মর্গ্যান। টানা জিতেও অস্বস্তিতে। মঙ্গলবার। -উৎপল সরকার
জয় করে তবু ভয় কেন তোর যায় না!
রবীন্দ্রসঙ্গীতের এই লাইনটা মুম্বই এফসি ম্যাচের আগে হতে পারে ইস্টবেঙ্গল শিবিরের রিংটোন।
টানা চার ম্যাচ জিতে তাঁর টিম এখন আই লিগ শীর্ষে। যার মধ্যে রয়েছে সুনীল ছেত্রীদের বেঙ্গালুরু এফসি বধ, প়ঞ্জাব থেকে পাঁচ গোলে জিতে ফেরার উপাখ্যান। গোলের মধ্যে তাঁর দুই বিদেশি ফরোয়ার্ড ওয়েডসন এবং উইলিস প্লাজা। আর বারাসতে ম্যাচ পড়লে তো ডিফেন্স থেকে উড়ে এসে গোলদাতাদের তালিকায় জুড়ে বসছেন বিদেশি স্টপার বুকেনিয়া-ও!
লাল-হলুদ কোচ ট্রেভর জেমস মর্গ্যান তা সত্ত্বেও মুম্বই ম্যাচের আগের সকালে অতিরিক্ত সংযত। সাংবাদিক সম্মেলনে মেহতাবদের ব্রিটিশ কোচ এসেছিলেন উইলিস প্লাজাকে নিয়ে। আই লিগের ডব্লিউপি নাইনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, সুযোগ তৈরি করলেও তাঁর গোলের সংখ্যা বাড়ছে না কেন? প্লাজা কিছু বলার আগেই ফোঁস করে ওঠেন মর্গ্যান। ‘‘এত নেগেটিভ প্রশ্ন করছেন কেন?’’ পরের প্রশ্নগুলোর সামনেও যেন এক অচেনা মর্গ্যান। নিজের টিমের শক্তি বা বিপক্ষের দুর্বলতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বললেন, ‘‘নো কমেন্টস।’’ একই উত্তর আসে তাঁর টিমের রোমিও বা জ্যাকিচন্দ সম্পর্কিত প্রশ্নেও।
পাঁচ ম্যাচের পর ইস্টবেঙ্গলের পয়েন্ট ১৩। বিপক্ষ মুম্বই এফসি সমসংখ্যক ম্যাচের পর ৬ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলে ষষ্ঠ। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল জানে, আই লিগে মুম্বই মানেই লাল-হলুদের কাছে পাহাড় টপকানোর চ্যালেঞ্জ। গত বছর বারাসত এবং কুপারেজ দু’জায়গা থেকেই এক পয়েন্ট নিয়ে ফিরতে হয়েছিল বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের দলকে। তার আগের দু’বছরও একই দশা।
মুম্বইয়ের দলটির কোচ সন্তোষ কাশ্যপ আবার ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে বসেই হুঙ্কার ছেড়েছেন, ‘‘টানা তিন ম্যাচ হারলেও বারাসতে বুধবার অন্য ম্যাচ। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ডেনসিল থিওবাল্ড আমাদের একমাত্র বিদেশি। তা-ও খেলা একতরফা হবে না।’’ বিপক্ষ কোচের এ রকম ‘ম্যায় খিলাড়ি তু আনাড়ি’ মার্কা মনোভাবে কি লাল-হলুদ কোচ ক্রুদ্ধ? প্রশ্ন করলে অবশ্য হাসছেন মর্গ্যান। বললেন ‘‘পাস্ট ইজ পাস্ট। কাল তিন পয়েন্টের জন্য সেরা ম্যাচ খেলব।’’
তা হলে কেন এই উত্তেজনা?
সূত্রের খবর, টিমের চতুর্থ বিদেশি কিরঘিজ আমিরভকে নিয়ে নাকি তিন ম্যাচেই মোহভঙ্গ হয়েছে লাল-হলুদ কোচের। তাই তাঁকে ছেড়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে বদলি আনার কথাবার্তা চলছে ক্লাবে। যা স্বীকার করে ক্লাবের ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘ভাসা ভাসা শুনেছি। মুম্বই ম্যাচের পরে কথা বলব কোচের সঙ্গে।’’ আরও খবর, সামাদ, প্রহ্লাদ-সহ পাঁচ ফুটবলারকে নাকি ছেড়ে দিচ্ছে ক্লাব।
কেন্দ্রীয় বাজেট ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে সরে এ বার হঠাৎ মাসের প্রথম দিবসে। তেমনই চমক এ দিনের লাল-হলুদ অনুশীলনে। ইস্টবেঙ্গল-মহমেডান দ্বৈরথ এক সময় ছিল ময়দানের ‘নিউজমেকার’। মঙ্গলবার আই লিগ ম্যাচের প্রস্তুতি সেই মহমেডান মাঠে সারল ইস্টবেঙ্গল। সোমবার বেশি রাতে শহরে ফেরায় এ দিন প্রথম দলের অনেকেই প্র্যাকটিস করেননি। বুকেনিয়া যেমন ক্লাব তাঁবুতে জিম করে মাঠ ছাড়েন। হাল্কা অনুশীলন করেন রবিন, রাহুলরা। সূত্রের খবর, প্রথম দলে কোনও পরিবর্তন আনছেন না মর্গ্যান। তবে চোট সারিয়ে ফেরা অর্ণবকে রাখছেন আঠারো জনে।
এ দিন মহমেডান মাঠে যখন দলবল নিয়ে ঢুকছেন মর্গ্যান, মাঠে প্র্যাকটিস করাচ্ছিলেন তাঁর একদা সহকারী বর্তমানে সাদা-কালো কোচ রঞ্জন চৌধুরী। দু’জনের সৌজন্য বিনিময় চলাকালীন মর্গ্যানের এক প্রাক্তন ছাত্র বলে বসলেন, ‘‘ছ’বছর আগে মুম্বইকে ৪-১ উড়িয়েছিলাম। আমার একটা গোল ছিল। ট্রেভরের জোশ আলাদা। মুম্বইকে ভয় পাওয়ার কী আছে?’’
তিনি ভাসুম। ভারতে প্রথম আসার পর মর্গ্যানকে প্রথম ট্রফিটা তুলে দেওয়ার ম্যাচের গোলদাতা। তিনি হয়তো জানেন না, তাঁর প্রাক্তন কোচের সেই বিখ্যাত জোশ দ্বিতীয় ইনিংসে একটু নড়বড়ে।
এই মর্গ্যান বেশ বিব্রত। জেতার পরেও সাহসী হতে পারছেন না।
বুধবার
আই লিগ— ইস্টবেঙ্গল: মুম্বই এফসি (বারাসত, ৭-০৫)
মিনার্ভা প়ঞ্জাব: চার্চিল ব্রাদার্স (লুধিয়ানা, ৪-৩৫)
আইজল এফসি: শিবাজিয়ান্স (আইজল, ২-০৫)।