পিছিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গল কিন্তু ভয়ঙ্কর

ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ডার্বির ফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী কখনওই করা যায় না। এই ম্যাচটা একেবারেই আলাদা। কাগজ-কলমে এগিয়ে থাকা দলের মাঠে নেমে মুখ থুবড়ে পড়ার অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে। আমি নিজেও বহু অভিজ্ঞতার সাক্ষী।

Advertisement

দীপেন্দু বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:৫০
Share:

প্রস্তুতি: শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে অনুশীলনে মগ্ন রবিন সিংহ, বুকেনিয়া-রা। নিজস্ব চিত্র

ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ডার্বির ফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী কখনওই করা যায় না। এই ম্যাচটা একেবারেই আলাদা। কাগজ-কলমে এগিয়ে থাকা দলের মাঠে নেমে মুখ থুবড়ে পড়ার অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে। আমি নিজেও বহু অভিজ্ঞতার সাক্ষী।

Advertisement

১৯৯৭ সালের ফেডারেশন কাপ সেমিফাইনাল। আমি তখন মোহনবাগানে। প্রয়াত কোচ অমল দত্তর ডায়মন্ড সিস্টেমে আমরা অপ্রতিরোধ্য। ম্যাচের এক সপ্তাহ আগে থেকেই বলা শুরু হয়ে গিয়েছিল— ইস্টবেঙ্গল আমাদের সামনে দাঁড়াতেই পারবে না। তার পরের ঘটনা তো ইতিহাস। ১-৪ বিধ্বস্ত হয়েছিলাম আমরা। আর এক বারের ঘটনা। আমি তখন ক্লাব বদল করে লাল-হলুদ শিবিরে। ডার্বির আগে আমাদের কেউ গুরুত্বই দিচ্ছিল না। কিন্তু খেলা শুরু হওয়ার পরেই ছবিটা বদলে গিয়েছিল। কার্লটন চ্যাপম্যান ও আমার গোলে জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল।

এই ডার্বির আগেও অনেকটা সে রকম আবহ। আই লিগে বেঙ্গালুরু এফসি ও এএফসি কাপে আবাহনীর বিরুদ্ধে সনি নর্দে-রা দারুণ খেলেছে। আর ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের দল শেষ দু’টো ম্যাচেই হেরেছে। তার ওপর ক্লাবের অন্দরমহলের উত্তপ্ত পরিস্থিতি। যে কারণে মর্গ্যানও প্রচণ্ড চাপে।

Advertisement

মোহনবাগান শিবিরের ছবিটা কিন্তু পুরোপুরি উল্টো। অন্দরমহলে কোনও অশান্তি নেই। দুরন্ত ফর্মে সনি-কাতসুমি ইউসা। তাই মোহনবাগানকেই এগিয়ে রাখছেন অনেক। কিন্তু আমি তাঁদের সঙ্গে এক মত নই। পিছিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গল কতটা ভয়ঙ্কর সেটা শুধু আমি একা নই, ফুটবলপ্রেমীরা সকলেই জানেন। রবিবার শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে যদি ইস্টবেঙ্গল জেতে আমি অবাক হব না।

তবে অস্বীকার করার জায়গা নেই মোহনবাগানের আক্রমণভাগ অনেক বেশি শক্তিশালী। সনি, কাতসুমির পাশাপাশি জেজে লালপেখলুয়া ও বলন্ত সিংহ-ও দারুণ ফর্মে আছে। আর কাতসুমি এই মুহূর্তে যে খেলাটা খেলছে তাতে সনি অনেক চাপমুক্ত থাকতে পারছে মাঠে।

ইস্টবেঙ্গলে কিন্তু ওয়েডসন আনসেলমে ও উইলিস প্লাজা ছাড়া গোল করার মতো ফুটবলার খুব বেশি নেই। তা-ও ওয়েডসন সদ্য চোট সারিয়ে মাঠে ফিরেছে।

সনি-দের জন্যই মোহনবাগান ম্যাচের শুরু থেকে অল-আউট ঝাঁপাতে পারে। ইস্টবেঙ্গল কিন্তু কাউন্টার অ্যাটাক এবং সেট-পিস থেকেই গোল করার চেষ্টা করবে বলে আমার ধারণা। মর্গ্যানের প্রধান স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে, কোনও মতেই গোল খাওয়া চলবে না। তার পর গোল করার জন্য ঝাঁপাও।

লাল-হলুদ কোচের প্রধান শক্তি মাঝমাঠ ও রক্ষণ। মেহতাব হোসেনের অভিজ্ঞতা ডার্বিতে অন্যতম ভরসা ইস্টবেঙ্গলের। ও জানে এই ধরনের ম্যাচে কী ভাবে খেলতে হয়। আক্রমণে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি রক্ষণে নেমে ডিফেন্ডারদের সাহায্য করে। দুই স্টপার— বড় চেহারার ইভান বুকেনিয়া ও গুরবিন্দর সিংহ খুব ভাল ফর্মে আছে। আগের ডার্বিতে ওরা সনি-কাতসুমি ও ড্যারেল ডাফি-কে কার্যত নড়তেই দেয়নি।

ডার্বিতে মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেনের উদ্বেগের কারণ হতে পারে রক্ষণ-ই। এদুয়ার্দো পেরেইরা ও আনাস এডাথোডিকা— দুই স্টপারই একটু শ্লথ। সমস্যা আরও বেড়েছে চোট পেয়ে শুভাশিস বসু ও প্রণয় হালদার ছিটকে যাওয়ায়। প্রণয় মিডফিল্ডার হলেও দুই স্টপারের সামনে খেলে। অনেকটা মেহতাবের ভূমিকা নেয়। আগের ডার্বিতে অসাধারণ সামলেছিল প্লাজা, ওয়েডসন-কে। প্রণয়ের জন্যই আনাস-রা অনেক চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পেরেছিল। লেফট ব্যাকে দারুণ খেলছিল শুভাশিসও। এ বার ওদের না থাকাটা নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা সবুজ-মেরুন শিবিরে। প্রণয়-শুভাশিসের বিকল্প খুঁজে বার করাটাই মোহনবাগান কোচের প্রধান চ্যালেঞ্জ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন