প্র্যাকটিসের ফাঁকে র্যান্টির সঙ্গে মাঠ-বৈঠকে কোচ। সোমবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ
বাবা রঘু নন্দী টিডি। আর ছেলে রাজদীপ কোচ। মরসুমের দু’নম্বর ম্যাচে বাবা-ছেলের যুগলবন্দির মগজাস্ত্রের সামনে বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের ইস্টবেঙ্গল!
আসলে আজ মঙ্গলবার ইস্টবেঙ্গল বনাম এরিয়ান—দুই পড়শি টিমের লড়াইটা চৌম্বকে বিশ্বজিৎ বনাম রঘুর মগজাস্ত্রের।
লাল-হলুদে প্রথম হলেও বিশু বহু দিন কোচিং করছেন ময়দানে। আর রঘু হচ্ছেন সেই পোড়খাওয়া কোচ, অঘটন ঘটানোটাই যাঁর কাজ। বড় দলের নিশ্চিত জয়ে কত বার যে চোনা ফেলেছেন!
মেহেতাব হোসেনদের বিরুদ্ধে খেলতে নামার চব্বিশ ঘন্টা আগে রঘু রীতিমতো হুঙ্কার দিয়ে রাখলেন। এরিয়ানের টিডি বলে দিলেন, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে সহজে জয় পাবে না ইস্টবেঙ্গল। শেষ মিনিট পর্যন্ত আমার ছেলেরা জান লড়িয়ে দেবে।’’
রঘু যদি হন বুনো ওল, তা হলে বিশ্বজিতও বাঘা তেতুঁল। সোমবার বারাসতে সকালের প্র্যাকটিসের পর লাল-হলুদ কোচ বললেন, ‘‘রঘু ভাল কোচ। ওকে আমি সমীহ করি। তবে মাঠের লড়াইটা মাঠেই দেখা যাবে। আমি নিজের টিম নিয়ে আত্মবিশ্বাসী।’’
লিগে এখনও পর্যন্ত এরিয়ান দু’ম্যাচ খেলেছে। পয়েন্ট চার। তবে একটি ম্যাচে জয় এবং একটিতে ড্র করলেও লড়াকু মানসিকতার ছাপ রেখেছেন রঘুর টিমের ফুটবলাররা।
এরিয়ান এ বার যে তিন জন বিদেশিকে সই করিয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই স্ট্রাইকার। আসলে, দশ ম্যাচের সংক্ষিপ্ত লিগে রঘু তাঁর প্রধান অস্ত্র করতে চেয়েছেন আক্রমণকেই। আজ ডু ডংদের বিরুদ্ধেও তাই রঘু দুই বিদেশি-- জুনিয়র স্ট্যানলি এবং কাজিমকে সামনে রেখেই টিম সাজাবেন। বিপক্ষের দুই ফরোয়ার্ডকে সামলাতে কি বেলো রজ্জাককে ব্যবহার করবেন আপনি? চিন্তিত মুখে বিশ্বজিৎ বললেন, ‘‘বেলোকে নামানোর কথা এখনও ভাবিনি। কারণ ও সে ভাবে টিমের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেনি। কতটা মানিয়ে নিতে পারবে, আমার সন্দেহ আছে। তাই দীপক আর অর্ণবের উপরই আমি কালও শুরুতে ভরসা রাখতে হবে আমাকে।’’
এ দিন প্র্যাকটিসের সময় অর্ণব মণ্ডলের পেশিতে টান ধরায় পুরো প্র্যাকটিস করতে পারেননি। আগেই উঠে যান তিনি। অর্ণব অবশ্য এরিয়ানের বিরুদ্ধে মাঠে নামার জন্য উদগ্রীব। তবে নিয়ম মেনে ম্যাচের দিন সকালে অর্ণবের চোটের খবর নেওয়ার পরই টিম নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন লাল-হলুদ কোচ। অর্ণব না খেলতে পারলে সে ক্ষেত্রে বেলোকে বাধ্য হয়ে নামাতেই হবে। কারণ গুরবিন্দরেরও চোট রয়েছে। রিহ্যাব করে মাঠে নামতে পঞ্জাব ডিফেন্ডারের আরও দু’সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানালেন বিশ্বজিৎ। সূত্রের খবর, বেলোকে খেলানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এরিয়ান টিডি সেটা ধরে নিয়েই দল সাজাচ্ছেন।
রঘু ঠিক করেছেন, ডু ডংয়ের পারফরম্যান্স দেখার পর তাঁর পিছনে যেমন মার্কার লাগাবেন। তেমনই সরাসরিই বলছেন, ‘‘ইস্টবঙ্গলের রক্ষণ এখনও জমাট বাঁধেনি।’’ আর সে জন্যই দুই নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকারকে দিয়ে কেল্লাফতে করতে চান তিনি।
র্যান্টি মার্টিন্সকে প্রথম ম্যাচের মতোই পরিবর্তে নামানোর ভাবনা রয়েছে লাল-হলুদ কোচের। র্যান্টি নিজেও বলছেন, তিনি পুরো ফিট নন। ‘‘গত মরসুমে যে চোট পেয়েছিলাম সেটা পুরো ঠিক হয়নি। তাই নব্বই মিনিট খেলার মতো আমি পুরো ফিট হইনি এখনও,’’ বারাসত স্টেডিয়ামের বাইরে গাড়িতে ওঠার আগে বলছিলেন নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার।
ইস্টবেঙ্গলের মাঠ বেশ শক্ত। এই মাঠে ফুটবলারদের চোট হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু বারাসতের কৃত্রিম ঘাসের মাঠে খেলার তুলনায় নিজেদের ঘাসের মাঠে খেলতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বলে মনে করছেন অর্ণব, র্যান্টিরা। বিশ্বজিতও বললেন, ‘‘প্রথম ম্যাচে যে ভাবে সমর্থকরা উৎসাহিত করেছেন, সেটা ফুটবলারদের জন্য দরকার। অন্য মাঠে এই আবেগ পাওয়া কঠিন।’’ আর লাল-হলুদ সমর্থকদের এই আবেগকে প্লাস পয়েন্ট মনে করছেন রঘু। তাঁর দাবি, ‘‘এরিয়ানে অনেক ছেলে রয়েছে, যাঁরা প্রথম প্রিমিয়ার ডিভিশন খেলছে। ভরা স্টেডিয়ামের মানসিক চাপ নেওয়াটা নতুনদের কাছে সহজ নয়।’’
দেখার, নিজের সমর্থকদের আবেগ আর বিপক্ষের অনভিজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে মেহতাব-ডংরা আজ রঘুর টিমকে বধ করতে পারেন কি না!
মঙ্গলবারে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ
ইস্টবেঙ্গল : এরিয়ান (ইস্টবেঙ্গল ৩-৩০)
বিএনআর : টালিগঞ্জ অগ্রগামী