উপচে পড়া গ্যালারি রঙিন করলেন খাবরা

সত্তর, আশির দশক কি ফিরতে চলেছে ময়দানে! ইস্টবেঙ্গল মাঠে উপচে পড়া গ্যালারি। কাউন্টারের বাইরে দীর্ঘ লাইন এঁকে বেঁকে সাপের মতো চলে গিয়েছে প্রায় কাস্টমস তাঁবু পর্যন্ত। যেমনটা হত গৌতম-সুরজিৎদের জমানায়।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩৮
Share:

খাবরার গোল দিয়ে লাল-হলুদ মশালে অগ্নিসংযোগ। শনিবার। ছবি: উৎপল সরকার

ইস্টবেঙ্গল-১(হরমনজ্যোৎ খাবরা) : টালিগঞ্জ অগ্রগামী-০

Advertisement

সত্তর, আশির দশক কি ফিরতে চলেছে ময়দানে!

ইস্টবেঙ্গল মাঠে উপচে পড়া গ্যালারি। কাউন্টারের বাইরে দীর্ঘ লাইন এঁকে বেঁকে সাপের মতো চলে গিয়েছে প্রায় কাস্টমস তাঁবু পর্যন্ত। যেমনটা হত গৌতম-সুরজিৎদের জমানায়।

Advertisement

লাইভ কভারেজের যুগে হঠাৎই পিলপিল করে হাজির এত দিন ডোডো পাখি হয়ে যাওয়া ‘ময়দানি অভিভাবকরা’। মাঠ আলো করে ভিতরে তো রইলেনই। বাইরেও ম্যাচ চলাকালীন তাঁদের হাজার সাতেক প্রতিনিধি ঘুরঘুর করলেন টিকিট না পেয়ে। সাম্প্রতিক অতীতে যা বিরল দৃশ্য ময়দানে। শুধুই কি প্রিয় দলের টানা ষষ্ঠ বার লিগ জয়ের সোনালি স্বপ্নে?

এঁরাই কলকাতার ফুটবলঅন্তপ্রাণ দর্শক। অতীতে যাঁদের কেউ অতীতে কলেজ-ছুট হয়ে, অফিস কেটে, প্রেমিকাকে মিথ্যা বলে, এমনকী ছেলেকে শ্মশানে দাহ করেও ভিড় জমাতেন কলকাতা লিগে বড় দলের খেলা দেখতে। আর তার পর পিকে-অমল, সুভাষ-সুব্রতদের ট্রামে, বাসে, বাজারে তিষ্ঠোতে দিতেন না— ওই গোলটা খাওয়ালেন? ওই গোলটা করতে পারলেন না? কিংবা আপনার ওই স্ট্র্যাটেজিটা ঠিক ছিল না। এ রকম হরেক বিশেষজ্ঞ-সুলভ ফোড়ন কেটে।

৮ অগস্ট, ২০১৫-তেও রেফারি প্রাঞ্জল বন্দ্যোপাধ্যায় খেলা শেষের বাঁশি বাজাতেই লাল-হলুদ সদস্য গ্যালারি থেকে একজন ষাটোর্ধ্ব সদস্য আশঙ্কিত গলায় ইস্টবেঙ্গল কোচকে বলে বসলেন, ‘‘অ বিশু, ওই কোরিয়ানটারে মাথা গরম না করতে কও। অরা (পড়তে হবে মোহনবাগান) কিন্তু এই ফাঁদই আমাগো কোরিয়ানটার লইগ্যা পাইত্তা রাখব।’’

দাঁতের ডাক্তারের কাছে রুট-ক্যানাল করাতে যাওয়ার আগে বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যও স্বীকার করে গেলেন, ‘‘আরে, ডং যে এ রকম মাথা গরম ছেলে আগে জানতাম না। আসলে বয়সটা কম তো। কিন্তু ওকে সতর্ক করে দিতে হবে।’’

আর ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে প্রথম ম্যাচ খেলে উঠে স্বয়ং ডং কী বলছেন? বিদেশি মিডিওর রিসিভিং ভাল। গতিও বেশ। ঠিক সময় পাস বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মাথাটা ঠান্ডা রাখতে পারলে (আবির্ভাবেই হলুদ কার্ড দেখলেন) লাল-হলুদের সম্পদ হতে পারেন। তাঁর ফ্রিকিকের উপরই খাবরার ব্যাকহেডে ইস্টবেঙ্গলের একমাত্র গোল এবং প্রথম ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট প্রাপ্তি এ দিন। লাল-হলুদের সেই একুশ নম্বর জার্সিধারী কোরিয়ান মাথা গরমের প্রসঙ্গ উঠতেই সেটাকে সযত্নে এড়িয়ে গড়গড় করে বলে চললেন, ‘‘প্রথম ম্যাচে গোল করতে চেয়েছিলাম। হল না।’’ তার পর রসিকতা, ‘‘সমর্থকরা আমার নামে জয়ধ্বনি করছে। কিন্তু নানা রকম নামে। আজ রাতেই দেশে বাবা-মাকে ফোন করে জানব আমার আসল নামটা!’’

ইস্টবেঙ্গল কোচ বিশ্বজিৎ চব্বিশ ঘণ্টা আগেই বলেছিলেন বাঙালি কোচদের দক্ষতা বোঝাতে এটা তাঁর আর বিপক্ষ টালিগঞ্জ কোচ রঞ্জন চৌধুরীরও পরীক্ষা। এ দিন সেই পরীক্ষায় ময়দানের বিশু প্রতিদ্বন্দ্বীকে টেক্কা দিয়ে গেলেন নিজের শান দেওয়া মগজাস্ত্র দিয়ে। প্রথমার্ধ গোলশূন্য। ডং-জিতেন-প্রহ্লাদদের তখন টালিগঞ্জ রক্ষণে দাঁত ফোঁটাতে দিচ্ছেন না ফুলচাঁদ, সুবোধরা। পরের পঁয়তাল্লিশ মিনিটে বিশ্বজিৎ ম্যাচটা বার করলেন স্রেফ দু’টো পরিবর্তন করে। এক) এতক্ষণ নিষ্প্রভ জিতেনের জায়গায় কেভিনকে নামিয়ে। লাল-হলুদ মাঝমাঠ খেলাটা ধরতে শুরু করল। দুই) প্রহ্লাদের জায়গায় র‌্যান্টিকে নামিয়ে বাঁ পায়ের ডংকে ঠেলে দিলেন রাইট উইংয়ে।

লাল-হলুদ কোচের ব্যাখ্যা, ‘‘রবেনের কথা একবার মনে করুন। বাঁ পায়ের দ্রুত গতির ডংকে রাইট উইংয়ে এনেছিলাম ঝড় তুলতে।’’আর ঠিক এতেই চাপ বাড়ল ম্যাচ ফিট না থাকা উগা ওপারার রক্ষণে। ডংয়ের ফ্রিকিকের সময় টালিগঞ্জের দুই ডিফেন্ডারই র‌্যান্টির গায়ে লেগে থাকায় খাবরা ফাঁকা হয়ে যান।

টালিগঞ্জ কোচ রঞ্জন দুষছেন নিজের ভাগ্যকে। ‘‘ইমরানটা চোট পেয়ে গেল। আমার আর এক বিদেশি কোকোও নেই। গোলটা খেলাম সেট পিসে। আদিলেজা শুরুতেই গোলটা পেয়ে গেলে...।’’ তবে মুর অ্যাভেনিউয়ের ক্লাবটি বড় দলের বিরুদ্ধে চিরাচরিত রক্ষণের খোলসে থাকেনি। যা প্রশংসার। প্রশংসা কুড়োলেন লাল-হলুদের রাইট ব্যাক সামাদও। চতুর্থ ডিভিশন থেকে সটান বড় ক্লাবের জার্সি গায়ে নেমেই ঝলসানোর জন্য।

আর উগা? ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে তাঁর নামে স্লোগান উঠল এ দিনও। ম্যাচের পর লাল-হলুদ ড্রেসিংরুমে গিয়ে হাতও মিলিয়ে এলেন পুরনো সতীর্থদের সঙ্গে। কিন্তু বদলা নেওয়াই যে হল না!

ইস্টবেঙ্গল: লুইস, সামাদ, দীপক, অর্ণব, রবার্ট, তুলুঙ্গা, মেহতাব, খাবরা, প্রহ্লাদ (র‌্যান্টি), জিতেন (লোবো), ডং।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন