বাংলার ‌ফুটবলে অাঁধার

জাতীয় স্তরে পিছিয়ে পড়ছে দুই প্রধানও

ভারতীয় ফুটবলের মানচিত্রে দুই ঐতিহ্যশালী ক্লাব প্রায় বিলুপ্তির পথে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৪৬
Share:

ভারতীয় ফুটবলে মোহনবাগান শতবর্ষ পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় তিন দশক আগে। ইস্টবেঙ্গল শর্তবর্ষের দোরগোড়ায়। কিন্তু ভারতীয় ফুটবলের মানচিত্রে দুই ঐতিহ্যশালী ক্লাব প্রায় বিলুপ্তির পথে!

Advertisement

এই মুহূর্তে সিনিয়র জাতীয় দলে ইস্টবেঙ্গলের মাত্র এক জন ফুটবলার রয়েছেন। তিনি, সালামরঞ্জন সিংহ। মোহনবাগানের কেউ নেই! অথচ মাত্র পাঁচ বছর আগে পথ চলা শুরু করা বেঙ্গালুরু এফসির চার জন ফুটবলার রয়েছেন। এখানেই শেষ নয়। মাত্র এক বছর আগে আত্মপ্রকাশ ঘটানো আইএসএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি জামশেদপুর এফসিরও তিন জন ফুটবলার রয়েছেন সিনিয়র দলে। একই ছবি অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় দলেও। সেখানেও ইস্টবেঙ্গলের একমাত্র প্রতিনিধি সেই সালামরঞ্জন। মোহনবাগানের কেউ নেই।

কেন এই বেহাল অবস্থা কলকাতার দুই প্রধানের? সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান ও কিংবদন্তি ফুটবলার শ্যাম থাপার মতে পরিকল্পনার অভাবেই এই হাল। তিনি খোলাখুলি বলছেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি না যে, বাংলার প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলারের অভাব রয়েছে। প্রয়োজন নতুন প্রতিভা খুঁজে বার করে সঠিক ভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা। যা কলকাতার দুই প্রধান একেবারেই করে না। আমি বারবার দুই প্রধানের কর্তাদের বলেছি, যুব দলই ক্লাবের ভবিষ্যৎ। কিন্তু আমার কথার কেউ গুরুত্ব দেয়নি।’’

Advertisement

ইস্টবেঙ্গলের কর্তারা অবশ্য শ্যাম থাপার অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, ‘‘জাতীয় দলে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের মতো দলের ফুটবলারের সংখ্যা বেশি না থাকাটা হতাশাজনক ঠিকই। তবে দু’বছর আগেও কিন্তু ভারতীয় দলে আমাদের চার-পাঁচ জন ছিল।’’ যোগ করেন, ‘‘বাংলা থেকে প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার তুলে আনার ব্যাপারটা আমরাও গুরুত্ব দিচ্ছি। যুব দলের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে রঞ্জন চৌধুরীর হাতে। এ বছর ইস্টবেঙ্গলের অনূর্ধ্ব-১৮ দলে ২৩ জনের মধ্যে ১৯ জনই বাংলার। আশা করছি, দ্রুত জাতীয় দলে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারের সংখ্যা বাড়বে।’’ লাল-হলুদ কর্তাদের মতে, অচ্যূত বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঘা সোমের মতো কিংবদন্তি কোচেদের না থাকাও বাংলা থেকে প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার উঠে না আসার অন্যতম কারণ।

প্রশ্ন উঠছে তা হলে বেঙ্গালুরু এফসি, মিনার্ভা এফসির মতো নতুন ক্লাবগুলো কি করে একের পর এক ফুটবলার তুলে আনছে? অভিষেকেই আই লিগ জিতেছিল বেঙ্গালুরু। মিনার্ভা গত মরসুমে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন। দুই ক্লাবেরই কর্তাদের ব্যাখ্যা, ‘‘আমরা শুরু থেকে জোর দিয়েছিলাম, ফুটবলার তুলে আনার ব্যাপারে। ওরাই ভবিষ্যৎ।’’

মোহনবাগানের এক কর্তা আবার কাঠগড়ায় তুলছেন সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকেই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আই লিগে খেললে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া যায় না। এই কারণেই ফুটবলারদের কাছে আইএসএলের আকর্ষণ বেশি। তাই তারা আই লিগ খেলতে আগ্রহী নয়।’’ ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক আই এম বিজয়নের মতে আইএসএলে প্রতি ফুটবলারদের আকৃষ্ট হওয়ার মধ্যে কোনও অন্যায় নেই। বিজয়নের সঙ্গে একমত শ্যাম থাপাও। দুই প্রাক্তন তারকাই বলেছেন, ‘‘আইএসএলের সব চেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, বিদেশি তারকাদের সঙ্গে খেলার সুযোগ পাওয়া। এই প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারতীয় ফুটবল দ্রুত এগিয়েছে।’’

দুই প্রধানের জরিমানা: অনূর্ধ্ব-১৮ আই লিগের ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান ম্যাচকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল কলকাতা ময়দান। ম্যাচের পরে দুই প্রধানের সমর্থকেরা সংঘর্ষে জড়িয়েছিলেন। হাত ভাঙে ইস্টবেঙ্গলের এক মহিলা সমর্থকেরও। এই ঘটনার জেরে দুই প্রধানকেই জরিমানা করল সর্বভারতীর ফুটবল ফেডারেশন। গত ৪ নভেম্বর আইনজীবী ঊষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি মোহনবাগানকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ, ম্যাচের আয়োজক ছিল মোহনবাগান। ইস্টবেঙ্গলকে দিতে হবে দেড় লাখ টাকা। কারণ, লাল-হলুদ সমর্থকেরা সে দিন প্ররোচনামূলক ব্যানার নিয়ে মাঠে গিয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন