বৈচিত্র্য: ডার্বি ম্যাচে দুই গ্যালারিতে উচ্ছ্বাস আর হতাশার দুই চিত্র ধরা পড়ল। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
সবুজ মেরুন গ্যালারি কোমর দোলানোয় মত্ত। একে অন্যকে জড়িয়ে ধরছিলেন মোহনবাগানিরা। তখন আলোয় ঝলমল স্টেডিয়ামেও যেন অন্ধকার খুঁজছিলেন ওঁরা। কেউ গায়ের লাল-হলুদ জার্সি খুলে মুখ ঢেকে রেখেছিলেন। কারও মুখ দুহাত দিয়ে ঢাকা। কেউ আবার নিজের মাথার চুল খিমচে ধরেছিলেন। রবিবার, ছুটির দিন ম্যাচের পরে নানা ‘সেলিব্রেশন’-এর প্রস্তুতি মাঠে মারা যাওয়ায় এমনই নানা হতাশার ছবি দেখা গেল কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে। ধীরে ধীরে সেই হতাশা-ক্ষোভের রেশ ছড়াল শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি মানে মূলত ইস্টবেঙ্গল সমর্থক অধ্যুষিত দুই শহরের অলিগলিতেও।
যেমন স্টেডিয়াম থেকে বার হওয়ার সময়ে জলপাইগুড়ির বাবাই দে, শৌর্য বসুরা রেফারির সমালোচনা করছিলেন। কেন মেহতাব জখম হওয়া সত্ত্বেও বিপক্ষ দলের খেলায়োড়কে শাস্তি দেওয়া হল না তা নিযেই চুলচেরা আলোচনা শোনা গেল সেখানে। আবার একদলের ক্ষোভের তির গিয়েছে কোচের দিকে। নকশালবাড়ির সুদীপ বর্মন, দেবু সিংহরায়রা কোচ বদল করার কথা ভাবা হবে কি না তা নিয়েই উদ্বিগ্ন।
মালবাজার, রাজগঞ্জ থেকে মাঠে যাওয়া ইস্টবেঙ্গলের কয়েকজন সমর্থক তো নিজেদের দলের কয়েকজন খেলোয়াড়ের ‘জানপ্রাণ’ দিয়ে খেলেছেন কি না, সেটা নিয়ে ভেবে চলেছেন। সে সব তর্ক অবশ্য থামিয়ে দিতেও লোকজনের দেখা মিলেছে। তাঁরা রাউলিনের গোলের কথা সামনে রেখেছেন। তা নিয়ে চাপানউতরের ফাঁকে কাউকে চোখের জল মুছতে দেখা গিয়েছে।
হতাশা-ক্ষোভ থাকলেও ম্যাচ শেষ হওয়া পর্যন্ত মাঠের মধ্যে এক দলের সমর্থকেরা কিন্তু অন্য দলের দিকে একবারের জন্যও তেড়ে যাননি। কটূক্তিও হয়নি। খুচখাচ উত্তেজনা যে হয়নি তা নয়। তবে মাঠে সংখ্যায় ভারী ইস্টবেঙ্গলের সমর্তকদের একটা বড় অংশকে দেখা গিয়েছে তা সামাল দিতে। বেশ কয়েকজন বয়স্ক ইস্টবেঙ্গল সমর্থককে গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষাকৃত কমবয়সীদের উদ্দেশে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘মাঠে আমরা ওঁদের চেয়ে তিনগুণ বেশি লোক। কাজেই গোলমাল হলে কিন্তু কেলেঙ্কারি কাণ্ড হতে পারে। দোষটা আমাদের ওপরেই বেশি বর্তাবে।’’ প্রবীণদের বোঝানোয় যে কাজ হয়েছে তা অবশ্য শান্তিতে সকলে মাঠ ছাড়া থেকেই স্পষ্ট। শিলিগুড়ি নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে যে, ডার্বির আয়োজন করতে গিয়ে তারা বরাবরই ভাল নম্বরই পায়। মোহনবাগানের যে কয়েকজন সমর্থক ছিলেন, তাঁদের যেন ভয় না হয়। তাঁরা যেন না ভাবেন, শিলিগুড়ি ফুটবলের চেয়ে ইস্টবেঙ্গলকে বেশি ভালবাসে না।
কিন্তু, রাতে মাঠের বাইরে বেশ কয়েক জায়গায় গোলমাল হয়েছে। স্য়েডিয়ামের সামনে একটি গাড়ির কাচ ভাঙার খবর মিলেছে। গেটের লোহা বেঁকিয়ে ফেলার খবরও রয়েছে। বিধান মার্কেটের সামনে দু-দলের গণ্ডগোল ঠেকাতে পুলিশকে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যেতেও হয়েছে।
ছোটখাট গোলযোগ হলেও এখন ‘ডার্বির’ উন্মাদনায় কলকাতার সঙ্গেও যে পাল্লা দিতে পারে সেটা বুঝিয়ে দিল শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি।