তিনি ছেলে না মেয়ে, অনেক যুদ্ধের পর সেই বিতর্ক থেকে বেরিয়ে আসা দ্যুতি চন্দ্রর স্বপ্ন ছিল অলিম্পিক্সের ট্র্যাকে নামা। সেটা সফল হয়েছে। উসেইন বোল্টের ভক্ত ওড়িশার গোপালপুরের মেয়ে দ্যুতি চন্দ। বোল্টের ফেভারিট ইভেন্ট, ১০০ মিটারে রিওতে নামার সুযোগ পাচ্ছেন তিনি।
স্প্রিন্ট কুইন পিটি উষার ছত্রিশ বছর আগের মস্কো অলিম্পিক্সের হিটে গড়া ১২.২৭ সেকেন্ডের রেকর্ড ভেঙে ১১.২৪ সেকেন্ডে শেষ করে শুধু নতুন রেকর্ডই গড়েননি দ্যুতি, সেই সঙ্গে রিওর ছাড়পত্রও জোগাড় করে নিয়েছেন তিনি।
বুধবার রাতে নয়াদিল্লিতে একটি সংবর্ধনা সভায় এসে দ্যুতি চন্দ বলছিলেন, ‘‘সকলেই ১০০ মিটার দৌড় নিয়ে নানা রকম কথা বলে। কিন্তু তারা কেউ ১০০ মিটার দৌড়নোর চেষ্টাও করেন না। অ্যাথলেটিক্সে নামার প্রথম দিন থেকেই আমি কিন্তু স্বপ্ন দেখতাম অলিম্পিক্সে ১০০ মিটারে দৌড়নোর। নিজের স্বপ্নকে সফল করতে পেরে আমি গর্বিত।’’
এই রেকর্ড গড়ার আগে দ্যুতি চন্দের কোচ এন রমেশ সব সময়ই দ্যুতিকে ২০০ মিটার ও ৪০০ মিটারে কোয়ালিফাই করার চেষ্টা করতে বলতেন। দ্যুতি বলছিলেন, ‘‘আমার স্যার সব সময়ই আমাকে ২০০ ও ৪০০ মিটারে ফোকাস করতে বলতেন। স্যারের কথা মেনে আমিও সেটাই করতাম। কিন্তু আমার স্বপ্ন সব সময়ই ছিল ১০০ মিটারে দৌড়নোর। সে কথা স্যারকে জানাতেই তিনি শেষ পর্যন্ত আমাকে ১০০ মিটারেও দৌড়নোর অনুমতি দেন।’’
দ্যুতিই ভারতের প্রথম অ্যাথলিট যিনি ছত্রিশ বছর পরে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে রিও অলিম্পিক্সে নামবেন। তবে তার জন্য নিজের উপর কোনও চাপ নিতে প্রস্তুত নন তিনি। বললেন, ‘‘রিওতে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে নামার জন্য আমার উপর কোনও চাপ নেই। আমার কাজ হল দেশের হয়ে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে নামার। আমি জানি অলিম্পিক্সের এই ইভেন্টটা খুব উত্তেজনাপূর্ণ। গোটা বিশ্বের চোখ থাকে এই একটা ইভেন্টের উপর। তবে আমি এটাও জানি, রিওতে অনেকেই আমাকে সাপোর্ট করবে। আর সেটাই আমি উপভোগ করব।’’
দুঃখের ব্যাপার হল, ১০০ মিটার দৌড়ের অনুশীলনে দ্যুতির পার্টনার পাওয়া নিয়ে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। হায়দরাবাদে তিনি তাই ছেলে স্প্রিন্টারদের সঙ্গে অনুশীলন করতেন। মজার ব্যাপার হল, তাঁরা অনেকেই দ্যুতির সঙ্গে পাল্লা দিতে পরতেন না। দ্যুতি বলছিলেন, ‘‘ছেলেরাও বেশির ভাগ আমার সঙ্গে পেরে উঠত না। অবশ্য ওরা আমাকে প্রচুর সাহায্য করেছে।’’ তবে অলিম্পিক্সের ভারতীয় টিমে একশো মিটার স্প্রিন্টে তিনি একা মেয়ে। তাই অনুশীলনে অন্য কোনও মেয়েকে পার্টনার না পেয়ে সমস্যায় পড়ছেন। বলছিলেন, ‘‘অলিম্পিক্সের প্রস্তুতি টিমে একশো মিটারে আর কোনও মেয়ে না থাকায় সমস্যা হচ্ছে একটু। কোনও মেয়েকে দৌড়ের পার্টনার পেলে ভাল হত।’’
দ্যুতির উত্থানের পিছনে তাঁর কোচ এন রমেশের যতটা কৃতিত্ব, ঠিক ততটাই তাঁর বোন সরস্বতীর। দ্যুতি বললেন, ‘‘আমার বোন নিজের চাকরির টাকা থেকে অনেকটাই খরচ করে আমার ট্রেনিংয়ের পিছনে। বাকিটা ও সংসারে খরচ করে।’’ অগস্টে তাই গোটা দেশের মতোই রিওর দিকে তাকিয়ে থাকবেন দ্যুতির বোনও।