একমাত্র লক্ষ্য ট্রফি, বলছেন রক্ষাকর্তা রবিন

এই কাহিনি উপেক্ষিত এক কিশোরের নায়ক হয়ে ওঠার। এই কাহিনি সাফল্যের শিখরে পৌঁছেও নির্মম ভাবে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার। তিনি— রবিন সিংহ।

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

কটক শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৭ ০৪:৩৫
Share:

একাগ্র: আই লিগের ব্যর্থতা কাটিয়ে ট্রফি দিতে মরিয়া রবিন। নিজস্ব চিত্র

এই কাহিনি উপেক্ষিত এক কিশোরের নায়ক হয়ে ওঠার।

Advertisement

এই কাহিনি সাফল্যের শিখরে পৌঁছেও নির্মম ভাবে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার।

তিনি— রবিন সিংহ। গোল করে দলকে জিতিয়ে হোটেলে ফিরে যিনি ইন্টারনেটে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার ইংরেজি অনুবাদ পড়েন। আবার আদর্শ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতো বিতর্কেও জড়ান।

Advertisement

দিল্লির অনূর্ধ্ব ১৪ ও ১৫ ক্রিকেট দলে রবিন ছিলেন ওপেনিং ব্যাটসম্যান ও বোলার। হঠাৎ এক দিন মনে হল ফুটবলার হবে। ভর্তি হলেন চণ্ডীগড় অ্যাকাডেমিতে। কিন্তু তিন বছরের মধ্যেই স্বপ্নভঙ্গ। অ্যাকাডেমির কোচদের মতে, ফুটবলার হিসেবে রবিনের কোনও ভবিষ্যৎ নেই। বছর তেরোর রবিন সে দিনই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েই অপমানের জবাব দেবেন।

বুধবার সকালে কটকের বাদামবাড়িতে ইস্টবেঙ্গলের টিম হোটেলে বসে তিনি বলছিলেন, ‘‘আমার রক্তে ফুটবল। দাদু ক্যাপ্টেন অজিত সিংহ হেলসিঙ্কি অলিম্পিক্সে ভারতীয় ফুটবল দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সেই কারণেই হয়তো ফুটবলের প্রতি আকর্ষণ বেশি ছিল। ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চণ্ডীগড় অ্যাকাডেমিতে যোগ দিয়েছিলাম। তিন বছর প্র্যাকটিস করার পর আমাকে বলা হল, ফুটবলার হওয়ার মতো প্রতিভা নাকি আমার নেই। জীবনের প্রথম চ্যালেঞ্জটা সে দিনই নিয়েছিলাম। চণ্ডীগড় থেকে সোজা চলে গিয়েছিলাম জামশেদপুরে টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমিতে (টিএফএ)।’’

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রায়ালের মাধ্যমে প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলারদের তুলে এনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় টিএফএ-তে। এভাবেই উঠে এসেছেন দীপেন্দু বিশ্বাস, রেনেডি সিংহ-সহ একঝাঁক জাতীয় দলের তারকা। রবিনের ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম হয়েছিল। লাল-হলুদ স্ট্রাইকারের কথায়, ‘‘টিএফএ-তে গিয়ে বলেছিলাম, আমাকে মাঠে নামার সুযোগটা অন্তত দিন। নিজেকে প্রমাণ করতে না পারি ফিরে যাব। মেনে নেব, চণ্ডীগড় অ্যাকাডেমির কোচদের ভাবনাই ঠিক।’’ তার পরে? রবিন বললেন, ‘‘তিন মাস আমাকে ওরা প্র্যাকটিসে দেখেছিল। তার পরে আমাকে নিয়েছিল। টিএফএ থেকেই ২০১০ সালে সই করেছিলাম ইস্টবেঙ্গলে।’’ মঙ্গলবার রাতে চেন্নাই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে ইস্টবেঙ্গলের ফেডারেশন কাপ জয়ের আশা বাঁচিয়ে রেখেছেন তিনি।

রবিন মনে করেন, বাবা-মা পাশে না থাকলে তাঁর ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যেত। বললেন, ‘‘নয়ডা থেকে টানা পাঁচ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে চণ্ডীগড় অ্যাকাডেমিতে আমাকে দেখতে আসতেন বাবা আর মা। টিএফএ-তে সুযোগ পাওয়ার পরে জামশেদপুরেও ওঁরা চলে আসতেন প্রত্যেক মাসে। এক বার টিএফএ-র হয়ে আন্দামানে টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়েছিলাম, আমার বাবা সেখানেও হাজির হয়ে গিয়েছিলেন। মাঠের মধ্যে আমার আদর্শ রোনাল্ডো। মাঠের বাইরে নায়ক বাবা।’’ মঙ্গলবারের পর থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-ও! বললেন, ‘‘আমি জানতাম না, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও আমার জন্মদিন একই দিনে। ম্যাচের পরে হোটেলে ফিরেই ইন্টারনেটে ওঁর কবিতার ইংরেজি অনুবাদ পড়েছি। তথ্যচিত্র দেখেছি। অসাধারণ অভিজ্ঞতা।’’

সি আর সেভেনের মতো আপনার জীবনযাপনও বিতর্কে ভরা? ‘‘পেশাদার ফুটবলার হিসেবে আমি মাঠে নামি নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য। মাঠের বাইরে কী করছি, সেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত। কে কী ভাবছে তা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। জবাব আমি গোল করেই দিতে পছন্দ করি,’’ বলছেন চেন্নাই বধের নায়ক। আই লিগেই তা প্রমাণ করেছেন রবিন। বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে দু’টো ম্যাচেই গোল করেছেন তিনি। আরও একটা আকর্ষণীয় তথ্য হচ্ছে, আঘাত পেলেই ট্যাটু করান রবিন!

বছর দু’য়েক আগে জাতীয় দলের হয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলার সময় হাঁটুতে চোট পেয়েছিলেন রবিন। অস্ত্রোপচারের পরে মাঠে ফিরলেও বেঙ্গালুরু এফসি তাঁক রাখেনি। ইস্টবেঙ্গলে প্রত্যাবর্তন ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে। রবিন বলছেন, ‘‘বেঙ্গালুরু এফসি টিম ম্যানেজমেন্টের নিশ্চয়ই মনে হয়েছে, রবিনকে আর প্রয়োজন নেই। পেশাদার ফুটবলার হিসেবে আক্ষেপ করা উচিত নয়।’’ আর দু’টো ম্যাচেই গোল? হাসতে হাসতে রবিন বললেন, ‘‘গোল করতে আমি ভালবাসি। কাকতালীয় ভাবে বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে দু’টো ম্যাচেই সেটা হয়ে গেল।’’ এ বার কী লক্ষ্য?

‘‘ফেডারেশন কাপ জিতে কলকাতায় ফেরা’’, হুঙ্কারের মতো শোনাল রবিনের গলা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন