খেতাবের দরজা খুলতে মরিয়া ইস্টবেঙ্গল

খালিদ জামিলের তাঁবুও তো এখন  বসন্তের অপেক্ষায় দিন গুনছে! সেখানে আই লিগের ডালে ‘পলাশ’ ফোটেনি হয়তো, কিন্তু সব কিছু ঠিকঠাক চললে সেটা  ফুটতেই পারে। লিগ টেবলের যা অবস্থা তাতে ইস্টবেঙ্গলের সামনে এখন তিন ম্যাচের ‘লাইফ লাইন’।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:৫৫
Share:

খোশমেজাজ: চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে অগ্নিপরীক্ষার আগে অনুশীলনে চনমনে আমনা-রা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

চড়া রোদেও ইস্টবেঙ্গল মাঠের গ্যালারি থেকে দেখা যায় আশেপাশের গাছে ফুটতে শুরু করেছে রক্ত পলাশ। বসন্তের আগমনীর গন্ধ গায়ে মেখে।

Advertisement

খালিদ জামিলের তাঁবুও তো এখন বসন্তের অপেক্ষায় দিন গুনছে! সেখানে আই লিগের ডালে ‘পলাশ’ ফোটেনি হয়তো, কিন্তু সব কিছু ঠিকঠাক চললে সেটা ফুটতেই পারে। লিগ টেবলের যা অবস্থা তাতে ইস্টবেঙ্গলের সামনে এখন তিন ম্যাচের ‘লাইফ লাইন’। বাইরের নানা অঙ্ক থাকলেও, সব ক’টি জিতলে চোদ্দ বছর পর লাল-হলুদের বারান্দায় পড়লেও পড়তে পারে খেতাবের রোদ্দুর।

কিন্তু ইস্টবেঙ্গল কি প্রথম লাইফ লাইনের উত্তর দেওয়ার জন্য তৈরি?

Advertisement

আজ শনিবার চেন্নাই সিটি এফ সি-র বিরুদ্ধে ম্যাচ ইস্টবেঙ্গলের। বলা যায়, জীবন-মৃত্যুর লড়াই। তার আগে শুক্রবার সারাদিন আল আমনা, ইউসা কাতসুমিদের মধ্যে ‘আগুন’ জ্বালানোর চেষ্টা করে গেলেন কর্তা থেকে কোচ—সবাই।

শনিবার আই লিগ

ইস্টবেঙ্গল বনাম চেন্নাই সিটি এফসি
(যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে খেলা শুরু দুপুর ২টোয়)।

সরাসরি সম্প্রচার স্টার স্পোর্টস টু চ্যানেলে।

সকালে ডুডু ওমাগবেমিদের সঙ্গে খালিদের দীর্ঘ সভা হল নিয়মমাফিক। কিন্তু তার আগে কোচকে বাইরে রেখে, ম্যানেজার মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য শীর্ষ কর্তাদের পাশে নিয়ে টিমকে তাতানোর পেপটক দিলেন। যার সারার্থ, ‘‘জাগো, তোমরা জাগো।’’ এবং কী আশ্চর্য, ‘তুকতাক কোচ’ খালিদের মুখেও যে মনোরঞ্জন-বাণী। ‘‘কী ফর্মেশনে টিম নামালাম বড় কথা নয়। সেটা তো খেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বদলাবে। কিন্তু যেটা দরকার তা হল ফুটবলারদের আগুনে মনোভাব। যা টিমকে জেতাবে,’’ বলছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ।

আপনি তো ছ’বছর খেলছেন ভারতে। আই লিগ দিয়েছেন মোহনবাগানকে। কখনও এ রকম পরিস্থিতিতে পড়েছেন? প্রশ্ন শুনে ইউসা কাতসুমি ঘাড় নাড়েন! জাপানি মিডিও-র মুখ থেকে বেরোয়, ‘‘চোদ্দো-পনেরো বছরের প্রত্যাশার চাপ। সেটা তো নিতেই হবে। এ রকম পরিস্থিতিতে সত্যিই কখনও পড়িনি।’’ চাপ থেকে বেরোনোর উপায়ও বলে দিচ্ছেন কাতসুমি। ‘‘জুনিয়রদের চাপ কমাতে ওদের বলেছি নব্বই মিনিটের কথা ভেবে খেলো না। দু’টো ভাগে ম্যাচ ভাগ কর। প্রথমে পয়তাল্লিশ মিনিটের কথা ভেবে খেলো। পরের পঁয়তাল্লিশ মিনিট আমরা সিনিয়ররা সামলে নেবো। আমাদের দায়িত্ব তো বেশি।’’ যা শুনলে বোঝা যায়, খেতাবের দরজা খুলতে একটা মরিয়া চেষ্টা শুরু হয়েছে ইস্টবেঙ্গলের অন্দরে। যাতে সামিল সবাই।

এ দিনের অনুশীলনে দেখা গেল কর্নার, ফ্রি কিকের সফল রণনীতি তৈরি করছেন খালিদ। তবে এক ঘণ্টার অনুশীলনে রক্ষণ সংগঠন নিয়েই বেশি সময় ব্যয় করলেন তিনি। এমনিতেই প্রায় প্রতি ম্যাচে বিশ্রী গোল খাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল। তার উপর বহু দিন পর গুরবিন্দর সিংহ ফিরছেন স্টপারে। এদুয়ার্দো ফেরিরার সঙ্গী হয়ে। যা বেশ আশঙ্কার। খালিদ তাই সতর্ক। চাপেও। তাঁর চোখ-মুখ যে আশঙ্কারই জানান দিক, খালিদ মুখে অবশ্য চাপের কথা স্বীকার করেননি। বলে দেন, ‘‘চাপ তো দু’দলের উপরই।’’ যা মানতে নারাজ চেন্নাই কোচ সুন্দররাজন। ‘‘আমাদের কোনও চাপ নেই। ইস্টবেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন হতে চায়। চাপ তো ওদেরই।’’ পাশাপাশি দক্ষিণী কোচের হুঙ্কার, ‘‘প্রথম ম্যাচে রেফারির দাক্ষিণ্যে জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। এ বার সেটা হবে না।’’

অবনমনের আওতায় থাকা চেন্নাই কোচের এই আত্মবিশ্বাসের কারণ টিমে নতুন দুই বিদেশির সংযুক্তি। যুগোস্লাভিয়ার স্ট্রাইকার আলেকজান্ডার রেকিচ আর দক্ষিণ কোরিয়ার মিডিও ডং হোয়েন আসার পরে কোনও ম্যাচ হারেনি চেন্নাই। পরপর পাঁচটি ম্যাচ অপরাজিত তারা। খালিদ স্বীকার করলেন, ‘‘ওদের নতুন বিদেশি আসার পর শক্তি অনেক বেড়েছে।’’

কিন্তু বিপক্ষের সব শক্তিই যে আজ নির্বিষ করতে হবে ইস্টবেঙ্গলকে। না হলে, বসন্তের উৎসবে যে এ বারও সামিল হতে পারবে না মশাল বাহিনী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন