আজ জিতলে সাতে সাত ইস্টবেঙ্গল

ইতিহাসের সামনে ডংরা নিরুত্তাপ

রাত পোহালেই রেকর্ড হেপ্টা লিগ জয়ের হাতছানি! কল্যাণীতে মহমেডানের বিরুদ্ধে জিতলেই ফের কলকাতা লিগ ঢুকবে লাল-হলুদ তাঁবুতে। কিন্তু সেই সদস্য-সমর্থকরা গেলেন কোথায়? যাঁদের আগুনে মেজাজ আর উচ্ছ্বাসে ম্যাচের আগের দিনই তেতে যেতেন ফুটবলাররা।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪১
Share:

লিগ যখন প্রায় হাতের মুঠোয়। ইস্টবেঙ্গল প্র্যাকটিসে ডং। বুধবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

রাত পোহালেই রেকর্ড হেপ্টা লিগ জয়ের হাতছানি! কল্যাণীতে মহমেডানের বিরুদ্ধে জিতলেই ফের কলকাতা লিগ ঢুকবে লাল-হলুদ তাঁবুতে। কিন্তু সেই সদস্য-সমর্থকরা গেলেন কোথায়? যাঁদের আগুনে মেজাজ আর উচ্ছ্বাসে ম্যাচের আগের দিনই তেতে যেতেন ফুটবলাররা।

Advertisement

বুধবারের সকাল দশটা। হাওড়া স্টেডিয়ামে মেহতাবদের অনুশীলন করিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরছিলেন ইস্টবেঙ্গলের স্টপগ্যাপ কোচ রিচার্ড ড্রাইডেন। দু’তিন জন ক্লাব কর্মী ছাড়া ত্রিসীমানায় নেই কোনও ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। গত কয়েক বছরে লিগ জয়ের আগের সকালের সঙ্গে যা একেবারেই বেমানান লাগছিল।

ড্রেসিংরুমের উল্টো দিকে তখন প্র্যাকটিস সেরে চিত্রগ্রাহকদের মনমতো দু’হাত তুলে পোজ দিচ্ছিলেন লাল-হলুদের হার্টথ্রব ডু ডং। গত মরসুমে যাঁর পা দিয়ে গোলের বন্যা বয়ে গিয়েছিল এ বার ইস্টবেঙ্গলের কোরিয়ান মহাতারকার সেই ফর্ম নেই। তবুও। ছবি ওঠার ফাঁকে নিজেই বলে ফেললেন, ‘‘কাল গোল করে টিমকে জেতাতে পারলে অনেক খেদ মিটে যাবে।’’

Advertisement

ইস্টবেঙ্গলের এক ম্যাচের সাহেব কোচ দেশে ফিরবেন বৃহস্পতিবার রাতেই। এত দিন তিনি ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের ছায়ার আড়ালে ছিলেন। মোহনবাগান ডার্বি না খেলায় বৃহস্পতিবার মাত্র একটা ম্যাচ জিতলেই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরতে পারবেন। ইস্টবেঙ্গলের হেপ্টা লিগ জয়ের মতোই যা সমান আকর্ষক। কখনও হয়েছে বলে মনে হয় না। কলকাতা ছাড়ার আগের সকালে ইস্টবেঙ্গল কোচও তাই উত্তেজনার বশে বলে ফেললেন, ‘‘আগের ডার্বিটা খেলা হয়নি। শেষ পর্যন্ত একটা ডার্বি পাচ্ছি দেশে ফেরার আগে। মহমেডান ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট দরকার। তা হলেই লিগটা ইস্টবেঙ্গলকে দিয়ে দেশে ফিরতে পারব।’’

সন্ধে সাড়ে সাতটা। দমদম পার্কের বাড়িতে বসে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ডার্বি সংক্রান্ত আইএফএ-র সিদ্ধান্ত তিনি শুনেছেন কিছু আগেই। ইস্টবেঙ্গলের সেই ঘরের ছেলে সমরেশ চৌধুরী রসিকতা করে বলে ওঠেন, ‘‘পঁচাত্তরে হেক্সা লিগ জয়ের সময়ও আইন-আদালত হয়েছিল। এ বারও মোহনবাগান ডার্বি না খেলার জন্য কী হবে তা আইএফএ জানাবে আগামী সপ্তাহে। মনে হচ্ছে, ইস্টবেঙ্গল বৃহস্পতিবার জিতে সবাইকে তার আগেই উত্তর দিয়ে দেবে। আর পুজোর আগে টানা সপ্তম বার লিগটাও ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে নিয়ে আসবে অর্ণব-মেহতাবরা।’’ সত্তর দশকে ইস্টবেঙ্গলের টানা ছ’বার হেক্সা লিগ জয়ের প্রতিটা টিমেরই সদস্য ছিলেন সমরেশ। উত্তেজনায় বলেই ফেললেন, ‘‘আমাদের ইস্টবেঙ্গলের গড়া রেকর্ড ভাঙতে চলেছে আমাদের ছেলেরাই। মহমেডানকে হারালেই রেকর্ডটা ইস্টবেঙ্গলেই থাকবে।’’

গত বছর লিগে এই ম্যাচটাই লড়ে হেরেছিলেন মহমেডান কোচ মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বারও সাদা-কালো জার্সিধারীদের হট সিটে পাইকপাড়ার এই মৃদুভাষী কোচ। আট ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে কলকাতা লিগে এই মুহূর্তে তৃতীয় ডোডোজ-মনবীরদের টিম। পরপর দু’টো বড় ম্যাচ জিততে পারলে কলকাতা লিগের সাপ-লুডোয় মৃদুলের টিমও চ্যাম্পিয়নের দাবিদার হয়ে উঠতে পারে। তা হলে কল্যাণীতে মৃদুল কাঁটা কি বিঁধতে পারে রেকর্ড গড়তে চলা ইস্টবেঙ্গলের গলায়?

শুনেই হাঁ হাঁ করে থামতে বলেন মহমেডান কোচ। ‘‘ইস্টবেঙ্গল দারুণ টিম। ছেলেদের বলে দিয়েছি বড় ম্যাচ জিততে পারলে তোদের নিয়ে আগামী দিনে টানাটানি হবে। কাজেই নিজেদের জন্যই নিংড়ে দে সবটুকু।’’ লিগে ইস্টবেঙ্গলকে মহমেডান হারিয়েছিল সেই দু’বছর আগে। এ বারও কি ডোডোজ-মনবীররা লাল-হলুদ সমর্থকদের উৎসব পণ্ড করে দিতে পারেন? মহমেডান কোচ বললেন, ‘‘কাল খেলা শেষেই দেখতে পাবেন সব।’’

সিঁথির বাড়ি থেকে সমরেশদের সেই হেক্সার রেকর্ড গড়া ইস্টবেঙ্গলের আর এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য গৌতম সরকার অবশ্য অত রেখেঢেকে কথা বলতে নারাজ। বলে দেন, ‘‘ছিয়াত্তরে সাত বারের রেকর্ডটা করতে পারিনি বলে আজও দুঃখ তাড়া করে। কাল সেই দুঃখ মিটে যাবে আশা করছি। যে টিম এক ১-৩ পিছিয়ে ৪-৩ জিতে ফেরে তাঁদের সামনে মহমেডান পারবে না। এই টিমের স্পিরিটটাই আলাদা।’’

এ দিন সকালে ইস্টবেঙ্গল কোচ যদিও মেহতাব-অর্ণবদের ম্যাচ সিচুয়েশন ছাড়াও গোলের সামনে ফ্রিকিক প্র্যাকটিস করালেন দীর্ঘক্ষণ। স্বমেজাজেই যা প্র্যাকটিস করছিলেন ডু ডং। ইস্টবেঙ্গল কোচ বাড়ি ফেরার আগে সতর্ক গলায় বলেও গেলেন, ‘‘মহমেডানকে টিভিতে দেখেছি। ওদের দুই ফরোয়ার্ড বেশ ছন্দে। ওদের জন্যই লিগে উপরের দিকে মহমেডান। বেশ টাফ ম্যাচ।’’

ড্রাইডেনের মতোই নিজেদের উপর চাপ বসতে দিতে নারাজ লাল-হলুদ রক্ষণের সিনিয়র ফুটবলার অর্ণব মণ্ডল। বলছেন, ‘‘আগে জিততে দিন। তার পর তো ইতিহাস।’’ সঙ্গে এটাও বলে দেন, ‘‘দু’বছর আগে পাঁচ পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে লিগ জিতেছিলাম। এ বারও কিন্তু লড়াইটা সহজ নয়।’’

তা হলে কী দাঁড়াল? প্রাক্তনরা রেকর্ডের প্রহর গুনছেন। লাল-হলুদ কোচ-ফুটবলার কষছেন হেপ্টা জয়ের স্ট্র্যাটেজি। বিপক্ষ তাতে চোনা ফেলতে পুরোদমে নিজেদের শাণিয়ে রাখছে। কিন্তু এই মাহেন্দ্রক্ষণে লাল-হলুদের সেই ট্রেডমার্ক দর্শকরা কোথায়?

কল্যাণী পুরসভার চেয়ারম্যান নীলিমেশ রায়চৌধুরী রাতে বললেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। কাল মাঠ ভরে যাবে।’’

লক্ষ্মীবারের সন্ধেতেই আইএফএ-র সিদ্ধান্তের আগেই কি কলকাতা লিগের রং তা হলে লাল-হলুদ হয়ে যেতে পারে? কল্যাণীর আবহ যে সে রকমই ইঙ্গিত দিচ্ছে!

বৃহস্পতিবার কলকাতা লিগ

ইস্টবেঙ্গল-মহমেডান (কল্যাণী, ২-৩০)

মোহনবাগান-টালিগঞ্জ অগ্রগামী (মোহনবাগান, ৫-৩০)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন