্যাগের পর সবই তো ডামাডোল। কর্তারাও নির্বাচন নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ব্যস্ত। আন্তর্জাতিক ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের জার্সিতে ২৪১ ম্যাচে ২১৬ গোল করার দুর্লভ সম্মান যাঁর হাতে, সেই বেভেলেন্ডার তাঁর পাঠানো শেষ চিঠিতে লিখেছেন, ‘‘বাংলায় প্রচুর প্রতিশ্রুতিমান হকি খেলোয়াড় আছে। এখানে শুনেছি প্রচুর অলিম্পিয়ান আছেন যাঁরা আমার মতোই অলিম্পিক্সে পদক জিতেছেন। সে জন্যই বাংলাকে অন্যতম কেন্দ্র হিসাবে বেছেছিলাম।’’

বেভেলেন্ডার হতাশ হয়ে রাঁচি এবং জামসেদপুরে দুটি ট্রেনিং সেন্টার তৈরি করছেন এখন। বাংলার কী হবে? নুমি বললেন, ‘‘আমি কী বলব? ঝামেলা দেখে বিরক্ত হয়ে আমি সরে গিয়েছি। নভেম্বরের শুরুতে চুক্তি করবে বলে বেভেলেন্ডার দেশে চলে গিয়েছিল। বারবার মেসেজ করছে। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি তাতে আমি ওকে ডেকে কী বলব? যে আসবে সে করুক।’’

এমনিতে রাজ্য হকির হাল খুব খারাপ। কৃত্তিম টার্ফে খেলা হয় না বলে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডানের মতো জনপ্রিয় ক্লাব টিম তুলে দিয়েছে বহু দিন। হকি লিগ হয়, তবে তা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ঘাসের মাঠে নাম কা ওয়াস্তে। প্রচারের আলোয় আসে না। দেশের অন্যতম ঐতিহ্যশালী টুর্নামেন্ট বেটন কাপ হয় সাইতে। দর্শকদের খেলা দেখার সুযোগ প্রায় নেই সেখানে। দশকের পর দশক চলে গিয়েছে কোনও অ্যাস্ট্রোটার্ফ তৈরি করতে পারেননি রাজ্য হকি কর্তারা। নিজেদের পদ আঁকড়ে বসে থেকেছেন। বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

হকি ইন্ডিয়ার নির্দেশ মেনে ১০৯ বছরের বেঙ্গল হকি অ্যাসোসিয়েশনের নাম বদলেছে। হয়েছে ‘হকি বেঙ্গল’। সর্বভারতীয় সংস্থার গঠনতন্ত্র নির্বাচনে প্রয়োগ করা নিয়েই যাবতীয় ঝামেলা। অনেকদিন নির্বাচন হয়নি সংস্থায়। তাই সবাই খুঁজছে পদ। তাতে হকি উঠে যাক ক্ষতি নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন