আই লিগ

স্পেনীয় গুরু মন জিতছেন পাস-জাদুতে

আই লিগে ইস্টবেঙ্গলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স দেখে ঠিক সে ভাবেই বলা যেতে পারে, নব্বই মিনিট পাসিং ফুটবল, দুরন্ত সব সেট পিস আর পরিস্থিতি বুঝে বিপক্ষ রক্ষণে দুর্দান্ত কিছু ঝটকা। এগুলোর যোগফলই আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস জমানার ইস্টবেঙ্গল।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩১
Share:

উৎসব: ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে ভক্তদের গোল উপহার দিয়ে জবি। নিজস্ব চিত্র

ইস্টবেঙ্গল ৫ • লাজং এফসি ০

Advertisement

একটা ভাল গল্প। সঙ্গে একটু বিয়োগান্তক ঘটনা। আর কিছুটা হাসি। বলিউডে ছবি জনপ্রিয় করতে এটাই নাকি সূত্র অমিতাভ বচ্চনের।

আই লিগে ইস্টবেঙ্গলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স দেখে ঠিক সে ভাবেই বলা যেতে পারে, নব্বই মিনিট পাসিং ফুটবল, দুরন্ত সব সেট পিস আর পরিস্থিতি বুঝে বিপক্ষ রক্ষণে দুর্দান্ত কিছু ঝটকা। এগুলোর যোগফলই আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস জমানার ইস্টবেঙ্গল। বৃহস্পতিবার যুবভারতীতে এই তিন অস্ত্র কাজে লাগিয়েই লাজং এফসি-কে পাঁচ গোলের মালা পরাল স্পেনীয় কোচের প্রশিক্ষণাধীন ইস্টবেঙ্গল।

Advertisement

আট মিনিটে লালরিনডিকা রালতের কর্নার থেকে হেডে গোল লালডানমাউইয়া রালতের। ইস্টবেঙ্গল কোচ যেন জানতেনই মিনার্ভা ও চার্চিল ব্রাদার্সকে হারিয়ে আসা লাজং গোল খেলেই প্রতি-আক্রমণে আসবে। মাঠে হলও ঠিক তাই। আর তখনই স্পেনীয় কোচের নির্দেশ মেনে বিপক্ষ রক্ষণে ঝটকা। নিজেদের মাঝমাঠ থেকে লম্বা বল বোরখা গোমেস পেরেস তুলে দিলেন লাজং রক্ষণে। সেই বল ডান পায়ে নামিয়েই সুযোগসন্ধানী ডানমাউইয়া দেখে নিয়েছিলেন বিপক্ষ গোলকিপার অনেকটা এগিয়ে এসেছেন। সঙ্গে সঙ্গে বাঁ পায়ের নিখুঁত লবে ২-০ করলেন।

আরও পড়ুন: নায়কের মুখে সেই দলগত সংহতির মন্ত্র

পরের মিনিটেই ফের বিপক্ষ মাঝমাঠ থেকে ডান দিকে এ বার লম্বা বল ভাসিয়ে দিলেন টোনি দোভালে। এনরিকের পা ঘুরে সেই বল জবি জাস্টিনের মাথায় আসতেই ৩-০। যার পরে প্রেমদিবসে দর্শকদের ‘লাভ সাইন’ দেখালেন লাল-হলুদ শিবিরের মালয়ালি গোলমেশিন। আর প্রথমার্ধের অন্তিম মুহূর্তে লালরিনডিকার ঠিকানা লেখা বল বুক দিয়ে নামিয়ে ডান পায়ের দর্শনীয় ভলিতে ৪-০ করলেন এনরিকে।

গুরু: দুরন্ত জয়ের পরে সাংবাদিক বৈঠকে আলেসান্দ্রো। নিজস্ব চিত্র

প্রিয় দলের এই সেট পিস, ঠিকানা লেখা পাস থেকে গোল দেখে তৃপ্ত ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরাও। বিরতিতে দেখা গেল যুবভারতীতে এক লাল-হলুদ দম্পতির হাতে পোস্টার। তাতে লেখা, ‘‘তোমরা যখন গোলাপ হাতে প্রিয়তমাকে লাভ ইউ বলো, আমরা তখন মাঠে চেঁচাই, ইস্টবেঙ্গল এগিয়ে চলো।’’

আরও পড়ুন: কাশ্মীরে কি ম্যাচ হবে, জানতে চাইল ইস্টবেঙ্গল

দুরন্ত এই ফুটবলের সৌজন্যেই ১৫ ম্যাচে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস ইস্টবেঙ্গলকে পৌঁছে দিলেন আই লিগের তিন নম্বরে। একই সঙ্গে সমর্থকদের হৃদয়ে উসকে দিলেন দেড় দশকের মধ্যে প্রথম আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনাও।

দ্বিতীয়ার্ধে এনরিকেকে তুলে খাইমে সান্তোস কোলাদোকে নামিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। সেই কোলাদোর পাস থেকেই দ্বিতীয়ার্ধে ৫-০ করা ডানমাউইয়ার। একই সঙ্গে হ্যাটট্রিকও। এ বারের আই লিগে প্রথম ভারতীয় হ্যাটট্রিককারী তিনিই।

বিপক্ষের এই অসহায় আত্মসমপর্ণের দিনে অসম্ভব রকম নিস্পৃহ আলেসান্দ্রো। রিয়াল মাদ্রিদের যুব দলে কোচিং করিয়ে আসা স্পেনীয় কোচ জানেন, পাঁচ গোলে জিতলেও আসল কাজ আই লিগটা তো এখনও হাতে ওঠেনি। তাই সাংবাদিক বৈঠকে শান্ত ইস্টবেঙ্গল কোচের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দলের খেলায় আমি খুশি। আক্রমণ থেকে রক্ষণ সব বিভাগেই ছেলেরা দুর্দান্ত খেলেছে। বলের দখলও বেশির ভাগ ছিল আমাদের পায়েই।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘পাঁচ গোলের পরেও আত্মতুষ্ট হয়ে ছন্দ নষ্ট না হওয়ায় আরও তৃপ্তি লাগছে।’’

এটা সেই আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসের ইস্টবেঙ্গল যাঁরা আই লিগের শুরুতে টানা তিন ম্যাচ হেরে প্রবল সমালোচনায় জেরবার হয়েছিল। সেই দলই এখন টাট্টু ঘোড়ার মতো ছুটছে আই লিগ হাতে তুলতে। কী ভাবে? হতোদ্যম না হয়ে, স্পেনীয় কোচ তাঁর পাসিং ফুটবলের দর্শনে আত্মস্থ করিয়েছেন ভারতীয় জবি জাস্টিন, লালডানমাউইয়া রালতেদের। খাইমে সান্তোস কোলাদো, এনরিকে এসকুয়েদাদের মতো বিদেশির সঙ্গে দেশীয় ফুটবলারদের এই মেলবন্ধনটাই তুরুপের তাস মেনেন্দেসের। আই লিগে তাই গুটিপোকা থেকে প্রজাপতি হয়ে উড়ছে ইস্টবেঙ্গল। নব্বই মিনিট পাসের ঝর্ণাধারা বইছে মাঠে। যে জনি আকোস্তা নিয়ে মোহভঙ্গ হয়েছিল কিছু সমর্থকের। সেই আকোস্তার পা থেকেই শুরু হচ্ছে ইস্টবেঙ্গল আক্রমণ। আর এ সব কিছুই তিনি সম্ভব করেছেন একাগ্র অনুশীলনের মাধ্যমে।

পাঁচ গোলে জিতেও তাই ইস্টবেঙ্গল কোচ আত্মতুষ্ট হন না। বলেন, ‘‘এখনও অনেক ম্যাচ বাকি। বিপক্ষের চেয়ে ভাল খেলতেই হবে। তা হলেই সাফল্য পেতে পারি আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন