স্বস্তির জয়েও অস্বস্তি রক্ষণ

মেক্সিকোর হয়ে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ জেতা ইস্টবেঙ্গলের স্ট্রাইকার এনরিকে এসকুয়েদা এবং ঘানার হয়ে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপজয়ী গোকুলমের স্টপার ড্যানিয়েল অ্যাডো।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:১৬
Share:

উচ্ছ্বাস: গোল করে কর্নার ফ্ল্যাগস্টিক নিয়ে রকস্টারের মতো উৎসব ইস্টবেঙ্গলের জবি জাস্টিনের। শনিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

এই ম্যাচের আকর্ষণ হতে পারতেন দুই বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার। মেক্সিকোর হয়ে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ জেতা ইস্টবেঙ্গলের স্ট্রাইকার এনরিকে এসকুয়েদা এবং ঘানার হয়ে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপজয়ী গোকুলমের স্টপার ড্যানিয়েল অ্যাডো।

Advertisement

শেষ পর্যন্ত এই দুই বিশ্বকাপজয়ীর মঞ্চে নায়ক হয়ে মাঠ ছাড়লেন ইস্টবেঙ্গলের মালয়ালি স্ট্রাইকার জবি জাস্টিন। তিরুঅনন্তপুরমের ছেলে গোল করালেন। করলেনও। গোল করার পরে জবি দৌড়ে চলে গিয়েছিলেন কর্নার ফ্ল্যাগের দিকে। সেই পতাকা-দণ্ড নিয়ে আলোকচিত্রীদের সামনে ‘রকস্টার’-দের মতো ছবিও তুললেন। গোকুলমকে ৩-১ হারিয়ে স্টেডিয়াম ছাড়ার সময় জবি বলে গেলেন, ‘‘জেতার জন্য আমরা মরিয়া ছিলাম। সেই বহুকাঙ্খিত জয় আসায় আরও ভাল লাগছে। তা ছাড়া, আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল, যুবভারতীতে গোল করা। সেটা আজ সার্থক হওয়ায় দারুণ লাগছে।’’ তাঁর প্রেরণা আইএম বিজয়নের কথাও উল্লেখ করতে ভোলেননি কেরলের এই ফুটবলার।

এ দিন জয়ের ফলে টানা হারের দুঃসময় কাটিয়ে আই লিগে ৬ নম্বরে উঠে এল ইস্টবেঙ্গল। ৬ ম্যাচে আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসের দলের পয়েন্ট ৯। সমসংখ্যক ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানের পয়েন্ট সমান হলেও, গোলপার্থক্যে মোহনবাগানের চেয়ে দু’ধাপ আগে রইল ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচ শেষে স্বস্তির সুর ইস্টবেঙ্গল কোচের গলাতেও। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে আলেসান্দ্রো বলে দেন, ‘‘দল ফের জয়ে ফেরায় আত্মবিশ্বাস বাড়বে।’’

Advertisement

আগামী রবিবার ডার্বির আগে ইস্টবেঙ্গলকে জয়ের সরণিতে ফেরাতে ফুটবলার, সমর্থক থেকে কর্তা সকলেই মরিয়া ছিলেন। ফুটবলারদের সঙ্গে বসেছিলেন কর্তারা। কোচ-সহ গোটা দলকে গোলাপ দিয়ে অনুশীলনে গাঁধীগিরি করেছিলেন সমর্থকরা। তবে এ দিন দলে বেশ কিছু বদল এনে আসল কাজটি করেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। গোলে উবেইদের জায়গায় রক্ষিত ডাগর। স্টপার জনি আকোস্তার জায়গায় সালামরঞ্জন সিংহ। মাঝমাঠে দুই রালতে—লালডানমাউইয়া ও লালরিনডিকাকে এনে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন আলেসান্দ্রো।

তার উপর গোকুলম এফসি কোচ বিনো জর্জ প্রথমার্ধে বেশি রক্ষণাত্মক হয়ে গিয়ে আরও সুবিধা করে দেন বিপক্ষকে। গোকুলমের দুই হোল্ডিং মিডফিল্ডার মুসা মুদ্দে ও গিয়েরমে ফেলিপে দে কাস্ত্রো তাঁদের রক্ষণে এতটা নেমে যাচ্ছিলেন যে প্রথম মিনিট থেকেই মাঝমাঠে ফাঁকা জায়গা পাচ্ছিলেন এনরিকেরা। এই সুযোগেই পনেরো মিনিটের মধ্যে জোড়া গোলে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। প্রথম গোলের সময় চুলোভার বিপক্ষ গোলের দিকে ভাসিয়ে দেওয়া বল ধরে ব্রেন্ডনকে বাড়িয়েছিলেন জবি। আর লাল-হলুদের দ্বিতীয় গোলের সময় লালরিনডিকা রালতের থেকে বল পেয়ে ঘাড়ের কাছে মুসাকে নিয়েই গোল করে আসেন জবি। দু’টো গোলের সময়ই অ্যাডোদের রক্ষণ নড়ে গিয়েছিল।

শুরুতেই দুই গোলে এগিয়ে যাওয়ায় দুই উইং ধরে ব্রেন্ডন ও লালরিনডিকা আক্রমণে ঝড় তুলতে শুরু করেন। এই সময় গোলের সংখ্যা বাড়িয়েও নিতে পারতেন জবিরা। তবে এ দিন নির্ভরতা দিয়েছে ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠ। বিপক্ষের পা থেকে বল কাড়ছিলেন কাশিম আইদারা। আর সেই বল নিয়ে সৃষ্টিশীল আক্রমণ তৈরি করছিলেন লালরিনডিকা।

প্রথমার্ধে চোট পাওয়ায় দ্বিতীয়ার্ধে এনরিকের জায়গায় বিদ্যাসাগরকে নামিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম পনেরো মিনিটে ফের গত তিন ম্যাচের কাঁপুনি হাজির হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল রক্ষণে। দুই প্রান্ত থেকে বল বোরখাদের রক্ষণে উড়ে এলেই সমস্যা হচ্ছিল। এই সময়েই ক্রিস্টিয়ান সাবাহের গোল। যার নেপথ্যে স্টপার বোরখা গোমেস পেরেস ও ইস্টবেঙ্গল গোলকিপারের কভারিং ও মার্কিংয়ের ভুল। তবে এর পরেই ম্যাচে ফেরে ইস্টবেঙ্গল। খেলা শেষ হওয়ার আট মিনিট আগে প্রতিআক্রমণ থেকে গোল করে ব্যবধান বাড়ান চুলোভা।

ইস্টবেঙ্গল কোচ বলছেন, ‘‘এ বার সময় পাব। ভাল ভাবে প্রস্তুতি নিতে পারব ডার্বি ম্যাচের জন্য।’’ আগামী কয়েক দিন কিন্তু রক্ষণ নিয়ে অনেকটাই খাটতে হবে আলেসান্দ্রোকে।

ইস্টবেঙ্গল: রক্ষিত ডাগর, লালরাম চুলোভা, সালামরঞ্জন সিংহ, বোরহা গোমেস পেরেস, মনোজ মহম্মদ, লালডানমাউইয়া রালতে (সুরাবুদ্দিন মল্লিক), লালরিনডিকা রালতে, কাশিম আইদারা, ব্রেন্ডন ভানলালরেমডিকা, জবি জাস্টিন (প্রকাশ সরকার), এনরিকে এসকুয়েদা (বিদ্যাসাগর সিংহ)।

গোকুলম এফসি: শিবিনরাজ কুন্নিয়িল, অভিষেক দাস, ফাব্রিসিয়ো এস্তেবান অর্তিজ়, ড্যানিয়েল অ্যাডো, দীপক কুমার, গিয়েরমে ফেলিপে দে কাস্ত্রো, মুসা মুদ্দে, রাজেশ এস (সলমন কে), অর্জুন জয়রাজ, বাওরিংদায়ো বোড়ো (সুহের ভিপি), ক্রিস্তিয়ান সাবাহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন